মুমিনুলের টেকনিক ব্যবচ্ছেদ

মমিনুল হক সৌরভের ফর্ম হারানোর পেছনে টেকনিকের সমস্যা দেখছি না। বরং কনুই বরাবর শর্ট বলে আগে যে সমস্যা ছিলো, তার সমাধানে স্ট্যান্সকে তিনি কিছুটা ওপেন করেছেন। গত দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড সিরিজে মমিনুলের ব্যাটিং স্ট্যান্স এবং আগের ব্যাটিং স্ট্যান্স খেয়াল করলেই পার্থক্য দেখতে পাবেন। মমিনুলের ব্যাটিং টেকনিক বরং অন্য অধিকাংশ ব্যাটারের থেকেই অনেক বেশি কম্প্যাক্ট।

ব্যাটিং টাচ কিংবা টাইমিং ও ঠিক আছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ফ্লিক এবং কাভার ড্রাইভে যে ৪ দুটো মেরেছেন, দুটোই সাক্ষী দেয়, তিনি ভালো টাচে আছেন। ধারণা করেছিলাম, এই ইনিংস থেকেই তিনি রানে ফিরবেন। কিন্তু চমৎকার একটা বলে আউট হয়েছেন, ফর্মে আর ফেরা হয় নি। ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পথে সম্ভবত এই একটা উইকেটই ছিল, যার কৃতিত্ব বোলারের।

দ্বিতীয় ইনিংসে তিনিও উইকেট দান করেছেন। খেয়াল করলে দেখবেন, প্রথম ইনিংসে যেই বলটিতে মমিনুল কাভার ড্রাইভ করে ৪ মেরেছেন, সেই একই লাইন-লেন্থের বলে দ্বিতীয় ইনিংসে কিপারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন। চারটি ছবি যোগ করে দিচ্ছি। দুটো বলই তার শরীরের বাইরে। তাকে বল রীচ করার জন্য পা নিয়ে বলের কাছে যেতে হবে। দুই ডেলিভারির ক্ষেত্রেই তিনি সেটা করেছেন।

কিন্তু, প্রথম দুই ছবিতে দেখবেন, ড্রাইভ করার সময় ব্যাট শরীরের কাছ থেকে ফেস ওপেন করে বলটিকে কাভারের দিকে খেলেছেন। ফলে তার ব্যাট বলের কাছে পৌছানোর জন্য বেশি ডিসট্যান্স কাভার করার সুযোগ পাচ্ছে। আবার ব্যাট শরীরের কাছে থেকে নামার কারনে কন্ট্রোলও ঠিক থাকছে।

অপরদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হওয়া ডেলিভারিতে দেখুন (৩ এবং ৪ নাম্বার ছবি), তিনি ব্যাটের ফেস স্ট্রেইট রেখে বলকে মিড অফে ড্রাইভ করার চেষ্টা করেছেন। ব্যাট সোজা থাকার কারণে যথেষ্ট ডিস্ট্যান্স কাভার করার সুযোগ পায় নাই। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলের লাইনে ব্যাট স্ট্রেইট নামাতে গিয়ে, ব্যাট শরীর থেকে দূরে চলে গিয়েছে। ফলে, কন্ট্রোলও সঠিক নেই।

নিজেই শ্যাডো কাভার ড্রাইভ এবং স্ট্রেইট ড্রাইভ করে চেক করে দেখতে পারেন। এ অবস্থায়, বল ব্যাটের ব্লেডে লাগার পরিবর্তে এজে লাগার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। মমিনুলের ক্ষেত্রেও সেটিই ঘটেছে। অপ্রাসঙ্গিকভাবে জানিয়ে রাখি, বলটি যদি শরীরের ভিতরে থাকতো, তাহলে ফলাফল ঠিক এর উল্টো ঘটতো। স্ট্রেইট ড্রাইভে যেই কন্ট্রোল পাওয়া যেত, কাভার ড্রাইডে তা ঘটতো না।

অর্থাৎ তিনি ব্যাটিংয়ে পরিষ্কার প্ল্যান করতে পারছেন না। সাম্প্রতিক সময়ের মমিনুলের উইকেটগুলো খেয়াল করলে দেখবেন, তিনি সীদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। কোন বলটি কোন এরিয়াতে খেলবেন, সেই ডিসিশন নিতে পারছেন না। ফলে, তার আউটের ধরনগুলোও একই ধরনের। টেস্ট ক্রিকেটে পরিষ্কার প্ল্যান নিয়ে ব্যাটিং কিংবা বোলিং করতে না পারলে আপনাকে ভুগতে হবে। মমিনুলের ক্ষেত্রেই সেটিই ঘটছে।

এই সময়ে অধিনায়কত্ব একটা বোঝার মত। মমিনুল অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়ে সঠিক সীদ্ধান্ত নিয়েছেন। আশা করছি, এখন তিনি শুধুমাত্র তার ব্যাটিংয়েই মনোযোগী হতে পারবেন। পরিষ্কার মস্তিষ্ক এবং প্ল্যান নিয়ে মাঠে নামতে পারবেন। মমিনুলের ফর্মে ফেরা কেবলমাত্র তার জন্যই নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যও জরুরী। এমন টেস্ট মেজাজের ব্যাটসম্যান আমাদের কেউ নেই আর। রমরমা টি-টোয়েন্টির যুগে পরবর্তীতে কেউ টেস্ট ব্যাটসম্যান হতে চাইলেও তার সামনে একজন রোল মডেল থাকা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link