ভূবন ভোলানো ভূবনেশ্বর

উড়িষ্যা প্রদেশের দুই অঞ্চল ভূবনেশ্বর ও কটক। দু’টির মাঝে দূরত্ব খুব বেশি নয়। দুই অঞ্চলের মাঝে দূরত্ব প্রায় ২৭ কি.মি। শিরোনাম দেখে তাই মোটেও ভ্যাবাচেকা খাওয়ার প্রয়োজন নেই। ভূবনেশ্বর আর কাটাকের মাঝে দূরত্বটা ঠিক-ই আছে।

তবে, কাটাকে ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা দেখছে আরেক ভূবনেশ্বর জাদু। পেসার ভূবনেশ্বর কুমার জাদুকরী এক স্পেলের পরেও অবশ্য জয়ের দেখা পায়নি ভারত। তাই কাটাকে ভূবনেশ্বরের অসাধারণ স্পেলটা শেষ হয়েছে হতাশা দিয়ে।

ক্যারিয়ারের শুরুটা পেসার হিসেবে, এখনও তাই আছেন। তবে নিন্দুকদের ভাষায় ভূবনেশ্বর একজন ‘স্পিনার’। বলে গতি কম থাকায় অনেকেই ব্যঙ্গ করে স্পিনার ভূবনেশ্বর বলেও ডাকেন। তবে, গতি ছাড়াও স্যুইং, ইয়র্কার কিংবা স্লোয়ারে সফলতার শীর্ষ চূঁড়াটা ছোঁয়া যায় সেটি প্রমাণ করে আসছেন পেসার ভূবনেশ্বর কুমার।

২০১২ সালে ভারতের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক। এরপর ধীরে ধীরে জাতীয় দলে বহু পেসার উঠে এলেও নতুন বলে এখনও ভূবনেশ্বর সেরাদের একজন।

একটা সময় ছিল দারুণ ইয়র্কার করতে পারতেন ভূবি। ইনজুরি আর অধারাবাহিকতায় সেটি যেন এখন হারাতে বসেছেন। পাওয়ারপ্লের মত স্লগ ওভারেও ভুবি ছিলেন দুর্দান্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডেভিড মিলার যেভাবে ভূবির ইয়র্কার লেন্থের বলে ছক্কা হাঁকিয়েছেন – এমন দৃশ্য ভূবির বলে এর আগে দেখা গেছে কি-না সে নিয়ে খানিকটা সন্দিহান।

পেসার হিসেবে ভূবনেশ্বরের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলার জায়গা নেই বললেই চলে। শুধু যে উইকেটের দুই পাশে তিনি স্যুইং করাতে পারেন – ব্যাপারটা এমন নয়। পাওয়ারপ্লেতে নতুন বলে রান আটকে দিতেও সক্ষম তিনি। কুইন্টন ডি কক, টেম্বা বাভুমাদের বিপক্ষে নিজের সিম, স্যুইং, অ্যাঙ্গেল ঠিক রেখে নতুন বলে নজরকাঁড়া পারফরম্যান্স দেখান ভূবি।

ইয়র্কারে ধারাবাহিকতা ধরে না রাখতে পারায় ভূবির কার্যকারিতা খানিকটা ভাটা পড়েছে সেটাও সত্যি। এই সিরিজে আরেক প্রান্তে বল হাতে মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রিত বুমরাহদের কেউই নেই। পেস বিভাগের গুরুদায়িত্বটা তাই ভূবির কাঁধে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে স্লগ ওভারে হতশ্রী বোলিংয়ে দলকে জেতাতে পারেননি তিনি।

ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছিলেন আইপিএলে। সেখানে ডজনখানেক উইকেট নিজের ঝুলিতে নিয়েছেন। উইকেট সংখ্যা খুব বেশি না হলেও কিপটে বোলিংয়ে ছিলেন অন্যতম সেরা। পাওয়ারপ্লের পাশাপাশি স্লগ ওভারেও বেশ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান তিনি। এবার জাতীয় দলের জার্সিতেও আরও একবার প্রমাণ করলেন নতুন বলে তিনি এখনও দলের সেরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে দলের বাকিদের মতই সমালোচনার বাক্সে বন্দি হয়েছিলেন ভূবনেশ্বর। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও দলের বাকিদের অবস্থান একই জায়গায়। হতাশাজনক পারফরম্যান্সে দ্বিতীয় ম্যাচেও হেরে তীব্র সমালোচনার মুখে সবাই। ঠিক এ যাত্রায় ব্যাতিক্রম ভুবি। মাত্র ১৩ রানে শিকার করেছেন ৪ উইকেট। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এখন তিনি।

আইপিএল মাতানো যুজবেন্দ্র চাহাল, হার্শাল প্যাটেলদের পারফরম্যান্সটা বড্ড সাদামাটা। প্রথম ম্যাচে ডেভিড মিলারের সামনে ইয়র্কার লেন্থের বলটা জায়গা মত ফেলতে পারলেন না ভূবি। ফলস্বরূপ খেলেন ছক্কা। আসন্ন অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা মেলাতে হলে প্রসিদ কৃষ্ণা, উমরান মালিকদের সাথেও প্রতিযোগিতায় নামতে হবে ভূবিকে। স্লগ ওভারেও তাই দেখাতে হত নজরকাঁড়া কিছু।

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে স্লগ ওভারে মিলারের কাছে বেঁধরক পিটুনির পর দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন ভূবি। প্রথম স্পেলে তিন ওভারে নেন ৩ উইকেট। এরপর ১৮তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে শিকার করলেন আরও এক উইকেট। ম্যাচে ততক্ষণে ভারতের পরাজয় নিশ্চিত। কিন্তু, মিলার-পারনেলদের বিপক্ষে স্লগ ওভারে এবার নিজের সেরাটা দিতে পেরেছেন তিনি।

২০২১ আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর জয়ের জন্য শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২ রান। স্ট্রাইকে ছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। সেখান থেকে শেষ ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে জয় এনে দেন ভূবি। স্লগ ওভারেও তিনি এখনও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। সেই সামর্থ্য কিংবা দক্ষতা ভুবির আছে।

প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ভূবির পারফরম্যান্সটা গোবরে পদ্মফুল। দলের বাকি বোলারদের হতশ্রী বোলিংয়ে ভূবির অসাধারণ পারফরম্যান্সটা শেষ হয় হতাশা দিয়ে। খানিকটা ব্যাকফুটে গেলেও ভুবি যে এখনও স্লোয়ার কিংবা স্যুইং দিয়ে প্রতিপক্ষকে আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন সেটি তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন। স্লোয়ার, স্যুইং আর ইয়র্কারে প্রতিপক্ষকে মাত দেওয়া এই ‘স্পিনার’ ভূবিকেই হয়ত চাচ্ছে ভারত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link