নতুন মোড়কে পুরনো বাংলাদেশ

অর্ধশতক ছুঁয়ে ফেলার অনেক আগেই ব্ল্যাকউডকে ফিরিয়ে দিতে পারতেন মিরাজ। মিরাজের বলে পরাস্ত হওয়া বলটা আঘাত করেছিল ব্ল্যাকউডের প্যাডে। আম্পায়ার আউট না দিলেও পরে দেখা যায় বলটি লেগ স্ট্যাম্পে হিট করছিল। কিন্তু বাংলাদেশ এবারো রিভিউ নেয়নি। সাকিব, মিরাজরা তাই আরেকটি উইকেট বঞ্চিত হলেন।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের এই আক্ষেপ যেন মিটছেই না। কখন রিভিউ নেয়া প্রয়োজন আর কখন প্রয়োজন নেই সেটা যেন কোন ভাবেই ধরতে পারছেনা বাংলাদেশ। ফলে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বেশ খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। কিন্তু রিভিউ নিয়ে এই সংকটের দায়টা আসলে কার আর সমাধানের উপায়ই বা কী?

মুমিনুল হক টেস্ট অধিনায়ক থাকা অবস্থায় তাঁকে নিয়ে সমালোচনার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল এই রিভিউ। এই অধিনায়ক কখনোই ঠিক সময়ে রিভিউ নিতে পারতেন না। ফলে অনেক উইকেট বঞ্চিত হতো বাংলাদেশ। আবার ভুল সময়ে রিভিউ নেয়ার উদাহরণও ছিল অনেক। অধিনায়ক থাকা অবস্থায় মুমিনুলকে প্রায় সবসময়ই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো।

তবে এবার বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক হয়ে এসেছেন সাকিব আল হাসান। তবে সাকিবই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে করছেন একই ভুল। গতকাল প্রথম দিনেই বাংলাদেশ দুটি রিভিউ হারিয়ে ফেলেছিল। আজ আবার মিরাজের বলে ব্ল্যাকউডাউট হলেও রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। এর আগে খালেদের বলেও ঠিক করে আপিলই করেনি বাংলাদেশ।

ওদিকে রিভিউ নেয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা থাকে উইকেটরক্ষকের। সেদিক থেকে লিটন দাসকে নিয়েও সমালোচনা ছিল অনেক। বলা হতো উইকেটের পিছনে থেকেও সময়মতো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননা লিটন। বাংলাদেশের বর্তমান সহ-অধিনায়ককে অবশ্য এই ম্যাচে কিপিং করছেন না। দেশের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক সোহান আছেন উইকেটের পিছনে। তবে সোহানও করলেন একই ভুল। সময়মতো সাকিবকে সাহায্য করতে পারলেন না তিনিও।

ফলে অধিনায়ক, উইকেটরক্ষক দুটিই বদলের পরেও রিভিউ সমস্যার কোন সমাধানই করতে পারছেনা বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্টিগা টেস্টেও তাই এই রিভিউ নিয়ে ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আদৌ কী এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবে বাংলাদেশ দল?

ওদিকে রিভিউ এর পাশাপাশি ফিল্ডিং নিয়েও বাংলাদেশের ভোগান্তিটা কম নয়। টেস্ট ক্রিকেটে একটা ক্যাচ মিস করা মানে দলের বিশাল ক্ষতি। অথচ বাংলাদেশ ক্যাচ মিস করে হরহামেশাই। অ্যান্টিগা টেস্টেও মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্তরা ক্যাচ মিস করেছেন। ফলে এই রিভিউ ও ক্যাচ মিসের জন্য বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

এতকিছুর পরেও বাংলাদেশের বোলাররা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গতকাল বাংলাদেশের তিন পেসারই অসাধারণ বোলিং করেছেন। আজও মুস্তাফিজ, এবাদত, খালেদরা  ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছেন। এছাড়া পেসারদের সাথে আজ স্পিনাররাও হাত ঘুরিয়েছেন সমানতালে।

বিশেষ করে মিরাজের পরপর দুই উইকেটে ম্যাচে নিজেদের খানিকটা খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। যদিও প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের ভরাডুবির কারণে এখনো ম্যাচে অনেকটাই এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজরা। তবুও ক্যারিবীয়দের দ্রুত অল আউট করে এবার নিশ্চয়ই বড় সংগ্রহই করতে চাইবে বাংলাদেশ।

বিদেশের মাটিতে এবাদত, খালেদরা যে কার্যকর হতে পারেন সেটা আরেকবার প্রমাণিত হলো। দুজনই একটি করে উইকেট পেলেও ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের পুরোটা সময় চাপের মধ্যে রেখেছেন এই দুই পেসার। বিশেষ করে এবাদত ডিউক বল ও ক্যারিবীয় কন্ডিশনের পুরো ব্যবহারই করছেন।

 

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link