ম্যাচ ফিক্সিংয়ে বিপন্ন জীবন

‘ভদ্রলোকের খেলা’, একেবারে শুরু থেকেই হয়ত এই তকমা গায়ে লাগিয়েই পথ চলা ক্রিকেটের। ক্রমাগত এর সাথে যুক্ত হল খ্যাতি, অর্থ। ব্যস, জনপ্রিয়তা আর ঠেকায় কে! কিন্তু এই জনপ্রিয়তা আর অর্থের হাতছানি বহুবার এই খেলাটিকে করেছে কলঙ্কিত। ফিক্সিংয়ের কাল থাবা ক্রিকেটের গায়ে মাখিয়ে দিয়েছে কালিমা। খেলোয়াড়রা বিভিন্ন সময়ে এই ফিক্সিংয়ের ফাঁদে পা দিয়েছেন।

‘ভদ্রলোকের খেলা’, একেবারে শুরু থেকেই হয়ত এই তকমা গায়ে লাগিয়েই পথ চলা ক্রিকেটের। ক্রমাগত এর সাথে যুক্ত হল খ্যাতি, অর্থ। ব্যস, জনপ্রিয়তা আর ঠেকায় কে! কিন্তু এই জনপ্রিয়তা আর অর্থের হাতছানি বহুবার এই খেলাটিকে করেছে কলঙ্কিত। ফিক্সিংয়ের কাল থাবা ক্রিকেটের গায়ে মাখিয়ে দিয়েছে কালিমা। খেলোয়াড়রা বিভিন্ন সময়ে এই ফিক্সিংয়ের ফাঁদে পা দিয়েছেন।

দ্রুতই বিশাল অংকের অর্থ আয়ের লোভ সংবরণ করা সত্যি বলতেই বেশ কষ্ট। তবে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। এক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটে ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারের। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিক্সিং ইস্যুতে বেশ কঠোর। আর তাইতো বহু খেলোয়াড় সারাজীবনের জন্যে ক্রিকেট থেকে বিতারিত হয়েছেন। এমন খেলোয়াড়দের নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন।

  • মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন (ভারত)

ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়কদের তালিকা করা হলে সেখানে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের নাম থাকবে খানিকটা উপরের দিকেই। নব্বই দশকে ভারত দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আজহার। ভারতকে ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিলেন তিনি।

তবে, ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান সিরিজের মাঝে তিনি জড়িয়ে পড়েন ফিক্সিংয়ের সাথে। ফলশ্রুতিতে সারাজীবনের জন্যে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। যদিও ২০১২ সালে তাঁর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেওয়া হয়।

  • অজয় শর্মা (ভারত)

প্রতিভাবান ব্যাটার হিসেবে অজয় শর্মার একটা খ্যাতি ছিল ভারতের ক্রিকেটে। প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে প্রায় দশ হাজারের অধিক রান ছিল তাঁর। তবে, ২০০০ সালে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের সাথেই সারাজীবনের জন্যে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছিলেন অজয় শর্মা।

এমন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের অকাল প্রস্থান মেনে নেওয়ার নয়। তবে ফিক্সিংয়ের শাস্তি তাঁর ভোগ করতেই হত। তাঁর উপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় ২০১৪ সালে।

  • আতাউর রহমান (পাকিস্তান)

পেসার তৈরির কারখানা বলা হয় পাকিস্তানকে। সে কারখানার আরও একটি উৎপাদন ছিলেন আতাউর রহমান। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই প্রতিভার আলো ছড়িয়ে তাঁর অভিষেক হয়ে যায় পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে।

তবে, ২০০০ সালে আইসিসির ফিক্সিংয়ের ছাটাই জালে আটকা পড়েন আতাউর। এরপর তাকেও মুখোমুখি হতে হয় আজীবন নিষেধাজ্ঞার। পরে অবশ্য ২০০৭ সালেই তাঁর উপর আরোপিত সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

  • সেলিম মালিক (পাকিস্তান)

ক্রিকেটের ইতিহাসে ফিক্সিংয়ের দায়ে প্রথম জেল খাটা খেলোয়াড় সেলিম মালিক। দূর্দান্ত এই পাকিস্তানি ব্যাটার খুব সহজেই খেলতে পারতেন শেন ওয়ার্নের মত বিশ্বনন্দিত ব্যাটারের টার্ন। তবে সে টার্ন সামলাতে গিয়ে তিনি আটকা পড়েন ফিক্সিং ফাঁদে।

১৯৯৪ সালে হওয়া করাচি টেস্ট হেরে যাওয়ার জন্যে তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলকে। এ কথা স্বীকারও করেন অস্ট্রেলিয়ার সে সময়ের খেলোয়াড় মার্ক ওয়াহ ও শেন ওয়ার্ন। তবে নিম্ন আদালত ২০০৮ সালে তাঁর উপর আনা সকল প্রকার শাস্তি খারিজ করে দেন।

  • হ্যানসি ক্রনিয়ে (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দক্ষিণ আফ্রিকা দলের এক সময়কার অধিনায়ক হ্যানসি ক্রনিয়ে আজীবন নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়েই দিন পার করছেন। ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালীন সময়ে তাঁর বিপক্ষে অভিযোগ ওঠে।

পরে অভিযোগের সত্যতা মিললে তাঁকে ক্রিকেট দুনিয়া ছেড়ে দিতে হয়। তিনি অবশ্য পরবর্তী সময়ে বলেছিলেন জুয়ারিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন ভারতের অধিনায়ক আজহারউদ্দিন। এখন অবধি তিনি অব্যাহতি পাননি নিষেধাজ্ঞা থেকে।

  • এস শ্রীশান্ত (ভারত)

এই উপমহাদেশের উপরই যেন জুয়ারিদের প্রকোপটা সবচেয়ে বেশি। সেই প্রকোপের ছায়াতলে একদফা চলে এসেছিলেন ভারতের পেস বোলার এস শ্রীশান্তও।

২০১৩ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ চলাকালীন সময়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে ২০১৫ সালেই সব ধরণের অভিযোগ থেকে মুক্তি পান। তবে বিসিসিআই তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া আজীবন নিষেধাজ্ঞা থেকে সরে আসতে চায়নি।

  • শরিফুল হক (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ চলমান সময়ে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত হন শরিফুল হক। মাশরাফি বিন মর্তুজা হঠাৎই সংবাদ সম্মেলনে এসে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবের কথা স্বীকার করেন। আর এরপরই তোলপাড় শুরু হয়। ২০১২ সালে সেবার ফিক্সিংয়ের দায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্যে নিষিদ্ধ হন পেসার শরিফুল হক।

  • দানিশ কানেরিয়া (পাকিস্তান)

দূর্দান্ত টার্ন করাতে পারতেন বলে একসময় পাকিস্তান জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন দানিশ কানেরিয়া। তবে হঠাৎ করেই তিনি নির্বাচকদের অবজ্ঞার স্বীকার হতে থাকেন। পরে নিজেকে প্রমাণ করার তাড়নায় চলে যান ইংল্যান্ডে, কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে। সেখানেই বিপত্তি বাঁধান। ম্যাচ পাতানোর দায়ে তাঁকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। এরপরই তাঁর উপর আরোপিত হয় সারাজীবনের নিষেধাজ্ঞা।

ম্যাচ পাতানো বিষয়ে আইসিসি বেশ সতর্ক এবং কঠোর। বর্তমান সময়ে এসে এই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মাত্রা খানিকটা কমে এসেছে। তবে এখন অবধি থেমে নেই জুয়ারিরা। এখনও নানা পন্থায় তাঁরা খেলোয়াড়দের ফাঁদে ফেলতেই ব্যস্ত।তেমনই এক ফাঁদে পা দিয়ে ক্রিকেট থেকে দূরে রয়েছেন জিম্বাবুয়ের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ব্রেন্ডন টেইলর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link