চেলসির সর্বকালের সেরা ট্রান্সফার

একটা নতুন পর্বে প্রবেশ করেছেন ইংলিশ ক্লাব চেলসি। মালিকানার রদবদল শেষে, সবার মনেই যেন প্রশ্ন ঠিক কেমন করবে এবার দলবদলে ব্লুজরা? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও খুব একটা মেলেনি। দলবদলের বাজারে বেশ নিশ্চুপই থাকতে দেখা যাচ্ছে ক্লাবটিকে। তবে এমন নয় যে চেলসি বরাবরই নিরবতা পালন করে দলবদলের মহোৎসবে।

চেলসির তাঁদের ক্লাবের ইতিহাসে বহুবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দলবদল ইস্যুতে। নিজেদের দলে তারকা খেলোয়াড় ভেড়ানো সহ, সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের দলে নিয়ে এসে আলোচনার খোড়াক যুগিয়েছে। আজকে আয়োজনে চেলসির সেরা দলবদলের একটা ফিরিস্তি দেওয়ার চেষ্টা।

  • ইডেন হ্যাজার্ড (বেলজিয়াম)

২০১২ সালে চেলসির সাথে ইডেন হ্যাজার্ডের যাত্রা শুরু। ২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পরই বেলজিয়ান এই তারকা ব্লুজদের সঙ্গী হন।

সে সময়ে ৩২ মিলিয়ন পাউন্ডে হ্যাজার্ড ছেড়ে আসেন ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন লিলির ঘর। এরপর থেকে চেলসির নব উত্থানের সাথী হয়ে কাটিয়ে দেন প্রায় সাত বছর। এই সাত মৌসুমে তিনি ক্লাবকে উজাড় করে দিয়েছেন নিজের সেরাটা।

  • জিয়ানফ্র্যাঙ্কো জোলা (ইতালি)

রোমান আব্রামোভিচের আমলের অনেক আগেই ইতালিয়ান ফুটবলার জিয়ানফ্র্যাঙ্কো জোলা এসেছিলেন লন্ডনে। মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে এই ইতালিয়ান স্ট্রাইকারকে দলে ভেড়ায় চেলসি।

ব্লুজদের হয়ে খেললেও পুরো ইংলিশ ফুটবলে তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। সমর্থকদের পছন্দের একজন ছিলেন জোলা। পার্মা থেকে চেলসিতে এসে তিনি ভক্ত-সমর্থকদের মন জয় করার পাশাপাশি দলকে শিরোপা জয়েও রেখেছেন ভূমিকা।

  • দিদিয়ের দ্রগবা (আইভরি-কোস্ট)

আফ্রিকান দেশ আইভরি কোস্টের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হন দিদিয়ের দ্রগবা। চেলসির হয়ে কিংবদন্তি তকমাটাও জুড়ে নিয়েছেন নিজের দৃষ্টিনন্দন পারফরমেন্সের কল্যাণে। ২০০৪ সালে তিনি ব্লুজদের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন।

এরপর তো চেলসির ইতিহাসের প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ জয়ের স্বাদ এনে দিতে সাহায্য করেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে গোল করা ছাড়াও তিনি গুরুত্বপূর্ণ সব ম্যাচে গোল করে ১১ খানা শিরোপা জয়ে অবদান রেখেছেন নীল জার্সি গায়ে।

  • চার্লি কুক (স্কটল্যান্ড)

রেকর্ড পরিমাণ ক্রয় মূল্যের বিপরীতে চেলসিতে নাম লিখিয়েছিলেন চার্লি কুক। ১৯৬৬ সালে ডান্ডি ইউনাইটেড থেকে লন্ডনের ক্লাবটির জার্সি জড়ান কুক। তাঁকে নিজেদের ডেরায় নিয়ে আসতে ৭২,০০০ পাউন্ড খরচ করেছিল ক্লাবটি। তিনি এসে মোটেও নিরাশ করেননি।

বরং ইতিহাস নিন্দিত ১৯৭০ এফ এ কাপের ফাইনালেও খেলেছিলেন। দলকে সে শিরোপাও এনে দিয়েছিলেন লিডস ইউনাইটেডের বিপক্ষে।

  • ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড (ইংল্যান্ড)

রোমান আব্রামোভিচের আমলের আগেই ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের ঠিকানা হয়েছিল স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ। ১১ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ছেড়ে এসেছিলেন ওয়েস্ট হাম। নতুন সূচনাও তাঁকে নড়বড়ে করতে পারেনি কখনো। বরং তিনি বনে গেছেন ক্লাবের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

১৩ বছরের ক্যারিয়ারে মিডফিল্ডে খেলেও ২১১ বার তিনি প্রতিপক্ষে জালে বল জড়িয়েছেন। ক্লাবের ইতিহাসে কিংবদন্তি হয়ে আলাদা এক পাতায় যুক্ত হয়ে রইলেন ল্যাম্পার্ড।

  • রয় বেন্টলি (ইংল্যান্ড)

বিশ্বযুদ্ধ শেষে রয় বেন্টলি নেমে পড়েছিলেন ফুটল মাঠের যুদ্ধে। ১৯৪৮ সালে তিনি যুক্ত হন চেলসির সাথে। নিউক্যাসেল থেকে তাঁকে ১১ হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে নিজেদের শিবিরে নিয়ে আসে চেলসি।

নিজের গোল করার ক্ষমতা দিয়ে বেন্টলি জায়গা করে নিয়েছেন চেলসির ইতিহাসে। টানা আট মৌসুম তিনি ছিলেন ক্লাবটির সর্বোচ্চ গোলদাতা। ব্লুজদের সর্বকালের সেরা গোলদাতাদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছেন রয় বেন্টলি।

  • সিজার অ্যাজপিলিকুয়েতা (স্পেন)

চেলসির একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে প্রায় সবক’টি শিরোপা জিতে ফেলেছেন সিজার অ্যাজপিলিকুয়েতা। ২০১২ সালে তিনি এসেছিলেন স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে। এরপর থেকে কেটে গেছে প্রায় এক দশক। এই এক দশকে ১১টি শিরোপা তিনি জিতেছেন চেলসির হয়ে।

এই সময়ের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারদের একজন হিসেবে বিবেচিত হন অ্যাজপিলিকুয়েতা। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তিনি সপ্তম সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন চেলসির হয়ে।

  • মার্সেল ডেসাইলি (ফান্স)

সময়ের সেরা ডিফেন্ডারের তকমা গায়ে জড়িয়েই চেলসিতে হাজির হয়েছিলেন মার্সেল ডেসাইলি। ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ ও এসি মিলানের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা খেলোয়াড় এসেছিলেন ভঙ্গুর অবকাঠামোর মাঝে।

এই সময়ে তিনি কেবল একটি মাত্রই শিরোপা জিততে পেরেছিলেন চেলসির হয়ে। তবুও তিনি চেলসির করা সেরা সাইনিং হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছেন।

  • পিটার চেক (চেক প্রজাতন্ত্র)

চেলসির রক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে একটা লম্বা সময় ধরে ছিলেন পিটার চেক। ২০০৪ সালে সাত মিলিয়ন পাউন্ডে তিনি যোগ দেন চেলসিতে। এক গোলরক্ষকের জন্যে এত বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ অনর্থক মনে হতে থাকে।

তবে, তিনি নিজেকে প্রমাণ করেন। ১১ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ১২ খানা শিরোপা বাগিয়েছেন চেলসির হয়ে। নিজেকে বিশ্বের সেরা গোলরক্ষকদের কাতারেও নিয়ে যান তিনি ব্লুজদের হয়ে।

  • এডি ম্যাকক্রেডি (স্কটল্যান্ড)

মাত্র পাঁচ হাজার পাউন্ডে এডি ম্যাকক্রেডি যুক্ত হয়েছিলেন চেলসির সাথে। তবে এটা বিশ্বাস করা হয়ে ১৯৬২ সালে ক্লাবের সাথে যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছেন বড্ড বেশি।

অবশ্যই তা ইতিবাচকভাবেই। ফুলহ্যামের পরিবর্তে তিনি চেলসিতে এসে দলকে প্রথম বিভাগে উন্নিত হতে সহয়তা করেন। চেলসির হয়ে এফ এ কাপ জয়ের সুখস্মৃতি রয়েছে স্কটিশ এই ডিফেন্ডারের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link