টেস্ট ক্রিকেট ও শচীন-দ্রাবিড়

এভাবেই শচীন হয়ে উঠেছে আধুনিক ডন। তবে একটা কথা বলতে পারি, পেসের বিরুদ্ধে দ্রাবিড় সামান্য এগিয়ে থাকবে বিশেষ করে ডিফেন্স করার ক্ষেত্রে। অন্যদিকে শচীন স্পিনের ক্ষেত্রে। তবে শচীনের ভাণ্ডারে অস্ত্র বেশি। আর বাউন্স বলে ডিফেন্স করতে দ্রাবিড়ের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু ওই হাইট নিয়ে শচীনের কাছে সেটা আশা করা যায়না। তাই শচীন হুক,আপার কাটে তার মোকাবিলা করেছে। টেনিস এলবোর আগে ফ্রন্টফুটে পুলের ক্ষেত্রে দ্রাবিড়ের চেয়ে এগিয়েই ছিল শচীন।

টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের, শুধু ভারতের কেন বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম দুই সফল, প্রভাবশালী ও টেকনিক্যাল চরিত্র শচীন রমেশ টেন্ডুলকার এবং রাহুল শরদ দ্রাবিড়! টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘ সময় ধরে একই দলে এরকম দুই সমসাময়িক প্যারালাল পারফর্মার ভারত কেন বিশ্ব ক্রিকেটে বিরল!

এবার টেস্ট ক্রিকেটে দুজনের একটু তুল্যমূল্য আলোচনা করা যাক।

  • ডাবল সেঞ্চুরি ও দেড়শ রান

টেস্টে শচীনের ডবল সেঞ্চুরি ৬ টি, দ্রাবিড়ের ৫ টি। শচীনের রেকর্ড সর্বোচ্চ ২০ টি ১৫০+ স্কোর আর দ্রাবিড়ের সেটা ১১ টি।

  • স্ট্যাট শৃঙ্গ

১. ২০০ টেস্টের ৩২৯ ইনিংসে শচীনের মোট রান- ১৫৯২১, গড়-৫৩.৭৯, সেঞ্চুরি-৫১,হাফ সেঞ্চুরি-৬৮, স্ট্রাইকরেট-৫৪.০৮, হায়েস্ট-২৪৮,নট আউট-৩৩ বার।

২. ১৬৪ টেস্টের ২৮৬ ইনিংসে দ্রাবিড়ের মোট রান-১৩২৮৮,গড়-৫২.৩১,সেঞ্চুরি-৩৬,হাফ সেঞ্চুরি-৬৩,স্ট্রাইকরেট-৪২.৫১,হায়েস্ট-২৭০,নট আউট-৩২ বার।

এটাও ঠিক যে ২০০৮ এর আগে শচীনের টেস্টে গড় ৫৬-এর উপর পৌঁছে গিয়েছিল। অন্যদিকে শেষের দিকে দ্রাবিড়ের গড় বেড়েছে। এর মধ্যে আবার টেনিস এলবোর জন্য শচীন ভুগেছে কিন্তু দ্রাবিড়কে চোট ভোগায়নি।

  • শত্রুর মোকাবিলা

শচীন টেস্ট ক্যারিয়ারে যেমন ২৯৪৩৭ টি বলের ফেস করে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় স্থানে দ্রাবিড় তেমনি ফেস করেছে সবচেয়ে বেশি ৩১২৫৮ টি বল। অর্থাৎ দ্রাবিড় বেশিই ধৈর্য্যশীল।

  • হারজিত

শচীন ভারতের হয়ে তার ২০০ টা ম্যাচের মধ্যে জিতেছে -৭২, হেরেছে -৫৬, আর ড্র হয়েছে-৭২। অর্থাৎ জেতার ভগ্নাংশ ০.৩৬ আর হারের ভগ্নাংশ ০.২৮। দ্রাবিড় ভারতের হয়ে তার ১৬৩ টা ম্যাচের মধ্যে জিতেছে -৫৬, হেরেছে -৪৮, আর ড্র হয়েছে-৫৯। অর্থাৎ জেতার ভগ্নাংশ ০.৩৪ আর হারের ভগ্নাংশ ০.৩০। জেতা ম্যাচের ক্ষেত্রে শচীন সামান্য এগিয়ে।

  • জয়ী ম্যাচে গড়

জেতা ম্যাচে দ্রাবিড়ে গড় যেখানে ৬৫.৭৮, শচীনের সেখানে ৬১.৯৩। অর্থাৎ ২ জনেরই গড় এক্ষেত্রে ৬০-এর বেশি এবং দ্রাবিড় এগিয়ে।

  • স্বদেশ বিদেশ

কাকতলীয়ভাবে দুজনেরই গড় দেশের চেয়ে বিদেশে বেশি এবং দুই ক্ষেত্রেই এই ৫০+ গড় ক্রিকেট ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল ঘটনা। শচীনের ঘরের মাঠে গড় যেখানে ৫২.৬৭, বিদেশে গড় ৫৪.৭৫। আবার দ্রাবিড়ের সেটা ঘরের মাঠে সেটা যথাক্রমে ৫১.৩৬ ও ৫৩.০৩।

শচীনের ঘরের মাঠে সেঞ্চুরি-২২ আর বিদেশে-২৯। হাফ সেঞ্চুরি ঘরের মাঠে-৩২, বিদেশে-৩৬। নট আউট ঘরের মাঠে-১৬, বিদেশে-১৭। দ্রাবিড়ের ঘরের মাঠে সেঞ্চুরি- ১৫আর বিদেশে-২১। হাফ সেঞ্চুরি ঘরের মাঠে-২৭, বিদেশে-৩৬। নট আউট ঘরের মাঠে-১১, বিদেশে-২১।

শূন্যরানে আউট -শচীন ১৪ বার (৪+১০), দ্রাবিড় ৮ বার (৩+৫)। (সুনীল গাভাসকারের যেটা দেশে ৫০.১৭এবং ৫২.১১। অর্থাৎ ক্যারিবিয়ান পেস সামলেও এই ভদ্রলোকও অনেক এগিয়ে। আর শূন্য রানে আউট ১২ বার (৬+৬))

  • উপমহাদেশের বাইরে

৭৭ ম্যাচে ১৩৫টি ইনিংসে ৫০.৩৭ গড়ে শচীনের রান ৬২৪৭। সেঞ্চুরি -১৮, হাফ সেঞ্চুরি -৩০, হায়েস্ট ২৪১ নট আউট। ৬৯ টি ম্যাচে ১২৬ ইনিংসে ৫৩.৮০ গড়ে দ্রাবিড়ের রান ৫৯১৮। সেঞ্চুরি -১৪, হাফ সেঞ্চুরি -৩১, হায়েস্ট ২৩৩। এক্ষেত্রে দুজনেরই সর্বোচ্চ রান অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে।

সেঞ্চুরির প্রভাব

শচীনের ৫১ সেঞ্চুরির মধ্যে ভারতের জয় ২০ টি তে, হার ১১ তে আর ড্রয়ের সংখ্যা ২০। অর্থাৎ সেঞ্চুরিতে জয়ের শতকরা হার ৩৯.২২। দ্রাবিড়ের ৩৬ সেঞ্চুরির মধ্যে ভারতের জয় ১৫ টি তে, হার ৪ তে আর ড্রয়ের সংখ্যা ১৭। অর্থাৎ সেঞ্চুরিতে জয়ের শতকরা হার ৩৮.৮৮। এখানে মনে রাখতে হবে এই জয়ে এক ম্যাচে ২ ইনিংসে সেঞ্চুরি ছিল ২০০৫ এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইডেন টেস্টে। ফলে সুপার ইমপোজ হয়ে গেছে জেতার শতকরা হারে!

(সুনীল গাভাস্কারের ক্ষেত্রে যেটা ১৯.৩৫।)

  • বিদেশে সেঞ্চুরিতে জয়

বিদেশে সেঞ্চুরিতে জয়ের সংখ্যা শচীনের ক্ষেত্রে -৯, দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রে -৭।

  • বিদেশে সেঞ্চুরিতে ড্র

শচীনের ক্ষেত্রে -১২, দ্রাবিড়ের-১০।

  • সেঞ্চুরিতে জয় ও অন্যরা

১. শচীনের ক্ষেত্রে যে ২০ টি সেঞ্চুরিতে জয় এসেছে তার মধ্যে মাত্র ৪ টিতে তার চেয়ে দলের কেউ না কেউ বেশি রান করেছে আর ৮ টি ক্ষেত্রে অন্য কেউ সেঞ্চুরি করেনি, এমনকি ৯০ এর ঘরেও কেউ নেই।

২. দ্রাবিড়ের যে ১৫ টি সেঞ্চুরিতে ভারত জয় পেয়েছে তার মধ্যে ৭ টিতে দলের কেউ না কেউ বেশি রান করেছে আর ৪ টি ক্ষেত্রে অন্য কেউ সেঞ্চুরি করেনি কিন্তু এই ৪টির মধ্যে দুটি ক্ষেত্রে একবার দীনেশ কার্তিক ৯৩ (পাক টেস্ট, ইডেন-২০০৫) ও একবার ধোনী ৯৮ (নাগপুর, নিউজিল্যান্ড টেস্ট-২০১০) করেছে। অর্থাৎ ম্যাচ জেতার ক্ষেত্রে দ্রাবিড়ের প্রভাবের চেয়ে সাপোর্টিং প্লে বেশি কিন্তু শচীনের সেক্ষেত্রে প্রভাব বেশি।

  • চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি

শচীনের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি ৩ টি যার মধ্যে জয়( ১০৩ নট আউট, ইংল্যান্ড, চেন্নাই,২০০৮), ড্র (১১৯ নট আউট, ইংল্যান্ড,ম্যাঞ্চেষ্টার,১৯৯০) ও হার(১৩৬, পাকিস্তান,চেন্নাই,১৯৯৯) একটি করে। বাচ্চা শচীনের প্রথম সেঞ্চুরিই ইংল্যান্ডের মাঠে চতুর্থ ইনিংসে! দ্রাবিড়ের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি ১ টি, যেটাতে ড্র হয়( ১০৩ নট আউট, হ্যামিল্টন, নিউজিল্যান্ড,১৯৯৯)।

তৃতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি

শচীনের ৮ টি, দ্রাবিড়ের ৫ টি।

  • সেঞ্চুরি প্রতিপক্ষ

বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি দেখে নেওয়া যাক।
১. শচীনের ক্ষেত্রে: অস্ট্রেলিয়া-১১,নিউজিল্যান্ড-৪,শ্রীলঙ্কা-৯,দক্ষিণ আফ্রিকা-৭, পাকিস্তান-২,ইংল্যান্ড-৭,ওয়েস্ট ইন্ডিজ-৩,জিম্বাবুয়ে-৩,বাংলাদেশ -৫।
২. দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রে: অস্ট্রেলিয়া-২,নিউজিল্যান্ড-৬,শ্রীলঙ্কা-৩,দক্ষিণ আফ্রিকা-২, পাকিস্তান-৫,ইংল্যান্ড-৭,ওয়েস্ট ইন্ডিজ-৫,জিম্বাবোয়ে-৩,বাংলাদেশ -৩।

এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড,দক্ষিণ আফ্রিকা.. টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে শক্তিশালী ৩ প্রতিপক্ষ ধরলে শচীন এগিয়ে।

  • ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপক্ষ

বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে গড় দেখে নেওয়া যাক।

১. শচীনের ক্ষেত্রে: অস্ট্রেলিয়া-৫৫.০০,নিউজিল্যান্ড-৪৬.৯১,শ্রীলঙ্কা-৬০.৪৫,দক্ষিণ আফ্রিকা-৪২.৪৬, পাকিস্তান-৪২.২৮,ইংল্যান্ড-৫১.৭৩,ওয়েস্ট ইন্ডিজ-৫৪.৩৩,জিম্বাবোয়ে-৭৬.৫০,বাংলাদেশ -১৩৬.৬৭।

২. দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রে: অস্ট্রেলিয়া-৩৮.৬৮,নিউজিল্যান্ড-৬৩.৮১,শ্রীলঙ্কা-৪৮.৬৫,দক্ষিণ আফ্রিকা-৩৩.৮৪,
পাকিস্তান-৫৩.৭৪,ইংল্যান্ড-৬০.৯৪,ওয়েস্ট ইন্ডিজ-৬৩.৮১,জিম্বাবোয়ে-৯৭.৯০,বাংলাদেশ -৭০.০০।

অর্থাৎ,শচীনের কোন দেশের বিরুদ্ধেই গড় ৪০ এর নিচে না থাকলেও দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রে দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মানা হয় যে দেশগুলোকে অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা – তাদের বিরুদ্ধে অনেকটা কম।

  • প্রতিপক্ষের মাটিতে

এবার দেখা যাক প্রতিপক্ষের দেশে কার পারফরমেন্স কেমন (প্রথমটা গড়, পরেরটা সেঞ্চুরির সংখ্যা)

১. শচীনের ক্ষেত্রে: অস্ট্রেলিয়া-৫৩.২১,৬;নিউজিল্যান্ড-৪৯.৫৩,২;শ্রীলঙ্কা-৬৭.৯৪,৫;দক্ষিণ আফ্রিকা-৪৬.৪৪,৫; পাকিস্তান-৪০.২৫,১;ইংল্যান্ড-৫৪.৩১,৪;ওয়েস্ট ইন্ডিজ-৪৭.৬৯,১;জিম্বাবোয়ে-৪০.০০,১;বাংলাদেশ -১৩৬.৬৭,৫।

২. দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রে: অস্ট্রেলিয়া-৪১.৬৪,১;নিউজিল্যান্ড-৬৩.৮৩,২;শ্রীলঙ্কা-৩৩.১০,১;দক্ষিণ আফ্রিকা-২৯.৭১, ১;
পাকিস্তান-৭৮.৫৭,৩;ইংল্যান্ড-৬৮.৮০,৬;ওয়েস্ট ইন্ডিজ-৬৫.৭০,৩;জিম্বাবোয়ে-৭৯.১৭,১;বাংলাদেশ -৭০.০০,৩।
অর্থাৎ, দ্রাবিড় সব টেস্ট খেলিয়ে দেশের মাটিতে সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ডের অধিকারী।

এক্ষেত্রেও কোন দেশের মাটিতে শচীনের অ্যাভারেজ ৪০ বা ৩০ এর নিচে নেই। তবে কোন দেশের মাটিতে বেশি আর কোন দেশের মাটিতে কম এটা ধরলে দুজনকেই একই দাঁড়িপাল্লায় রাখা যায়।

  • ম্যাচ ও সিরিজ সেরা

ম্যাচ সেরার পুরস্কার শচীনের ১৪ টি, দ্রাবিড়ের ১১ টি। এর মধ্যে ২০০২-এর লিডস টেস্টে শচীনের ১৯৩ সত্ত্বেও দ্রাবিড়কে (১৪৮) ম্যাচ সেরা দেওয়া নিয়ে মৃদু গুঞ্জন ওঠে। সিরিজ সেরা শচীনের ৫ টি যার মধ্যে ৪টি সিরিজে জয়।
দ্রাবিড়ে ৪ টি,জয় মাত্র ১ টা সিরিজে। এগুলোর মধ্যে শচীনের বিদেশে ম্যাচ সেরা ৬ টি আর দ্রাবিড়ের ৮ টি।
বিদেশে সিরিজ সেরা শচীনের ২ টি, দ্রাবিড়ে ৪ টি।

তবে বিতর্ক না হলে হয়তো ২০০৮ এর অস্ট্রেলিয়া সিরিজ সেরার পুরস্কারটা শচীনের সাথেই আসতো!

  • জুটিতে লুটি

দ্রাবিড় আর শচীন মিলে রেকর্ড ২০ বার ১০০ বা তার বেশি রানের পার্টনারশিপ করেছে যার মধ্যে ১১ টি দেশের বাইরে, চারটি ডাবল সেঞ্চুরি, ছয়টি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় স্থানে আছে গর্ডন গ্রিনিজ ও ডেসমন্ড হেইন্স এবং হেডেন ও পন্টিংয়ের ১৬ বারের রেকর্ড! তবে দুজনের পার্টনারশিপ ধরলে ২০০৮ সালের ঐতিহাসিক পার্থ টেস্টে ১৩৯ রানের পার্টনারশিপ সবচেয়ে বেশি প্রভাবের দাবী রাখে।

  • পার্টনারশিপ রেকর্ড

শচীনের ক্ষেত্রে..

১. ২০০৪ সালে লক্ষ্মণের সাথে ৩৫৩ রানের পার্টনারশিপ সিডনিতে।

২. ২০০৪ এ মুলতান টেস্টে ৩৩৬ রানের পার্টনারশিপ শেবাগের সাথে।

৩. মাঙ্কিগেট বিতর্কের সিডনি টেস্টে (২০০৮) হরভজনের সাথে অষ্টম উইকেট জুটিতে ১২৯ রানের পার্টনারশিপ ভোলার নয়।

দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রে…

১. ২০০৬ এর লাহোর টেস্টে সেওয়াগের সাথে ৪১০ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ। যদিও এই ম্যাচটা রেকর্ড ছাড়া কোনকিছুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়।

২. ২০০১ এর বিখ্যাত ইডেন টেস্টে লক্ষ্মণের সাথে ৩৭৬ রানের পার্টনারশিপ।

৩. ২০০৪ সালে অ্যাডিলেড টেস্টে লক্ষ্মণের সাথে ৩০৩ রানের পার্টনারশিপ।

  • ক্যাপ্টেন্সিতে ব্যাটিং

শচীনের ক্যাপ্টেন্সির রেকর্ড দ্রাবিড়ের অর্ধেক হলেও ব্যাটিং গড়ে ক্যাপ্টেন শচীনের ৫১.৩৫ এর পাশে দ্রাবিড়ের গড় ৪৪.৫১।

  • পাওনাগণ্ডা

১. দুজনেই আইসিসির বর্ষসেরা পুরস্কার পেয়েছে। দ্রাবিড় পুরষ্কার চালু হওয়ার প্রথম বছরেই, ২০০৪ সালে আর শচীন ২০১০ সালে। ২০০৪ সালে দ্রাবিড় টেস্টের বর্ষসেরার পুরস্কার পেলেও ২০১০ এ শচীন হেরে যায় শেবাগের কাছে।

২. শচীন ২০০৯, ২০১০, ২০১১ -পরপর ৩ বছর আইসিসির বর্ষসেরা দলের সদস্য মনোনীত হয়। ২০০৬ সালের ICC Test Team এর ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয় দ্রাবিড়।

৩. শচীন ১৯৯৭ সালে উইজডেনের বর্ষসেরা, ১৯৯৮, ১৯৯৯ সালে লিডিং ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হয়।

৪. দ্রাবিড় ২০০০ সালে উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হয়। দ্রাবিড় ২০১৫ সালে উইজডেন ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন।

  • শচীনের কয়েকটি দুর্দান্ত ইনিংস (র‍্যাঙ্কিং ছাড়াই)

১. পার্থের পিচে ১৯৯২ তে ১৮ বছরের শচীনের ১১৪।

২. ১৯৯০ তে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ১৭ বছরের শচীনের চতুর্থ ইনিংসে অপরাজিত ১১৯। ২০০২ লিডস টেস্টে ১৯৩।

৩. ২০০২ তে পোর্ট অব স্পেনে ১১৭।

৪. ১৯৯৮ তে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টে ১৫৫।২০০১ চেন্নাই টেস্টে ১২৬।

৫. ১৯৯৯ তে পাকিস্তানের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টে ১৩৬।

৬. ২০০৪ সিডনি টেস্টে অপরাজিত ২৪১।

৭. ১৯৯৭ কেপটাউনে ১৬৯। ২০১১ কেপটাউনে ১৪৬।

৮. ২০০৮ এ চেন্নাই টেস্টে ইংল্যাল্ডের বিপক্ষে ৩৮৭ তাড়া করার ম্যাচে অপরাজিত ১০৩।

৯. ২০০৮ সিডনি টেস্টে অপরাজিত ১৫৪।

১০. ২০০৮ অ্যাডিলেড টেস্টে ১৫৩।

১১. ১৯৯২ জোহানেসবার্গ টেস্টে ১১১।

  • দ্রাবিড়ের কয়েকটি দুর্দান্ত ইনিংস (র‍্যাঙ্কিং ছাড়াই)

১. ১৯৯৭ তে জোহানেসবার্গের ১৪৮।

২. ১৯৯৯ তে হ্যামিল্টন টেস্টে ১৯০।

৩. ২০০১ ইডেন টেস্টে ১৮০।

৪. ২০০২ লিডস টেস্টে ১৪৮।

৫. ২০০২ ওভাল টেস্টে ২১৭।

৬. ২০০৩ অ্যাডিলেড টেস্টে ২৩৩।

৭. ২০০৪ রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ২৭০।

৮. ২০০৬ জামাইকা টেস্টে ৮১ ও ৬৮।

৯. ২০১১ লর্ডস টেস্টে অপরাজিত ১০৩।

১০. ২০১০ নাগপুর টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯১।

  • টেকনিক

পেস ও স্পিন দুরকমই বল খেলায় দুজনেই সমানভাবে দক্ষ। এরকম টেকনিক বিশ্ব ক্রিকেটে খুব কমই আছে।

একদিকে দ্রাবিড় যেমন বিপক্ষের বোলারকে বিরক্ত করে দেয় অন্যদিকে শচীন ডমিনেট করে। অনেকটা যেন সেই মাছ ধরতে গিয়ে একজন মাছ না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসে আর একজন প্রচুর মাছ ধরে সম্পৃক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে।

শচীনের চেয়ে কম টেস্ট খেলেও বল খেলেছে বেশি দ্রাবিড়, আবার শচীন দ্রাবিড়ের চেয়ে কম বল খেলেও রান করেছে বেশি। তবে এটাও ঠিক যে টেস্ট ক্রিকেটে বিপক্ষের কাছে দুজনই সমীহ আদায় করে নিয়েছে! একজন থাকলে ম্যাচ জেতার আশা দেখাতো আর একজন ম্যাচ হারতে দিতনা।

স্টিভ ওয়াহ দ্রাবিড় সম্বন্ধে বলেছেন, ‘Try to take his wicket in the first 15 minutes, if you can’t then only try to get remaining wickets.’

শেন ওয়ার্নের কথায়, ‘Rahul Dravid being known as ‘The Wall’ is pretty much spot on. ‘The fortress’ could also describe Rahul. Because once, Dravid was set, you needed the bowling equivalent of a dozen cannon firing all at once to blast him down.’
এভাবেই দ্রাবিড় হয়ে উঠেছিল সত্যিকারের, দ্য ওয়াল।

ভিভ রিচার্ডস শচীন সম্বন্ধে বলেছেন, ‘I think he is marvellous. I think he will fit in whatever category of Cricket that has been played or will be played, from the first ball that has ever been bowled to the last ball that’s going to be. He can play in any era and at any level. I would say he’s 99.5% perfect.’

ডন ব্র‍্যাডম্যান বলেছেন, ‘I saw him playing on television and was struck by his technique, so I asked my wife to come look at him. Now I never saw myself play, but I felt that this player is playing with a style similar to mine, and she looked at him on Television and said yes, there is a similarity between the two…his compactness, technique, stroke production… it all seemed to gel!’

এভাবেই শচীন হয়ে উঠেছে আধুনিক ডন। তবে একটা কথা বলতে পারি, পেসের বিরুদ্ধে দ্রাবিড় সামান্য এগিয়ে থাকবে বিশেষ করে ডিফেন্স করার ক্ষেত্রে। অন্যদিকে শচীন স্পিনের ক্ষেত্রে। তবে শচীনের ভাণ্ডারে অস্ত্র বেশি।
আর বাউন্স বলে ডিফেন্স করতে দ্রাবিড়ের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু ওই হাইট নিয়ে শচীনের কাছে সেটা আশা করা যায়না। তাই শচীন হুক,আপার কাটে তার মোকাবিলা করেছে। টেনিস এলবোর আগে ফ্রন্টফুটে পুলের ক্ষেত্রে দ্রাবিড়ের চেয়ে এগিয়েই ছিল শচীন।

  • শেষ কথা

বিদেশের দিকপাল যারা এই ২ জনের বিপক্ষে খেলেছেন তারা এদের দ্বারা কতটা প্রভাবিত তা এই দুই কমেন্টেই প্রমাণিত। ব্রায়ান লারার কথায়, ‘If I have to put anyone to bat for my life it’ll be Kallis or Dravid.’

অন্যদিকে ম্যাথু হেইডেনের কথায়, ‘I have seen God, he bats at no. 4 for India.’

তাই সবকিছু বিবেচনা করে, ম্যাচগুলো চাক্ষুষ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি টেস্টে কেউ কারুর চেয়ে পিছিয়ে নেই,এগিয়েও নেই। আপনি বাচ্চা ছেলেটার ম্যাঞ্চেষ্টার,পার্থ মনে রাখবেন নাকি বুড়োর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ভুলে যাবেন নাকি ভুলে যাবেন অ্যাডিলেডের সঙ্গে সিডনি ছিল, ইডেনের পরে চিপক ছিল, রাওয়ালপিন্ডির সঙ্গে মুলতানও ছিল সেটা আপনার ব্যাপার!

এই ২ জনই ভারতের সম্পদ, দুজনকে নিয়েই আমরা গর্বিত। ২ জন একসাথে না খেললে হয়তো টেস্টে ভারতকে এত স্বাস্থ্যবান মনে হত না! এবার আপনি যুক্তি মানবেন, নাকি আবেগ,নাকি মিথ, নাকি বাস্তব, সেটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত বিষয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...