১১ বোলারের ইনিংস

চাইলেও আর ভাঙা যাবেনা এসব রেকর্ড। তা সেই রেকর্ডটি কি? কোনো টেস্ট ম্যাচে ১১ জন বোলারের ১১ জনই হাত ঘুরিয়েছেন! টেস্ট ক্রিকেটের দীর্ঘ ইতিহাসে এমন ঘটনা দেখা গেছে মাত্র চারবার। তবে আইসিসির এখনকার নিয়মে আর ১১ জনই হাত ঘোরাতে পারবেন না।

ক্রিকেট তার জন্মলগ্ন থেকেই আইকনিক মুহুর্তের সাক্ষী হয়ে আসছে।

শচীনের সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি, যুবরাজের ছয় বলে ছয় ছক্কা; ক্রিকেট বেঁচেই থাকে এসব মুহুর্তে, এসব রেকর্ডে। তবে কে না জানে রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্যে। যেসব রেকর্ডের গল্প বললাম, তাও হয়তো নতুন করে জন্ম দেওয়া যাবে একদিন, হয়তো ভাঙাও যাবে। তবে আজকে এমন এক রেকর্ডের গল্প শোনাব, যা চাইলেও আর কোনদিন ভাঙা যাবেনা।

হ্যা, ভুল পড়েননি। চাইলেও আর ভাঙা যাবেনা এসব রেকর্ড। তা সেই রেকর্ডটি কি? কোনো টেস্ট ম্যাচে ১১ জন বোলারের ১১ জনই হাত ঘুরিয়েছেন! টেস্ট ক্রিকেটের দীর্ঘ ইতিহাসে এমন ঘটনা দেখা গেছে মাত্র চারবার। তবে আইসিসির এখনকার নিয়মে আর ১১ জনই হাত ঘোরাতে পারবেন না। কিন্তু এই চারবারই বা কেন দলের সবাইকে হাত ঘোরাতে হল?

  • ইংল্যান্ড (১৮৮৪ – প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া)

একাদশের সব খেলোয়াড়কে বোলার হিসেবে ব্যাবহার করার প্রথম ঘটনা এটি। টেস্ট ম্যাচটির সময়কাল ছিল ১১ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট; ১৮৮৪ সাল!

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া ৩১১ ওভার ব্যাট করে তুলে ফেলে ৫৫১ রান। ইংলিশ অধিনায়ক লর্ড হ্যারিস দলের সব খেলোয়াড়কে সেদিন বল হাতে  ব্যাবহার করেন। উদ্দেশ্য পরিষ্কার- অস্ট্রেলিয়ার উইকেট তুলে নেওয়া।

১১ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেন আলফ্রেড লিটেলন। ১২ ওভার বল করে ১৯ রানের বিনিময়ে তিনি নেন ৪ উইকেট। এরপর ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নামলে ওয়াল্টার রিডের সেঞ্চুরির পরও ৩৪৬ রানের বেশি আগাতে পারেনি। এরপর ফলোঅনে পড়ে আবার ব্যাট করতে নামলে ইংল্যান্ড অল-আউট হয়ে যায় মাত্র ৮৫ রানে! যা হোক, ম্যাচে কি ঘটেছে সেটি আসলে আর মুখ্য বিষয় না। ইতিহাস এই ম্যাচটাকে মনে রেখেছে একাদশের সব খেলোয়াড়ের বোলিং করার প্রথম ঘটনা হিসেবেই।

  • অস্ট্রেলিয়া (১৯৮০ – প্রতিপক্ষ পাকিস্তান)

একাদশের সবার বোলিং করার বিরল ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটতে সময় লেগেছে ৯৬ বছর। আর কাকতালীয়ভাবে এবারও সফরকারী দলের নাম অস্ট্রেলিয়া।

ম্যাচটা ছিল পাকিস্তানের সাথে, পাকিস্তানেরই ফয়সালাবাদে। টসে জিতে ৬ই মার্চ ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেলের ডাবল সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৬১৭ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় তাঁরা। এরপর পাকিস্তান ব্যাট করতে নামলে মজার ঘটনা ঘটে। অস্ট্রেলিয়ার সাথে ৯৬ বছর আগে যা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া সে ম্যাচে তাই করে দেখায়। একাদশের সব খেলোয়াড়কে বল করান দলটির অধিনায়ক।

তাতে অবশ্য কাজের কাজ খুব বেশি হয়েছে বলা যাবেনা, জাভেদ মিঁয়াদাদের সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়াকে রানের জবাব বেশ ভালভাবেই দিতে পারে পাকিস্তানীরা।

  • ভারত (২০০২ – প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ভারত সেবার গেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। তিন ম্যাচ পর সিরিজে ছিল ১-১ সমতা, দুই দলই চাইছিল চতুর্থ টেস্ট জিতে এগিয়ে যেতে। কিন্তু অ্যান্টিগার পিচ সেদিন পুরো কথা বলছিল ব্যাটসম্যানদের পক্ষেই। ওয়াসিম জাফরের ৮৬, রাহুল দ্রাবিড়ের ৯১, ভিভিএস লক্ষণের সেঞ্চুরির সুবাদে ভারত প্রথম ইনিংসে গড়ে ৫১৩ রানের পাহাড়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশের আট বোলারকে ব্যাবহার করে ফেলে ভারতের উইকেট তুলতে।  তবে জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানেরাও এগিয়ে যান, ভারতের রান টপকে করেন ৬২৯ রান ।

তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং ইনিংসেও নজর কেড়েছিল ভারতই। ভারতের বোলিং কার্ডে দেখা যাচ্ছিল একাদশের সবার নামই। এরকম ঘটনা সেদিন ক্রিকেট দেখে তাঁর ইতিহাসে তৃতীয়বার।

  • দক্ষিণ আফ্রিকা (২০০৫; প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

বিরল ইতিহাসের শেষ ঘটনা এটি। আর এখানেও জড়িয়ে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নাম। সিরিজের চতুর্থ টেস্টে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়ারা তুলতে পারে ৫৮৮ রান। জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে রেকর্ড বুকে নাম লিখে ফেলেন ক্রিস গেইল। একাই করে ফেলেন ট্রিপল সেঞ্চুরি!

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকি ব্যাটসম্যানেরাও প্রতিরোধ গড়তে থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিংয়ে ব্যাবহার করে ফেলে একাদশের সব খেলোয়াড়কে। ১১ জনের মধ্যে অবশ্য সব থেকে বেশি উইকেট নেন মনডে জনডেকি, তিনি তিন উইকেট শিকার করেন ।

তবে মজার ব্যাপার হল, এদিন এমনকি গ্রায়েম স্মিথ আর এবিডি ভিলিয়ার্সও দুটি করে উইকেট নিয়েছিলেন। বোঝাই যাচ্ছে, অধিনায়কের সিদ্ধান্তটা একেবারে বাজে ছিল  না। আর তাতেই ইতিহাস হয়ে যায় ম্যাচটি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...