সাদা পোশাকে তাঁর সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ছিল, টেস্ট টেম্পারমেন্ট নিয়েও ছিল আলোচনা-সমালোচনা। রঙিন পোশাকে সফল হলেও টেস্টে তিনি কতটা কার্য্যকর হবেন সে নিয়ে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আলোচনা কম হয়নি। রঙিন পোশাকে একটা সময় নিয়মিত মুখ হলেও টেস্টে ছিলেন বেশ পিছিয়ে। সাদা পোশাকে দলের ব্যাকআপ খেলোয়াড় হিসেবে ছিলেন দীর্ঘসময়।
ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ। রঙিন পোশাকের মত সাদা জার্সিতেও নিজেকে প্রমাণের শুরু। ঘরের মাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর দেশের বাইরেও ব্যাটে-বলে দলের হয়ে সেরাটা দিচ্ছেন জাদেজা। লাল বলের ক্রিকেটে অবশ্য তিনি বেশ সফল। বল হাতে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন, সাত নম্বরে ব্যাট হাতে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদানও রাখছেন। অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়ে উঠে আসেন টেস্ট অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। একটা ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, সেই গল্পে তিন ফরম্যাটেই এখন ব্যাটে-বলে দাপট দেখাচ্ছেন জাদেজা।
চলতি বছর নিজের খেলা প্রথম টেস্টেই ১৭৫ রানের ইনিংসে গড়েছিলেন রেকর্ড। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই দুর্দান্ত ইনিংসের পর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বিভীষিকাময় একটা মৌসুম। এরপর ইনজুরির কারণে খানিকটা সময় বাইরে থাকা। সেখান থেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে জাতীয় দলে ফিরে আসা। দাপুটে সেঞ্চুরিতেই প্রত্যাবর্তন হলো রবীন্দ্র জাদেজার।
টেস্টে বর্তমান সময়ে সেরা অলরাউন্ডারের মুকুট মাথায় তুলেছেন বেশ আগে। সাদা পোশাকে বর্তমান সময়ের সেরা অলরাউন্ডার তকমা গায়ে জড়িয়ে বাইশ গজ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন জাদেজা। এজবাস্টনে ইংলিশদের ডেরায় জাদেজার আরও এক সেঞ্চুরি দেখা। তবে, এবার জাদেজা সুলভ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের দেখা মিলেনি। ঋষাভ পান্তের ঝড়ের সামনে থমকে যায় জাদেজার ব্যাটও। একদিকে পান্ত ঝড়, আরেকদিকে টেস্ট মেজাজেই রান তুলতে থাকেন জাদেজা।
রেকর্ডময় সেঞ্চুরির পর পান্ত ফিরে গিয়েছিলেন। তবে, উইকেটে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন জাদেজা। টেইল এন্ডারদের সাথে নিয়ে পাড়ি দেন বাকি পথ। তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দেখা পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। এরপর চার বছরের অপেক্ষা। দ্বিতীয় সেঞ্চুরির অপেক্ষায় কেটেছে চার বসন্ত আর শত শত গৌধুলি লগ্ন।
চলতি বছর মাত্র তিন টেস্টেই দেখা পেয়েছেন দুই সেঞ্চুরি। তাও আবার দেশের বাইরে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছেন এই অলরাউন্ডার।
আইপিএলের বাজে ফর্ম আর ইনজুরিতে ব্যাকফুটে ছিলেন জাদেজা। সমালোচনার বৃত্তে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন আইপিএল ব্যর্থতায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের আগে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন জাদেজা। ব্যর্থতার চাকাটা ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেয়নি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে দলের বিপর্যয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় জাদেজার ব্যাট।
১৯৪ বলে ১০৪ রানের দায়িত্বশীল এক ইনিংস। আগ্রাসী মেজাজ থেকে বেরিয়ে দলের প্রয়োজনে অসাধারণ এক ইনিংস জাদেজার ব্যাটে। টপ অর্ডারের ব্যর্থতা, মিডল অর্ডারে পান্তের আগ্রাসী ব্যাটিং – আরেকপ্রান্তে ইংলিশ পেসারদের বিপক্ষে ঘন্টার পর ঘন্টা উইকেটে টিকে ছিলেন জাদেজা।
ক্যারিয়ারের প্রথম নয় বছরে এক সেঞ্চুরি পাওয়া জাদেজা চলতি বছর তুলে নিয়েছেন দুই সেঞ্চুরি। ব্যাট হাতে সাদা পোশাকে আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। লোয়ার-মিডল অর্ডারে জাদ্দুর ব্যাটে দেখা মিলছে জাদুর। ব্যাটে-বলে দলের অন্যতম ভরসা তিনি। টেস্ট ফরম্যাটে পাড়ি দিতে যান আরো বহু পথ। ক্যারিয়ারের শেষটাও মাড়াতে চান সফলতার পথ। কতদূর যেতে পারবেন – সেটা তো সময় আর পারফরম্যান্স-ই বলে দিবে।