২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। সেবার জেমকন খুলনার হয়ে বল হাতে রীতিমত আগুন ঝড়াচ্ছেন। আসরে সাত ম্যাচ খেলে তাঁর ঝুলিতে ১৩ উইকেট। অধিনায়ক মাশরাফির তুরুপের তাস হয়ে উঠেছেন। তবে কোয়ালিফায়ার ম্যাচের আগেই হঠাৎ শহিদুল ইসলামের সবকিছু থমকে গেল।
ম্যাচটা তিনি খেলতে পারবেন না। খেলবেন কি করে, জীবনটাই যে ওলট পালট হয়ে গিয়েছিল। বাবা চলে গিয়েছিলেন জীবন নদীর ওপারে। খবর পেয়েই চলে গেলেন নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে – শেষ বারের জন্য বাবাকে দেখবেন বলে।
কোয়ালিফায়ারের আগে সাত ম্যাচে পান ১৩ উইকেট, এমন একজনকে ছাড়াই মাঠে নামতে হয় জেমকন খুলনাকে। খুলনা ফাইনাল নিশ্চিত করলো। তবে ফাইনাল ম্যাচের আগে খুলনার শহিদুলকে প্রয়োজন ছিল, মাশরাফি তাঁর সেরা অস্ত্রটাকে চাইছিলেন খুব করে।
ওদিকে এর মধ্যেই বাবাকে কবরে রেখে ফিরেছেন শহিদুল। বুকে শোক চেপে ধরে তিন দিনের আইসোলেশনে ছিলেন। করোনা ভাইরাসের টেস্ট করে পান নেগেটিভ সার্টিফিকেট। ফাইনাল খেলতে কোনো বাঁধা নেই। নেমে পড়েন শহিদুল।
বাবা হারানোর তীব্র কষ্টটা বুকের ভেতর থেকে আগুন হয়ে বের হয় শহিদুলের। সেই আগুনের দেখা মিলেছিল ফাইনালে। চার ওভারে ৩৩ রান খরচ করে তুলে নেন ২ উইকেট। তবে পরিসংখ্যান এক বিরাট গাধা। তার সাধ্য নেই শহিদুলের বোলিংকে ব্যাখ্যা করার।
শেষ ওভারে শহিদুলই মাশরাফিকে ফাইনালটা জিতিয়ে দিয়েছিলেন। যেই মাশরাফি কোয়ালিফায়ারের আগে বলেছিলেন তাঁরা শহিদুলের জন্য ম্যাচটা জিততে চান। আর পরের ম্যাচেই শোক বুকে নিয়ে মাশরাফিকে আরেকটা শিরোপা উপহার দেন শরিফুল। ফলে মাত্র আট ম্যাচ খেলেই হয়ে উঠেছিলেন আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
সেই থেকেই পেসার শহিদুল ইসলামের উপর বাংলাদেশের বাড়তি নজর। জাতীয় দলে আসতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। গতবছরই পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেকও হয়। এছাড়া নিয়মিত টেস্ট দলেও রাখা হচ্ছিল তাঁকে। এমনকি এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজেও তিনি দলে ছিলেন। পরে শেষ মুহূর্তে ইনজুরির কারণে আর খেলা হয়নি তাঁর।
তবে এসবকিছুর মাঝেই শহিদুলের আকাশে আবার জমা হয়েছে কালো মেঘ। হঠাৎই আইসিসি জানালো ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় দশ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে শহিদুলকে। এই সময়টায় কোন ধরনের ক্রিকেটই তিনি খেলতে পারবেন না। এমন খবরে ক্রিকেট পাড়াও খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
কেননা ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়ার ব্যাপারটা বেশ জটিলই। প্রথম শুনলে মনে হবে কোন মাদক সেবন করে বুঝি এই শাস্তি পেলেন শহিদুল। যদি তেমন হয় তাহলে তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যও একটা কালো দাগ হয়ে থাকবে এটি।
তবে পরে জানা যায় আসলে মাদকের সাথে কোন সম্পর্কই নেই এই ক্রিকেটারের। তবে তাঁর মূত্র নমুনায় ক্লোমিফেনের উপস্থিতি পাওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন তিনি। ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি ড্রাগ এজেন্সির তালিকায় নিষিদ্ধ হিসেবে তালিকাভুক্ত এই ক্লোমিফেন। আইসিসির অ্যান্টি ড্রাগ অ্যাক্টের ৪.১ ধারা ভঙ্গের দায়ে শাস্তি পেয়েছেন শহিদুল ইসলাম।
তবে শহিদুলের দেহে এই ক্লোমিফেন এসেছে একটা ওষুধ থেকে। ফলে তিনি নিজেও এই ব্যাপারটা সম্পর্কে খুব একটা জানতেন না। তবে আইসিসি এসব ব্যাপারে কোনরকম ছাড় দিতেই রাজি না। যদিও শহিদুল যে কোন মাদক নেননি সেইটা এই ক্রিকেট সংস্থাকে বোঝানো গিয়েছে। ফলে তাঁরা শাস্তিটা মাত্র দশ মাসে নিয়ে এসেছেন।
যদিও এই ক্লোমিফেন মূলত নারীদের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পুরুষদের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়না বললেই চলে। কেননা পুরুষরা ক্লোমিফেন সেবন করলে এটি কাজ করে পুরুষ দেহের স্পার্ম কাউন্ট বাড়ানো, পেশি ও হাড়ের শক্তি বৃদ্ধির জন্য দায়ী হরমোন টেস্টোসটেরনের মত। এ হরমোনের বাড়তি ও কৃত্রিম প্রবাহের ফলে মাঠের পারফরম্যান্স স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়।
আর এ কারণে হরমোন বৃদ্ধির সব ওষুধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে তালিকায় রয়েছে ক্লোমিফেনের নামও। সে কারণে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে জাতীয় দলের পেসার শহিদুলকে।