ফিনিক্স পাখি করিম বেনজেমা। ধ্বংসস্তুপ থেকে এখন তিনি ওই দূর আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছেন। বাঁধাহীন! তিনি অদম্য এক গতিতে ছুটে চলছেন। একাই যেন রাজত্ব করছেন। তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্যে ভাগ বসানোর যেন কেউই নেই। দিনের নীল আকাশে যেন শুভ্র এক মেঘের ভেলা হয়েই ভেসে বেড়াচ্ছেন বেনজেমা।
এবারের ব্যালন ডি’অর জেতার যোগ্য দাবিদার। তাঁর হাত থেকে সেই স্বর্ণালী বলটা আর ছিনিয়ে নেবে কে? কেউ তো নেই ধারে কাছে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তিনি ছিলেন অনবদ্য। তিনি দুর্দমনীয়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পরবর্তী সময়ে তিনি একা কাঁধে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। তবে রিয়াল মাদ্রিদ ভরসা করেছিল বলেই বিধায়।
একটা সময় বেনজেমা ছিলেন রোনালদোর ছত্রছায়ায়। সবাই ধরে নিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের মত একটা ক্লাবের প্রাণ ভোমরা হওয়া আর হবে না তাঁকে দিয়ে। তিনি বরং ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই বিদায় নেবেন। তবে ঠিক সেখান থেকেই তিনি প্রমাণ করেছেন ২০০৯ সালে তাঁকে দলে নিয়ে এসে একদমই ভুল করেননি ফ্লেরেন্তিনো পেরেজ।
কি দুর্ধর্ষ এক সময়! ফুটবল মাঠের চিত্রশিল্পী বনে গিয়েছেন তিনি। একের পর এক গোল করে নতুন সব রঙ জুড়েছেন। রিয়াল মাদ্রিদের সাদা জার্সিটার মান রক্ষায় তিনি রঙ ছড়িয়েছেন সর্বত্র। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কথাই ধরা যাক। কি খেললেন! একাই টানলেন। নিয়ে গেলেন শিরোপা জয় অবধি।
সেমিফাইনালে এডারসনের মত একজন গোলকিপারের বিপক্ষে পানেকা শটে গোল আদায় করেছিল। সেদিন সম্ভবত অ্যান্টার্টিকায় বসবাস করছিল বেনজেমা। স্নায়ুচাপ বলতে কিছু একটা যে পৃথিবীর বুকে বিরাজ করে তাঁকে দেখে তা বোঝার উপায়ই ছিল না। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডে একা হাতেই প্রতিপক্ষের স্বপ্ন চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিলেন তিনি।
দুই লেগ মিলিয়ে যেখানে ২-০তে এগিয়ে পিএসজি সেখান থেকে বেনজেমার হ্যাট্রিক। রিয়াল মাদ্রিদ পরের রাউন্ডে। এমনটা তিনি এবারে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জুড়েই করেছেন। যখনই প্রয়োজন, তখনই তিনি গোল করেছেন। দৃষ্টিনন্দন গোল। রিয়াল মাদ্রিদের শিরোপা ক্যাবিনেটটা আরও একটু সুসজ্জিত করার কারিগর যেন বেনজেমাই ছিলেন।
৪৫ ম্যাচে সাদা জার্সি গায়ে করেছেন ৪৪ গোল আর ১৫ অ্যাসিস্ট। তিনি যেন ছিলেন মাদ্রিদের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁকে ছাড়া আট ম্যাচ খেলেছে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। তাতে জয় এসেছে কেবল তিন ম্যাচে। ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ বেনজেমা সেটা তো এই পরিসংখ্যান থেকেই আন্দাজ করে নেওয়া যায়। চার, চারটি শিরোপা। ব্যালন ডি’অর আর ঠেকায় কে?
হ্যাঁ, বেনজেমার হাত থেকে ব্যালন ডি’অর ছিনিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। তাঁর প্রতিদ্বন্দীরাও তো কেউ নেই আশেপাশে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আর লিওনেল মেসির সময় হয়ত শেষ। তারুণের নবপালে হাওয়া লাগিয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে ছুটছেন রকেট গতিতে। তবে শিরোপা জেতার ঝুলিটা বড্ড হালকা। ঠিক একই চিত্র মোহাম্মদ সালাহ, সাদিও মানে, রবার্ট লেওয়ান্ডস্কির।
তাঁরা সবাই কোথাও না কোথাও পিছিয়ে রয়েছেন বেনজেমার বহু পিছনে। নতুন মৌসুমের শুরুতেই ইউরোপা লিগের চ্যাম্পিয়ন দলকে হারিয়ে মৌসুম শুরু মাদ্রিদের। সে ম্যাচেও একখানা গোল এসেছে বেনজেমার পা থেকে। বাকিদের যেন মনে করিয়ে দিতে চাইছেন তিনি এখনও দমে যাচ্ছেন না। ফুটবলকে তাঁর আরও কিছু দেওয়া বাকি।
ধারাবাহিক বেনজেমার ভয়ংকর রুপটা বছরের শেষভাগে হওয়া বিশ্বকাপে নিশ্চয়ই কাজে লাগাতে চাইবে ফ্রান্স। প্রার্থনা শুধু ইনজুরি মুক্তির। রিয়ালের জার্সি গায়ে ছাড়িয়ে গিয়েছেন রাউলকে। এখন শুধু রোনালদোকে ছাড়াবার পালা। উড়তে থাকা বেনজেমা নিশ্চয়ই একটা লম্বা সময় ধরেই ভেসে বেড়াবেন শূন্যে।