কলিন্স যুগের গল্প

কলিন্স ক্রিকেটের ইতিহাসে নাম লিখিয়েছিলেন, যখন তিনি তিনটি টেস্ট ম্যাচের প্রথম বলেই তিনবার উইকেট নেওয়া বোলার ছিলেন। বাংলাদেশী ওপেনার হান্নান বিস্ময়কর ভাবে তিনবারই এই ক্যারিবীয়ান পেসার পেড্রো কলিন্সের কাছেই শূন্য রানে ধরাশায়ী হয়েছেন।

পেড্রো টাইরন কলিন্স ছিলেন বিরল বাঁহাতি পেসারদের একজন। ১৯৭২ সালের ১২ আগস্ট সাবেক এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটার জন্মগ্রহণ করেছিলেন বার্বাডোসের সেন্ট পিটারের বস্কোবেল এলাকায়। ক্রিকেটে আগ্রহ খুঁজে পাওয়ার আগে কলিন্স একজন তুখোড় ফুটবলার ছিলেন।

পরে তাঁর অবির্ভাব হয় ক্রিকেটের দুনিয়ায় একজন বাঁহাতি পেসার হিসেবে। তাঁর মাঝে দারুণ একজন বোলারের সব গুণ থাকা সত্ত্বেও, তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের মূল ভিত্তি হতে পারেননি। কারণ ইনজুরি তার ক্যারিয়ারের বেশ বড় একটা সময় নষ্ট করে তাঁর ক্যারিয়ারকে বাঁধাগ্রস্ত করেছিল।

জাতীয় দলে আসার আগেই তিনি আলো ছড়ান ক্রিকেটে। ১৯৯৮ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ দলের হয়ে খেলার সময় ভারতের বিপক্ষে মাত্র ১১ টি ডেলিভারিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে কলিন্স মুগ্ধতা ছড়িয়েছিলেন। পরবর্তী বছর মার্চেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর টেস্ট অভিষেক ঘটে এবং অক্টোবরে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর ওয়ানডে অভিষেক ঘটেছিল।

কলিন্স সম্পর্কে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেসার ফিদেল এডওয়ার্ডসের সৎ ভাই। দুজনেরই পেস বোলিংয়ের দারুণ দক্ষতা ছিলো এবং তাঁরা কয়েকটি ম্যাচে একসঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন। মজার ব্যাপার হল, ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে একটি টেস্ট সিরিজে কলিন্স তাঁর সৎ ভাই ফিদেল এডওয়ার্ডসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। কারণ তখন এডওয়ার্ডস একটি বাজে ইনজুরির মোকাবেলা করছিলেন।

ক্রিকেটার না হলে নিশ্চয়ই তিনি ফুটবলারই হতেন। একজন পূর্ণসময়ের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার আগে, কলিন্স ফুটবল খেলায় মত্ত থাকতেন। বরং বলা উচিত দারুণ দক্ষতা রাখতেন ফুটবলেও। তবে, ক্রিকেটার হওয়ার জন্যই তাঁর জন্ম হয়। কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোস এবং ইয়ান বিশপের মতো কিংবদন্তি পেসারদের পাশাপাশি বল করার সুযোগ পেয়েছিলেন কলিন্স।

কলিন্সের অন্য রকম এক রেকর্ডের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নামও। কলিন্স ক্রিকেটের ইতিহাসে নাম লিখিয়েছিলেন, যখন তিনি তিনটি টেস্ট ম্যাচের প্রথম বলেই তিনবার উইকেট নেওয়া বোলার ছিলেন। বাংলাদেশি ওপেনার হান্নান বিস্ময়কর ভাবে তিনবারই এই ক্যারিবীয়ান পেসার পেড্রো কলিন্সের কাছেই শূন্য রানে ধরাশায়ী হয়েছেন।

কলিন্সের ক্যারিয়ারের অন্ধকার অধ্যায়ও আছে। কলিন্স একটি বাজেধরণের আঘাতের জন্য ব্যাপকভাবে স্মরণীয়। অস্ট্রেলিয়ার জেসন গিলেস্পির ডেলিভারিতে বল এসে কলিন্সের অণ্ডকোষে আঘাত করে। এই ইনজুরি তাঁকে প্রায় এক বছর দলের বাইরে রাখে। এরপর তিনি ২০০১-০২  সালে তাঁর বোলিংয়ে অতিরিক্ত গতি নিয়ে দলে ফিরে আসেন।

ক্রিকেটের দুনিয়ার অন্যতম সেরা ব্যাটার শচীন টেন্ডুলকারের উইকেটটি যেকোন বোলারের জন্য একটি বিশাল মূল্য রাখে। কিন্তু ২০০২ সালে ভারতের বিপক্ষে একটি সিরিজে, কলিন্স তিনবার টেন্ডুলকারকে শিকার করতে পেরেছিলেন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে বরাবরই ছিলেন দুর্দান্ত। বলা যায় বাংলাদেশ কলিন্সের জীবনে প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিলো। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর দুর্দান্ত রেকর্ড রয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে চার টেস্টে তিনি মোট ২৬ টি উইকেট শিকার করেছেন।

কলিন্স টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর শততম উইকেটটি নিয়েছিলেন যুবরাজ সিংকে শিকার করে। ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে তিনি শততম উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন।

২০০৭ সালে, কলিন্স ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট দল সারের সাথে দুই বছরের কলপ্যাক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। যা তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটায়। পরে ২০১০ সালে, তিনি সারে থেকে বেরিয়ে আসেন এবং মিডলসেক্সের সাথে যুক্ত হন। প্রথম শ্রেণিতে তাঁর ৫০০’র ওপর উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেও একই ভাবে আলো ছড়াতে পারলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...