‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’ – ঠিক তেমনি ক্রিকেট মাঠের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যের মঞ্চায়ন সম্ভবত হয় সাকিব আল হাসান মাঠে থাকলে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’, সত্যি বলতে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে সমীহ এনে দেওয়া মানুষটাও তিনি। এ দেশের বয়োজেষ্ঠ্য মানুষটা যেমন মেতে থাকেন সাকিব প্রীতিতে তেমনি করে সাকিবকে একজন খেলোয়াড় হিসেবে আদর্শ মানে বহু শিশু কিশোর।
তবে সাকিব আর নিজেকে ক্রিকেটের গণ্ডিতে আটকে রাখতে চাননা। তিনি বরং ছুটে বেড়াতে চেয়েছেন দূর দিগন্তে। তিনি বিচরণ করতে চেয়েছিলেন ভিন্নসব ক্ষেত্রে। তিনি যেন সেটাই করছেন। বিজ্ঞাপনে সাকিব প্রিয় মুখ। সেটা সবারই জানা, নতুন করে বলার কিছু নেই। তাইতো ব্র্যান্ডগুলোতেও বেশ প্রিয় সাকিব আল হাসান। তিনি যেন একদণ্ড দম ফেলার সুযোগই পাননা।
শুধু অন্য ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন করেই ক্ষান্ত হবেন কেন সাকিব? তিনি তো অলরাউন্ডার। তিনি সর্বক্ষেত্রে হবেন পারদর্শী। নিজের ব্যবসাও খুলেছেন নানা রকম। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা থেকে শুরু করে, স্বর্ণ, সেই সাথে ই-কমার্স ব্যবসার সাথেও যুক্ত রয়েছে সাকিব আল হাসানের নামটি। আর বিতর্ক, সে তো সাকিবকে কেন্দ্র করেই একটা বৃত্তাকার অবয়ব তৈরি করে থেকে যায় সর্বক্ষণ।
তবে এসব কিছুতেই যেন সাকিবকে ঠিক মানায় না। ক্রিকেট ওই সবুজ গালিচাতেই সাকিব বর্ণিল এক চিত্রকর্ম। এই ক্রিকেট মাঠই তো পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তাঁকে পুরো বিশ্বের সাথে। এই ক্রিকেট মাঠটাই তো সাকিবকে বানিয়েছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এই মাঠের মায়া ঠিক ছেড়ে যাবেন কি করে সাকিব?
আজ সারাদিন ঢাকার আকাশে মেঘের ঘনঘটা। বিকেল নাগাদ এক পসলা বৃষ্টিও হল। এমনই কালো মেঘের আনাগোনা হয়েছিল ক্রিকেটের আকাশেও। দিনশেষে সে ঘন কাল মেঘ থেকে আশার আলো হয়েই সাকিবের আগমন অধিনায়ক বেশে। শত সমালোচনা, তিরস্কার ঠেলে তিনি এক বিশাল হাসি মাখা মুখ নিয়ে বেড়িয়েছিলেন। আভাস দিয়েছিলেন সূর্য আড়াল হয়নি। সেটা প্রমাণ করতেই যেন হোম অব ক্রিকেটে আগমন অলিখিতি রাজপুত্রের।
খানিক বেয়ারা এই রাজপুত্রকে তো সবাই ভালবাসে। তবে শরীরটা তো তাঁর থেকেও বেয়ারা। একটু সুযোগ পেলেই হয়ে যেতে চায় হাতছাড়া। হতচ্ছাড়া শরীরকে বসে রাখার জন্যেই শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খানিকটা দৌড়ে বেড়ালেন সাকিব আল হাসান। দীর্ঘ একটা বিরতিতে ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে কাটিয়েছেন অবসর সময়। শরীরটাকে অন্তত ম্যাচের জন্যে ফিটতো করা চাই।
তাইতো মেঘলা আকাশ দেখে খানিকটা আলসেমি আসলেও সাকিব ছিলেন উদ্দমী। তিনি আসলেন নিজের চিরচেনা প্রাঙ্গনটায়। এখানটায়ই আসলে সাকিবকে মানায়। সাকিব নিশ্চয়ই তো তা বোঝেন। সেটা হয়ত তিনি বোঝেন কিংবা বোঝেন না। সে এক ভিন্ন আলাপ। তবে সব আলাপ ছাপিয়ে তাঁকে এখন পালন করতে হবে গুরুদায়িত্ব।
বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলে দলনেতা এখন সাকিব আল হাসান। প্রত্যাশার চাপ খানিকটা থাকা স্বাভাবিক। থাকবেও সেটা। হোম অব ক্রিকেটের নিজেকে সে জন্যেই হয়ত প্রস্তুত করবার আপ্রাণ চেষ্টাটাই চালাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। ফিটনেস শেষে হয়ত ব্যাট-বলের অনুশীলনে দেখা যাবে সাকিবকে খুব শীঘ্রই আবার।
বাইরের দুনিয়ার সব ঝলমলে আলো যে কেবলই এক মরীচিকা। তবে কোটি ক্রিকেট ভক্তের ভালবাসায় সিক্ত সাকিব নিশ্চয়ই সে মরীচিকার পানে ছুটে বিলীন হয়ে যাবেন না। ক্রিকেট মাঠের সবুজ ঘাস আঁকড়ে সেখানটার সৌন্দর্যই বাড়াবেন নিশ্চয়ই।