বছর ছয়েক আগের স্যাঁতস্যাঁতে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমির নাকাল করে দিচ্ছেন ভারতের টপ অর্ডার। এমন সময় বিরাট কোহলি প্রবেশ করলেন। মোহাম্মদ আমিরকে নিজের টপ ফর্মের কিছু কভার ড্রাইভ মারলেন, আর তারপর আরেক পেসার ওয়াহাব রিয়াজকে বেধরক প্রহার করে ম্যাচের চাপটা সরিয়ে দিলেন এক ঝটকায়।
যদি এটা না হতো তাহলে কি হতো? কে বলতে পারে, হয়তো ঐ দিনের ভয়ংকর আমির আশি রানের লক্ষ্যমাত্রার আগেই থামিয়ে দিতো ভারতকে। ওই সময়ে, তার আগে বা পরেও – বিরাট কোহলি এই কাজের জন্য ভারতের তো বটেই, ক্রিকেট বিশ্বেরও বেতাজ বাদশাহ ছিলেন।
আজকের নাসিম শাহ বছর ছয়েক আগের আমিরের স্মৃতিখানা বয়ে আনলেন দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। নিজের বিষাক্ত লেট স্যুইংয়ে আছড়ে ফেললেন লোকেশ রাহুল-রোহিত শর্মাকে। বিরাট কোহলি প্রবেশ করলেন আবারও। এমন একটা সময়ে যখন ভারতবর্ষের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে পশলা পশলা বৃষ্টি ভিজিয়ে দিচ্ছে কালো পিচরাস্তা।
আপামর ভারতবাসীর মনে উঁকি দিচ্ছে অজানা ভয়,অগোচরে মনে পড়ে যাচ্ছে মোহাম্মদ আসিফ, জুনাইন খান কিংবা হাল আমলের আমির-শাহীন আফ্রিদির ওপেনিং স্পেলগুলো। বিরাট প্রবেশ করলেন। বছর ছয়েক আগের টপ ফর্মের ‘ক্যাপ্টেন’স ‘মোস্ট ট্রাস্টেড ডেপুটি’ বিরাট নয়, অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া নিজেকে নতুনভাবে খুঁজতে থাকা এক প্রাক্তন সম্রাট হয়ে বিরাট এলেন।
শ্রেষ্ঠত্বের ভগ্নাংশও শ্রেষ্ঠ হয়। প্রথমে কিছুটা এলোমেলো। কিছুটা থিতু হয়ে গিয়ে আবারও দুই একবার সেই পুরোনো ঝলকে ম্যাচ বের করতে থাকলেন। ম্যাচ বেরিয়েও গেলো, হার্দিক ফিনিশিং টাচ দিলেন, রবীন্দ্র জাদেজা হাত লাগালেন, আর ৩৪ বল খেলে পঁয়ত্রিশ রান করা বিরাট কোহলি হয়ে গেলেন সেই প্রকাণ্ড কাঠের সেতু যাতে ভর করে ভারত ম্যাচ উতরেছে বছরের পর বছর ধরে।
বিরাট কোহলি কখনও ফিরবেন, কিংবা আর কখনও হয়তো ফিরবেন না, কিন্তু ইনিংসের বাঁধন আলগা হলে বিরাটের শক্ত এমআরএফ হাতল ধরতে চাইবে বারবার। নিজের পক্ককেশ নিয়েও, নিজের ক্ষয়িষ্ণু ফর্ম নিয়েও, নিজের ছায়াকে নিয়েও। আলগা ব্যাটনের হাতল ধরা বহুচেনা বিরাটের এই ক্ষণিকের পুল-ফ্লিকগুলো ঘুপচি ঘরের জানালাভেদী এক চিলতে রোদ্দুরের মতো আজ খেলা করে গেলো অতীতের নানা রঙের দিনগুলির স্মৃতি নিয়ে।
মনে পড়িয়ে দিলো অজিতেশ বন্দ্যোর বুড়ো নায়ক রজনীকান্ত চাটুজ্জেকে, হাসতে হাসতে বুড়ো নায়ক প্রকাণ্ড সেতু হয়ে ‘ওথেলো’ আওড়ে চলে— ‘Life is a walking shadow’। মানে জীবন একটা জলজ্যান্ত ছায়া। জীবনেরই ছায়া। কোহলি একটা সময় জীবন ছিলেন, প্রাক্তন সম্রাট হয়ে তিনি এখন ছায়া বনেছেন।