রিজওয়ান-বিরাট হবেন মুশফিক, রিয়াদরা!

এশিয়া কাপে ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচটা খুব বেশি হাই স্কোরিং হয়নি। পাকিস্তান আগে ব্যাট করতে নেমে ১৪৭ রানেই অল আউট হয়েছে। আবার ভারতকেও সেই রান তাড়া করতে গিয়ে খেলতে হয় শেষ ওভার অবধি। তবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পুরোটাই উপভোগ করতে পেরেছেন দর্শকরা।

শেষ পর্যন্ত যেকোন দলই ম্যাচ জিততে পারতো। বিশেষ করে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ইনিংসটা একটু অন্যরকম হলে ম্যাচের ফলাফলও পাল্টে যেতে পারতো। রিজওয়ানের ইনিংসটা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্যও হতে পারে এক সতর্কবার্তা।

মোহাম্মদ রিজওয়ান পাকিস্তানের জন্য ম্যাচ উইনার ব্যাটসম্যান। তবে গতকালকের ম্যাচে কী রিজওয়ান সত্যিই ম্যাচ উইনার ছিলেন? নাকি তাঁর ইনিংসটাই পাকিস্তানকে একটু ব্যাকফুটে ফেলে দিল।

অথচ গতবছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে চিত্রটা ছিল একেবারেই উল্টো। ভারতের দেয়া ১৫২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচ শেষ করে এসেছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম মিলেই। সেদিন রিজওয়ানের ইনিংসটায় একটু ফিরে যাওয়া যাক। এই ওপেনার সেদিন ব্যাটিং করেছিলেন ১৪৩.৬৩ স্ট্রাইক রেটে। মাত্র ৫৫ বল খেলে করেছিলেন ৭৯ রান। ফলে পাকিস্তানের উপর কোন চাপই আসতে দেননি তিনি।

তবে গতকাল ম্যাচে রিজওয়ানের ব্যাটের সেই ধার দেখা যায়নি। কালও অবশ্য তিনি রান করেছেন। এমনকি দুই দল মিলিয়ে পুরো ম্যাচেরই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৪৩ রান। ফলে শুধু এই সংখ্যাটা দেখলে মনে হতে পারে রিজওয়ান তো ভালোই খেলেছেন।

কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রান করলেই যে তা দলের কাজে আসবে এমন নয়। অনেক সময় সেই রান দলের জন্য বোঝাও হতে পারে। যেমনটা হয়েছে গতকাল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। কেননা এই ৪৩ রান করতে গিয়ে রিজওয়ান খেলে ফেলেছিলেন ৪২ টি বল। তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ১০২.৩৮। একজন ওপেনারের কাছ থেকে এমন ধীর গতির ইনিংস আসার পর সেটা আর কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারেনি পাকিস্তান। সেই শঙ্কায় ছিল ভারতও। কারণ, বিরাট কোহলির ৩৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংসটায় একটু একুটু করে ম্যাচের লাগাম বের হয়ে যাচ্ছিল প্রায়।

শেষের ব্যাটাররা হাত খুলে খেললেও রান ১৫০ ও ছুঁতে পারেনি পাকিস্তান। ফলে পাকিস্তানের বোলাররা অনেক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতাতে পারেননি। দিনটিকে একেবারে নিজের করে নিয়েছেন হার্দিক পান্ডেয়া।

ওদিকে এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আগামীকাল মাঠে নামতে চলেছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের যাত্রা। আর এই ম্যাচের আগে রিজওয়ানের এই ইনিংস থেকে শিক্ষা নিতে পারেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। কেননা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই রোগে সবচেয়ে বেশি ভোগে বাংলাদেশই।

প্রায় প্রতি ম্যাচেই বাংলাদেশের কোন না কোন ব্যাটসম্যান এমন ধীর গতির ইনিংস খেলেন। ফলে বাংলাদেশের আর বড় স্কোর করা হয় না। টি-টোয়েন্টি সুলভ ক্রিকেটও খেলা হয়না। নতুন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিশ্চয়ই এই বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইবেন।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে এমন মন্থর ইনিংস খেলা ব্যাটারের সংখ্যাই যেন বেশি। ওপেনিং পজিশনে নাঈম শেখ এই কাজটা করেছেন সবচেয়ে বেশি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ১০০ এর আশেপাশে। ফলে বাংলাদেশ পাওয়ার প্লের ব্যবহার করতে পারেনি কখনোই।

আবার মিডল অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমরাও এমন ধীরগতির ইনিংস খেলেন হরহামেশাই। ফলে তাঁদের ব্যাট থেকে রান আসলেও দলের জয়ের সম্ভাবনা কমে যায়। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন নতুন করে শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে সবার আগে এই বৃত্তটাই ভাঙা উচিৎ। হতে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রিজওয়ান, এশিয়া কাপের নয়।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link