তখন দলের বেহাল দশা। ছয়ের দেখা পাওয়া দূরের কথা, উইকেট টিকিয়ে রাখাই তো দায়। আফগানের দুই স্পিনার মুজিব উর রহমান ও রশিদ খান তো রীতিমত চালিয়েছেন তাণ্ডব। বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের কোমর ততক্ষণে ভেঙে-চুরে চুরমার। তবুও একটা ছেলে খানিক সাহস দেখাল। তুলে মারলেন আরেক স্পিনার মোহাম্মদ নবির বল। লং অফ বরাবর সেই বল উড়ে যাচ্ছে আকাশ পানে।
একি, সে বল তো মাঠ ছাড়া হল না! আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের হাতে। তিনি ভারসাম্য রাখতে সেটা আবার ছুঁড়ে দিলেন মাঠের ভেতর। সে বল লুফে নিল রশিদ। যাহ! মোসাদ্দেক তবে আউট? খালি চোখে আম্পায়ার সে সিদ্ধান্তই জানালেন। তবে নিশ্চিত হতে চলে গেলেন তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে। সেখানে খানিক পর্যালোচনা শেষে জানা গেল ওমরজাইয়ের পা লেগেছিল সীমানা দড়িতে। বেঁচে গেলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
বেঁচে গিয়ে বরং দলকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেলেন। হ্যাঁ, মোসাদ্দেকের হাত ধরে টাইগার ক্রিকেট পায় একটা লড়াকু সংগ্রহ। ১২৭ রানের ছোট্ট পুঁজি। তবে মোসাদ্দেক সে যাত্রায় আউট হয়ে গেলে এই রানটুকু হত কি না সে প্রশ্ন থেকেই যায়। প্যারালাল কোন বিশ্ব থেকে থাকলে সেখানে নিশ্চয়ই বিপরীত চিত্রনাট্যের মঞ্চায়ন হয়েছে। তবে সে যাকগে। আজ আলোচনার বিষয় মোসাদ্দেক।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবহেলিত খেলোয়াড়দের মধ্যে মোসাদ্দেক অন্যতম। তবে সে অবহেলার কারণ রয়েছে। তিনি নিজেই সে কারণ। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। নানা রকম কথা ভেসে আসে সময়ে সময়ে। তবে তা ভিন্ন আলাপ। মোসাদ্দেক খেলার মাঠে সর্বদাই যেন নিজের সেরাটাই দেওয়াতে বদ্ধপরিকর। প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটটা ভাল খেলেন। অধিনায়ক হয়ে শিরোপাও জেতেন। তবে টেস্ট দলে নিয়মিত হতে পারেন না। সে কারণ বোধহয় ঐ যে শৃঙ্খলা।
সেই উশৃঙ্খল জীবন থেকে খানিকটা দূরে সরে এসেছেন হয়ত তিনি। তাইতো আবারও মিলছে সুযোগ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়াবার। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট অথবা বলে দলের আস্থাভাজন হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন তিনি। এই যে কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্ষুদ্র সংস্করণে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার নিলেন। এবার তো এশিয়া কাপের মঞ্চে কঠিন পরিস্থিতিতে বুঝিয়ে দিলেন ভরসা করা যায় তাঁর উপর।
আরব আমিরাতে আফগানিস্তানের মুখোমুখি টাইগাররা। দুই লেগির ধ্বংসযজ্ঞ শেষে খাঁদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুলেছেন। লড়াই করবার মত রান তুলে দিয়েছেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৩১ বলে ৪৮। এই ৪৮ রানের মাহাত্ম্য বলে অন্তত বোঝানো সম্ভব নয়। তিনি একটা প্রান্ত থেকে ব্যাট চালিয়ে রান তুলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব। অথচ নাবির উইকেটের পরিণত হতে পারতেন তিনি দুই রানে।
বাংলাদেশ ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটা তিনিই হাঁকিয়েছেন। এরপর আবার সময় সুযোগ বুঝে চারখানা বাউন্ডারিও মেরেছেন। দলের প্রয়োজনে তিনি একেবারে শেষ অবধি খেলেছেন। তবে শেষ দিকে নিজের হাফ সেঞ্চুরিটা পূরণ করতে পারেননি। আরব আমিরাতের তপ্ত গরমে নাভিশ্বাস উঠে যাওয়ার মত অবস্থা। তবুও সে গরমকে তুচ্ছ করে মোসাদ্দেক ব্যাটিং করেছেন। আফগানদের বিপক্ষে তাঁর এই ইনিংসটা নিঃসন্দেহে তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম এক সেরা ইনিংস হয়েই থাকবে।
তাছাড়া এই ইনিংসে মোসাদ্দেক একটা দাবি জানিয়ে গেলেন। আরও বেশি সুযোগ তিনি পেতেই পারেন। তিনি হয়ত সুযোগ পেলে নিজের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের আগামী দিনের আস্থার স্তম্ভ হবেন। সাথে তিনি যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, ব্যাটিংটা এভাবেই করা উচিৎ টি-টোয়েন্টিতে!