ভোরের সূর্য দেয়নি সঠিক বার্তা

সকালের সূর্যটা দেখে নাকি গোটা দিনের একটা আন্দাজ পাওয়া যায়। তবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ক্ষেত্রে হয়ত এই কথা ধোপে টেকে না। একটা নিদারুণ বাজে মৌসুম কাটিয়েছে দলটি। গেল মৌসুমে বলার মত এক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর প্রত্যাবর্তন ছাড়া আর তেমন কিছুই যে নেই রেড ডেভিলদের।

শিরোপার লড়াইটা তো করতে পারছে তা তো এক লম্বা সময় ধরে। তবে গেল মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে তাঁদের ছিল যাচ্ছে তাই অবস্থা। কোন রকমে পঞ্চম পজিশনে থেকে শেষ করেছে গত মৌসুম। তাতে যা হয়েছে তা তো সবারই জানা। ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চে অংশই নিতে পারছে না ইংলিশ ক্লাবটি।

তবে সেখানটায় তো থেমে থাকা যাবে না। রেড ডেভিলদের ইতিহাসে তো থেমে থাকা লেখাই নেই। ১৯৫৮ সালে মিউনিখ ডিজাস্টারের পরও তো ক্লাবটি ঘুরে দাড়িয়েছিল। ক্লাবের বেশ কিছু খেলোয়াড়ের মৃত্যু শোক কাটিয়ে আবারও তাঁরা লড়াই করতে শুরু করেছিল। ২০২১-২২ মৌসুম তো কেবলই এক বাজে সময়। এটা কাটিয়ে ওঠা তো আর তেমন কঠিন কোন বিষয় নয়।

তবে সে কাটিয়ে ওঠার প্রক্রিয়াতে সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল সর্বাধিক। সে ধারাবাহিকতায় ডাচ ক্লাব আয়াক্স থেকে উড়িয়ে আনা হয় এই সময়ের অন্যতম ট্যাকটিকালি সমৃদ্ধ কোচ এরিক টেন হ্যাগকে। তিনি এসেই রাতারাতি সব পরিবর্তন করে ফেলবে এমনটা ভাবা নিশ্চয়ই ছিল ভুল। তবুও ম্যানচেস্টার ইউনাটেড সমর্থকরা একটা পরিবর্তনের প্রত্যাশা তো নিশ্চয়ই করেছিলেন।

তবে ঐ যে মানুষ যা ভাবে, তা কি আর হয়! হয় না বলেই হয়ত ইউনাটেডের প্রিমিয়ার লিগের শুরুটা হয়েছে কোনরকম। ভালর ছিটে ফোঁটাও যেন ছিল না তাতে। যেখানে প্রতিদ্বন্দী আর্সেনালের শুরু টানা পাঁচ জয় দিয়ে। শহর প্রতিদ্বন্দী ম্যানচেস্টার সিটিও ততক্ষণে দেখেনি কোন হার। সবাইকে চমকে দিয়ে ব্রাইটনের যাত্রাটাও হয়েছে রেড ডেভিলদের চোখের বালি।

আর অন্যদিকে লিগ শুরুর প্রথম দুই ম্যাচেই হার দিয়ে শুরু ইউনাইটেডের। পয়েন্ট টেবিলের তলাতি থেকে শুরু করা দলটা মানসিকতা ঠিক কতটা দুমড়ে-মুচড়ে যায়, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ক্লাবটা যে ম্যানচেস্টার ইউনাটেড, আর ডাগ আউটে এরিক টেন হ্যাগ। দু’টো ক্ষেত্রেই অদম্য কথাটার ব্যবহার করাটাই যেন সমীচিন।

বেশকিছু নতুন খেলোয়াড় তিনি দলে ভিড়িয়েছেন। তবে মূলত আয়াক্সের দল থেকেই তিনি খেলোয়াড়দের প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। রক্ষণে এনেছেন আর্জেন্টাইন লিসান্দ্র মার্টিনেজকে আর আক্রমণে এনেছেন অ্যান্টোনিওকে। তাতেই ক্ষান্ত হননি। হঠাৎ করেই তিনি রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যমাঠের দেয়াল ক্যাসেমিরোকেও উড়িয়ে নিয়ে আসেন স্পেন থেকে ইংল্যান্ডে। সেই সাথে এরিকসনের মত মধ্যমাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার মত খেলোয়াড়দেরও দলে ভেড়ান।

আর দলকে বুঝতে শুরু করেন। দলের জন্যে ঠিক কোন নীতিটা কার্য্যকর হবে সেটাই যেন খুঁজে বের করলেন। এরিক টেন হ্যাগ বেশ ধূর্ত একজন কোচ হিসেবে। তিনি খুব দ্রুতই প্রতিপক্ষের যেকোন ফন্দি-ফিকির আন্দাজ করে ফেলতে পারেন। আর সেই অনুযায়ী দলকে খেলিয়েও থাকেন এই ‘ডাচম্যান’।

প্রথমে তিনি দলের ভেতর একটা ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেন। এরপর তিনি ক্রমশ দলকে বানিয়ে তোলেন অপ্রতিরোধ্য। লিগ শুরুর প্রথম দুই ম্যাচে হেরেও, গেল চার ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাটেড রয়েছে অপরাজিত। তাঁর থেকেও বড় বিষয় রেড ডেভিলরা হারিয়েছে লিভারপুলকে। ইনজুরি জর্জরিত লিভারপুলকে হারানোতে যদিও বেগ পোহাতে হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড খেলোয়াড়দের। তবুও জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে।

অন্যদিকে মিকেল আর্তেতার উড়তে থাকা আর্সেনালকেও যেন মাটিতে নামিয়ে বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে টেন হ্যাগের শীর্ষ্যরা। এই মৌসুমে এখন অবধি টেন হ্যাগের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হয়ত মার্কাস র‍্যাশফোর্ডের ফর্মে ফেরা। ইংলিশ এই স্ট্রাইকার ফর্মে থাকলেই হয়ত শেষটা নিজের মত করেই রাঙিয়ে নিতে পারবেন এরিক টেন হ্যাগ। আর সেই সাথে ইউনাটেড ভক্তদের আক্ষেপ-আফসোসের দিন ঘুচে যাবে।

তবে এসব কিছুর উত্তর সময় দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link