একটি ট্যাটু আর ১৪ বছরের অপেক্ষা

গল্পটা যেন সত্যিকারের ‘বাপ কা বেটা’র। গল্পের চরিত্র দু’জন – অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কোচ ডিয়েগো সিমিওনে ও তাঁর পুত্র জিওভানি সিমিওনে। যদিও, এই গল্পের নায়ক হলেন ‘বেটা’ মানে জিওভানি সিমিওনে।

জিওভানি বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পুত্রও আছেন ফুটবলের সাথেই। বাবা বিশ্বসেরা কোচদের একজন, আর পুত্র পুরোদস্তুর ফুটবলার। বর্তমানে খেলছেন ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির হয়ে। আগের রাতেই ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে অভিষেকে লিভারপুলের বিপক্ষে করেছেন গোল।

আর গোল করার পরেই কান্নায় ফেঁটে পড়েন জিওভানি সিমিওনে। ক্যামেরায় ধরা পড়ে, হাতের উপর আঁকা একটি ট্যাটুকে চুম্বন করার পরই আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি।

কী ছিল সেই ট্যাটুতে? – তেমন কিছু না, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের লোগো। এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার জন্য আশৈশব স্বপ্ন লালন করেছেন জিওভানি সিমিওনে। অবশেষে সেই আপেক্ষার অবসান। একই সাথে ১৪ বছর আগে নিজের সাথে করা প্রতিজ্ঞাও পূরণ  করলেন তিনি।

একবার নিজের হাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের লোগোযুক্ত একটি ট্যাটু করান জিওভানি সিমিওনে। তখন তাঁর বয়স কেবল ১৩। সেই ট্যাটু দেখে বাবা ডিয়েগো সিমিওনে খুব রেগে গেলেন। এত ছোট বয়সে হাতে ট্যাটু করানোর দরকার কি?

জুনিয়র সিমিওনে তখন উত্তরে বলেছিলেন, ‘একদিন আমি চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলব। আর কখনো যদি আমি সেখানে গোল পাই তাহলে এই ট্যাটুতে আমি চুমু খাবো।’

দীর্ঘ ১৪ বছর পর জিওভানি সিমিওনে তাঁর স্বপ্নের মঞ্চে উপস্থিত হলেন। ম্যাচের ৪১ মিনিটে ভিক্টর অসিমহেনের ইনজুরিতে বদলি হয়ে মাঠে নামলেন। মাঠে নেমেই ৩ মিনিটের মাথায় পেলেন নিজের প্রথম ইউসিএল গোলের দেখা। স্বপ্নিল দিনে নিজের করা প্রতিজ্ঞা পূরণের এ যেন আরেক মঞ্চায়ন। গোল করার সাথে সাথেই জিওভানি সিমিওনে তাঁর ১৪ বছর আগে করা সেই ট্যাটুতে চুমু খান।

বাবা ডিয়েগো সিমিওনে কোচ হওয়ার আগে নিজেও ছিলেন ফুটবলার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল তিনিও করেছেন। ইউসিএলে করা তাঁর প্রথম গোল করার ২৫ বছর ৩৬১ দিন পর গোল করলেন তাঁরই পুত্র জিওভানি সিমিওনে। পুত্রের সে গোলের দৃশ্য হয়তো বাবা দেখেননি। কারণ সে সময়ে তিনি অ্যাটলেটিকোর ডাগ আউটে বসে আরেকটি  চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচের সাক্ষী হয়েছেন। পুত্রের এমন স্বপ্নপূরণের দিনে বাবা নিজেও অবশ্য হেসেছেন।

তাঁর দল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ২-১ গোলে হারিয়েছে এফসি পোর্তোকে। তবে দিনশেষে পুত্রের গোলের খবর তাকে হয়তো বাড়তি উচ্ছ্বাসই দিয়েছে। ওই যে, শুরুতেই যে বলা হল গল্পের নায়ক আজ জিওভানি। তাকে ঘিরেই সকল আয়োজন।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link