কোহলি বনাম পন্টিং: ব্যাটল অব থ্রোন্স

সময়ের হিসেবে প্রায় তিন বছর। আরো নিখুঁত হিসেব করলে ১০২১ দিন অপেক্ষার পর ক্যারিয়ারের ৭১ তম শতরানের দেখা পেলেন বিরাট কোহলি। রাজকীয় স্টাইলেই সেঞ্চুরি খরা ঘুচালেন বিরাট, আফগানিস্তানের বিপক্ষের সেঞ্চুরিই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার প্রথম সেঞ্চুরি।

সেঞ্চুরি না থাকলেও রান করা থেকে কিন্তু থেমে থাকেননি কোহলি। রান করে গেছেন নিয়মিতই, কিন্তু তাতে সমালোচকদের চুপ করানো যায়নি। অনেকে তো তার ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন, আর কখনো ফর্মে ফিরবেন না এমন ভবিষ্যতবাণীও করেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু সবাইকে চুপ করিয়ে কোহলি ফিরলেন রাজার বেশেই। আধুনিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের পর কোহলিই কি সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান? 

পরিসংখ্যান কখনোই খেলোয়াড়ের শ্রেষ্ঠত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারে না। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় কখনো কখনো ত্রিশ রানের ইনিংসও হার মানায় শতরানকে। কিন্তু তাই বলে পরিসংখ্যানকে একেবারে বাদ দেয়া সম্ভব না, শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে পরিসংখ্যান এক গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি।

শচীনের পর শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে কোহলির কাছাকাছি যিনি থাকতে পারেন তিনি হলেন সাবেক অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক ছিলেন নিজের সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় শচীনের সাথে পাল্লা দিয়ে রান করে গেছেন। আসুন ৭১ সেঞ্চুরি শেষে তাদের দুজনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।

৭১ সেঞ্চুরি করতে পন্টিংকে যেখানে খেলতে হয়েছিল ৬৫১ ইনিংস, সেখানে প্রায় তিন বছর সেঞ্চুরি না করা সত্ত্বেও কোহলির লেগেছে ৫২২ ইনিংস। যা কিনা পন্টিং এর তুলনায় প্রায় ১২৯ ইনিংস কম। অবশ্য ম্যাচ বেশি খেলার সুবাদে রান সংখ্যায় এগিয়ে গেছেন অজি কাপ্তান পন্টিং, ২৭২৮৭ রান করে কোহলির চেয়ে এগিয়ে আছেন প্রায় তিন হাজার রানে। তবে এই এগিয়ে থাকাটা কতদিন উপভোগ করতে পারেন পন্টিং সেটাই দেখার বিষয়।

কোহলি যে গতিতে ছুটছেন তাতে করে পন্টিংকে পেছনে ফেলতে বছর দুয়েকের বেশি লাগার কথা নয়। অনুমিতভাবেই কোহলির গড় পন্টিং এর চাইতে অনেক বেশি। পান্টার যেখানে রান করেছেন ৪৭ ছুঁইছুঁই গড়ে, সেখানে অফফর্মের কোহলির গড়ও কখনো বেশিদিন পঞ্চাশের নিচে থাকেনি। ফিফটি করার দিক থেকে অবশ্য পন্টিং বেশ এগিয়ে। তার ১৪৫ ফিফটির বিপরীতে কোহলির পঞ্চাশোর্ধব ইনিংসের সংখ্যা ১২৪। তবে এখানেও ম্যাচ বেশি খেলার একটা সুবিধা পেয়েছেন পান্টার সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

সাদাচোখে কেবল উপরের পরিসংখ্যান খেয়াল করলে আপনার মনে হতেই পারে কোহলি পন্টিং এর চাইতে যোজন যোজন এগিয়ে। কিন্তু খেলাটা যখন ক্রিকেট, তখন কেবল পরিসংখ্যানে ভরসা রাখলে চলে না। দুজন ক্রিকেট খেলেছেন দুটো ভিন্ন সময়ে। পন্টিংয়ের ক্যারিয়ারের শেষের দিকে কোহলির ক্যারিয়ারের উত্থান। ২০১১ বিশ্বকাপ দিয়ে ইতি টানলেন পান্টার, আর সেই বিশ্বকাপই জন্ম দিল নতুন এক তারকার, কোহলির।

দুটো ভিন্ন সময়ের দুই তারকার মাঝে তাই তুলনা করাটা ভীষণ দুরূহ। সময়ের সাথে সাথে ক্রিকেট বদলেছে প্রতিনিয়ত। আড়াইশোকে আগে যেখানে নিরাপদ স্কোর ভাবা হতো, সেখানে এখন ৩৫০ রান করেও ম্যাচ জিততে পারছে না দলগুলো। ভারী ব্যাট, পাটা পিচ, ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশন এসব যে বর্তমানের ব্যাটারদের পক্ষেই কাজ করছে সেটা বলাই বাহুল্য। তবুও তাতে কিন্তু কোহলির রানের মাহাত্ন্য বিন্দুমাত্র কমছে না।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে কোহলির ব্যাটিং দেখে সবাই ফিরে গিয়েছিলেন সেই ২০১৬ সালে। যখন কোহলি ব্যাটিং এ নামলেই সবাই ধরে নিতো সেঞ্চুরি হচ্ছে। যে গতিতে এগোচ্ছেন, ফর্মটা আগামী বছর দুয়েক ধরে রাখতে পারলে রেকর্ডবুকটা যে অনেকবার উল্টেপাল্টে লিখতে হবে তাতে বোধহয় কারোরই সন্দেহ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link