এমনিতে ভারতের পর শ্রীলঙ্কাই এশিয়া কাপের সবচেয়ে সফল দল। এখন অবধি পাঁচবার এই আসরের শিরোপা জিতেছে শ্রীলঙ্কা দল। সেই তুলনায়, পাকিস্তানকে নেহায়েৎই সাধারণ গোছের একটা দল বলা উচিৎ, কারণ মাত্র দু’বার এই মহাদেশীয় আসরের শিরোপা জিতেছে তাঁরা। ফলে, এবারের এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে আসলে শ্রীলঙ্কারই স্পষ্টত এগিয়ে থাকার কথা। পাকিস্তানকে নিয়ে তো এখানে কোনো আলোচনারই সুযোগ থাকার কথা না।
কিন্তু, বাস্তবতা একটু ভিন্ন। কারণ, এই এশিয়া কাপ শুরুর আগেও শ্রীলঙ্কা দলটা ছিল শিরোপার আলোচনা থেকে যোজন যোজন দূরে। ফাইনাল তো দূরের কথা, সুপার ফোরেও দলটা যেতে পারবে কি না – সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার মত লোকের অভাব ছিল না।
যেন ১৯৯৬ সালের সেই বিশ্বকাপটার মত। সেবারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা দলটাকে নিয়ে বিশ্বকাপের আগে কোনো আলোচনাও ছিল না। দলটা যে বিশ্বকাপ জিতে ফেলতে পারে – এমন বিশ্বাস কারো মধ্যেই তেমন একটা ছিল না। এমনকি, লাহোরের ফাইনালে মাঠে নামার আগেও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশ পিছিয়েই ছিল শ্রীলঙ্কা।
কিন্তু, এর পরে যা হয় তাঁর পুরোটাই তো ইতিহাস। অর্জুনা রানাতুঙ্গা আর ডি সিলভাদের দাপটে প্রথমবারের মত ৫০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্ব শিরোপা জিতে নেয় লঙ্কান দল। এরপর রাতারাতিই শ্রীলঙ্কা দলের বৈশ্বিক ইমেজটা পাল্টে যেতে শুরু করে।
এবারের অবস্থাটাও কি তেমনই নয়? আন্ডারডগ শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে কোনো আলোচনাই ছিল না। বরং, আফগানিস্তানের সম্ভাবনাও কেউ কেউ শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশি দেখছিল। কিন্তু, টুর্নামেন্টের একদম প্রথম ম্যাচে হোঁচট খাওয়ার পর যেন আমূল বদলে গেল শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশকে হারিয়ে ছন্দে ফেরার শুরু শ্রীলঙ্কা’র। এরপর সুপার ফোরে সেই আফগানদের প্রথম ম্যাচেই হারিয়ে তাঁরা প্রতিশোধ নিয়েছে। এরপর একে একে হারিয়েছে ভারত ও পাকিস্তানকে। এখন তাই ফাইনালেও তাঁর সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এশিয়া কাপে এটা পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চতুর্থ ফাইনাল। এখানে পরিসংখ্যানে এগিয়ে শ্রীলঙ্কাই। আগের তিন ফাইনালে দু’বার জিতেছে তাঁরা। ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় আসরে পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জেতে লঙ্কানরা।
২০০০ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ৩৯ রানে পরাজিত করে পাকিস্তানও তাদের প্রথম এশিয়া কাপ জয়ের স্বাদ নেয়। এরপর সর্বশেষ ফাইনাল মোকাবেলায় ২০১৪ সালে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে উড়িয়ে পঞ্চম শিরোপার দেখা পায় শ্রীলঙ্কা। এরপরের দু’টি আসরের কোনোটিতেই ফাইনালে যেতে পারেনি দু’দলের কোনোটা।
পরিসংখ্যান দেখে শ্রীলঙ্কা যেমন আশাবাদী হতে পারে, তেমনি মাতৃভূমির সাম্প্রতিক ভঙ্গুর দশা দেখেও অনুপ্রাণিত হতে পারে। সামাজিক-রাজনৈতিক হতাশা, কারফিউ, আন্দোলন, পাওয়ার কাট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার বোঝা মাথায় নিয়ে সবশেষে দেশটি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হলো।
শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের জন্য যে এই সময়টা কতটা কঠিন তা বলাই বাহুল্য। এই কঠিন সময়ে একটু হলেও মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারে বাইশ গজের সাফল্য। লঙ্কান দলও নিশ্চয়ই সেই হাসির সন্ধানই করছে।
অবশ্য যা করেছে শ্রীলঙ্কা এই আসরে, তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে উপায় নেই। কিন্তু, ইতিহাস বলে শ্রীলঙ্কানরা অল্পে সন্তুষ্ট হবার পাত্র নন। ১৯৯৬ সালে যেমন অর্জুনা রানাতুঙ্গা হননি, ২০২২ সালে এসে দাসুন শানাকারও হওয়ার কথা নয়।