পাকিস্তানের জন্য সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গিয়েছে। সেই সাথে এবারের বৃষ্টি মৌসুমে দেখা দিয়েছে বন্যা। দেশের এক-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ বন্যায় বাড়িঘর হারিয়েছে লক্ষ লক্ষ পাকিস্তানি।
তবে দেশের অবস্থা নাজুক হলেও, ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে পাকিস্তান দল স্বজাতির জন্য বারবার নিয়ে আসছে উদযাপনের উপলক্ষ। চলমান এশিয়া কাপের ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে বাবর আজমের দল। দশ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিজেদের করে নেয়াই এখন তাদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এশিয়া কাপে শুরুটা অবশ্য ভাল হয়নি পাকিস্তানের। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে হেরেছে তারা; তবে এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। হংকংকে উড়িয়ে দিয়ে জায়গা করে নেয় সুপার ফোরে। এই রাউন্ডে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে গ্রুপ পর্বের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয় রিজওয়ান, শাদাবরা।
উত্তেজনার বারুদে ঠাঁসা আরেক ম্যাচে আফগানিস্তানকেও হতাশা উপহার দেয় পাকিস্তান। শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ম্যাচ জেতার পাশাপাশি সেদিন এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল তারা। এর আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালে এই মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছিল পাকিস্তান।
শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের শেষ লড়াইয়ে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে নামবে শ্রীলঙ্কা। যদিও সুপার ফোর রাউন্ডের শেষ ম্যাচে দুই দল-ই মুখোমুখি হয়েছিল। গুরুত্বহীন এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা আধিপত্য বজায় রেখেই জিতেছে। কিন্তু এখনই তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার সুযোগ নেই। কেননা সে ম্যাচে বিশ্রামে ছিলেন দুই ইনফর্ম ক্রিকেটার শাদাব খান এবং নাসিম শাহ।
তাই ফাইনালে এই দুইজনের ফেরাটা নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানের শক্তিমত্তা বহুগুণে বাড়িয়ে তুলবে। বিশেষ করে নাসিম শাহ আছেন সেরা ছন্দে। ১৯ বছর বয়সী এই পেসার বলতে গেলে এখন পাকিস্তানের পেস ইউনিটকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইনজুরির কারণে ছিটকে যাওয়া শাহিন শাহ আফ্রিদির অনুপস্থিতি বুঝতেই দিচ্ছেন না এই তরুণ।
শুধু বোলিং নয়, ব্যাট হাতেও নাসিম শাহ পাকিস্তানকে এনে দিয়েছেন শ্বাসরুদ্ধকর জয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওভারে পরপর দুই ছয় হাঁকিয়ে জয় তুলে নিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া হারিস রউফ, মোহাম্মদ হাসনাইনরাও অধিনায়কের আস্থা অর্জন করেছেন।
স্পিন বিভাগে পাকিস্তানের বড় নাম নিঃসন্দেহে শাদাব খান। এই লেগ স্পিনার পুরো এশিয়া কাপেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রথম ম্যাচ থেকেই প্রতিপক্ষের রান আটকানো, উইকেট তুলে নেয়ার মত কাজ গুলোতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। শাদাবের সাথে আছেন মোহাম্মদ নওয়াজ। এই বাঁ-হাতি অর্থোডক্স স্পিনার বাবর আজমের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। পাওয়ার প্লে, মিডল অর্ডার এমনকি ডেথ ওভারেও নওয়াজকে ব্যবহার করা যায়।
পাকিস্তানের জন্য চিন্তার কারণ অবশ্য তাদের ব্যাটিং। অধিনায়ক বাবর আজম রয়েছেন অফ ফর্মে, টানা ব্যর্থতায় আছেন ফখর জামানও। একমাত্র মোহাম্মদ রিজওয়ান ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রান করছেন। পাঁচ ম্যাচে এই উইকেট কিপার করেছেন ২২৬ রান। তাছাড়া খুশদিল শাহ, ইফতেখার আহমেদ কেউই এখন পর্যন্ত ভরসাযোগ্য হয়ে উঠতে পারেননি।
তবে কোচ সাকলায়েন মুশতাক নিজের শিষ্যদের উপর পূর্ণ ভরসা করছেন। তাঁর বিশ্বাস ফাইনালে বাবর আজমদের ব্যাটে রান আসবেই। এই কিংবদন্তি বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে আমরা লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছি এবং ভালভাবেই ব্যাট করেছি। সবকিছু ঠিক আছে এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী।’
লঙ্কানদের বিপক্ষে পরাজয় পাকিস্তানের উপর কিছুটা হলেও চাপ সৃষ্টি করেছে। ওই একটা ম্যাচ বাদ দিলে এখন পর্যন্ত ফাইনালে পাকিস্তানই ফেবারিট। কিন্তু তারা এই ম্যাচের ফলাফল নিয়ে না ভেবে বরং এখান থেকে শিক্ষা নিবে বলে মনে করছেন সাকলায়েন মুশতাক। ড্রেসিংরুমে ভুলগুলো নিয়ে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ফাইনালের মহাযুদ্ধে আত্মবিশ্বাসী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামবে ভুলত্রুটি শুধরানো পাকিস্তান। শেষ হাসি কে হাসবে, কে জিতবে শিরোপা; শ্রীলঙ্কার ষষ্ঠ নাকি পাকিস্তানের তৃতীয় – উত্তর জানতে আর বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না ক্রিকেটপ্রেমীদের।