বাবর-রিজওয়ান ও টি-টোয়েন্টির ইমপ্যাক্ট

‘ছয় থেকে সাতজন খেলোয়াড় ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারলে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতবে। ১৭ বা ১৮ বলে ৩০ বা ২৫ রান করতে পারা আমার কাছে ইমপ্যাক্ট। একটি ছোট্ট উদাহরণ হতে পারে, মাহমুদউল্লাহ (রিয়াদ) আউট হওয়ার পর (ওয়ানিন্দু) হাসারাঙ্গার বলে মোসাদ্দেক (হোসেন সৈকত) যেভাবে খেলেছে সেটাই হলো ইমপ্যাক্ট। একটি দলে পারফর্মার থাকার পরও ম্যাচ হারতে পারে। তবে আমরা যদি ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারি, তাহলে বেশি ম্যাচ জেতার সুযোগ থাকবে।’

– বক্তা শ্রীধরন শ্রীরাম, বাংলাদেশের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট। মোদ্দা কথা হল পারফর্ম করাই টি-টোয়েন্টিতে জয়ের নিশ্চয়তা নয়। সেই পারফরম্যান্সটা ম্যাচের পরিস্থিতির সাথে মানানসই হলেই কেবল জয় আসবে। কথাটা চাইলে পাকিস্তানের দুই ওপেনারের ক্ষেত্রেও খাটে।

পাকিস্তানের দুই ওপেনার বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান দুজনেই দেদারসে রান করছেন। কিন্তু ভাবনার বিষয় হচ্ছে তাদের রানগুলো যতটা না দলের প্রয়োজনে আসছে, তার চেয়ে বেশি ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানে যোগ হচ্ছে। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে রান করতে পারছেন না, ফলে পাকিস্তান থেকে যাচ্ছে পরাজিতের দলেই। পাকিস্তানের সাবেক পেসার এবং কোচ আকিব জাভেদও প্রশ্ন তুলেছেন এই দুই ব্যাটারের রান করার ধরণ নিয়ে। তাছাড়া জোর করে অভিজ্ঞ শোয়েব মালিককে বাদ দেয়া এবং নিষ্প্রভ মিডল অর্ডার নিয়ে নির্বাচকদের উদাসীনতার সমালোচনা করেন এই পেসার। 

‘এই দুই ওপেনার আপনার কখনোই টুর্নামেন্ট জেতাবে না। তারা বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হতে পারে। কিন্তু তাদের ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝতে পারা উচিত। দলের সহঅধিনায়ক প্রায় ১৫ ওভার ব্যাট করলো এবং দলের আস্কিং রেট ৮ থেকে নিয়ে গেলো ১৭ তে! (এশিয়া কাপের ফাইনাল ইঙ্গিত করে)’, এভাবেই সংবাদমাধ্যমে নিজের রাগ প্রকাশ করেন আকিব জাভেদ। পাশাপাশি তিনি নির্বাচক, বোর্ড কর্মকতা এবং টিম ম্যানেজমেন্টের সমালোচনা করেন বেঞ্চের খেলোয়াড়দের সুযোগ না দেয়ার জন্য। 

গত পাঁচ বছর যাবৎ ঘুরে ফিরে ইফতেখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, আসিফ আলিদের খেলানোর সমালোচনা করেন এই পেসার। নিয়মিত ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও অন্যদের পর্যাপ্ত সুযোগ না দিয়ে এদেরকেই খেলানোর বদলে নতুন মুখদের সুযোগ দেয়ার কথা জানান আকিব জাভেদ। নতুন মুখ হিসেবে আগা সালমান, তায়্যিব তাহির, শান মাসুদদের নাম প্রস্তাব করেন তিনি, ‘শান মাসুদ ঘরোয়া ক্রিকেটে রীতিমতো রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে অথচ আপনি তাকে সুযোগই দিচ্ছেন না। তায়্যিব তাহির ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করে যাচ্ছে। আগা সালমান সাদা বলের ক্রিকেটে দলের জন্য কার্যকরী এক ক্রিকেটার হওয়ার সামর্থ্য রাখেন।’

এছাড়া দলে টেকনিক্যালি সলিড ব্যাটসম্যানদের খেলানোর দাবি জানান তিনি, ‘কেবল টেকনিক্যালি সলিড ব্যাটসম্যানরাই দলকে দীর্ঘদিন সার্ভিস দিতে পারবে। দুর্বল টেকনিক নিয়ে কখনোই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকতে পারবেন না। শ্রীলংকা তরুণদের নিয়ে দল গড়েছে। কিন্তু তাদের দলে সবাই টেকনিক্যালি কতটা ভালো, তারা প্রপার ক্রিকেটীয় শটে রান করছে।’

শোয়েব মালিকের টুইটের পর থেকেই তোলপাড় পাকিস্থানের ক্রিকেটাঙ্গন। পছন্দের ক্রিকেটার নিয়ে দল সাজানোর প্রতিবাদে টুইটের পর সরব হয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররাও। ইনজামাম উল হক তো জানিয়েছেন নির্বাচকদের উচিত শোয়েব মালিককে বিশ্বকাপের দলে নেয়া। এর আগে আকিব জাভেদও শোয়েব মালিককে দলে নেয়ার পক্ষে দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘আপনি বয়সের অজুহাতে কাউকে বাদ দিতেই পারেন। কিন্তু বাদ দেয়ার আগে আপনার দেখতে হবে ওই পজিশনের যোগ্য খেলোয়াড় আপনি তৈরি করতে পেরেছেন কিনা। আপনি জোর করে কাউকে সরালেন আর খেলাচ্ছেন কাকে? শোয়েব মালিকের স্থানে আসিফ আলী খেলবে? কিংবা ইফতেখার আর খুশদিল?’ 

পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারের সমস্যা নিয়েও কথা বলেন আকিব। ধীরগতির ব্যাটিংয়ের সমস্যা সমাধানে ফখর জামানকে ওপেনিং আর শান মাসুদকে তিনে খেলিয়ে রিজওয়ানকে চারে খেলানোর পক্ষপাতী এই সাবেক পেসার। 

তিনি বলেন, ‘ফখরকে তিনে খেলিয়ে তার ব্যাটিং ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। ফখরকে ওপেনিং এ খেলানো উচিত। তিনে শান মাসুদের সুযোগ পাওয়া উচিত। আপনি রিজওয়ানকে চারে নামান, সে মাঝের ওভারগুলোতে নিয়মিত স্ট্রাইক রোটেট করে খেলতে জানে। আর পাঁচে আগা সালমান অথচ তায়্যিব তাহিরের একজনের আসা উচিত।’

সাত নম্বরে খুশদিল, ইফতেখার আর আসিফের মাঝে যে কোনো একজনকে সুযোগ দেয়ার পক্ষে আকিব যেহেতু খুব বেশি বিকল্প তাদের হাতে নেই, ‘তারা খুব একটা ভালো না। ব্যাটিং জানে না। বর্তমান ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে আমরা কেবল ম্যাচ হারতেই থাকবো।’ – এভাবেই দল নিয়ে নিজের হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি। এখন দেখার বিষয় আকিবের পরামর্শগুলো কতটা আমলে পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link