আর্লিং হাল্যান্ড, অবারিত এক গোলমেশিন

আর্লিং ব্রট হাল্যান্ড। বেশ বড়সড় একটা নাম। শুধু নামেই নয়, ফুটবল মাঠেও প্রতিনিয়ত নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আগে থেকেই নামের পাশে 'গোলমেশিন' ট্যাগলাইন জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।

আর্লিং ব্রট হাল্যান্ড। বেশ বড়সড় একটা নাম। শুধু নামেই নয়, ফুটবল মাঠেও প্রতিনিয়ত নিজেকে  অনন্য এক  উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আগে থেকেই নামের পাশে ‘গোলমেশিন’ ট্যাগলাইন জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।

তবে, ম্যানচেস্টার সিটিতে এসে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ছিল অনেক প্রশ্ন। হাল্যান্ড সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন মাঠে। ম্যাচের পর পর ম্যাচ গোল করছেন। সে গোলক্ষুধা কমার আপাতত কোনো আভাসও মিলছে না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এর মধ্যেই করে ফেলেছেন ৬ ম্যাচে ১০ গোল।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও ২ ম্যাচে ৩ গোল করে আছেন শীর্ষে। এখন কথা হলো, কোথায় গিয়ে থামবেন হ্যালান্ড? মৌসুম শেষে হ্যালান্ডের পরিসংখ্যান কতটা রঙিন হবে? আপাতত সেসব প্রশ্নের সাপেক্ষেই বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। 

  • মেসির ৫০ গোল নাকি সালাহর ৩২ গোল, কোনটি টপকাতে পারেন হাল্যান্ড? 

হাল্যান্ড এর মধ্যে সিটির হয়ে ৬ ম্যাচেই করে ফেলেছেন ১০ গোল। অর্থাৎ প্রতি ম্যাচে ১.৬৭ গড়ে গোল করেছেন। এখনো প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ খেলতে পারবেন ৩২ টি। বাস্তবতার নিরিখকে এক পাশে রেখে যদি গাণিতিক হিসেবে যাই, হ্যালান্ড এই গড়ে গোল করতে পারলে এখনো ৫৩ টি গোল করতে পারবেন ইপিএলে। অর্থাৎ এক মৌসুমে তাঁর ৬৩ টি গোল করার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এটা প্রায় অবাস্তব একটি ব্যাপার। শুরুর গোল গড় দিয়ে তো আর পুরো মৌসুমের পরিসংখ্যান মেপে ফেলা যায় না। তাছাড়া এক মৌসুমে ৩৮ টির ৩৮ ম্যাচই নিশ্চয় খেলবেন না। এর মাঝে ইনজুরির কারণে ম্যাচ মিসও করতে পারেন। তাছাড়া, পুরো মৌসুম জুড়ে যে একই ফর্মে থাকবেন, সেটার নিশ্চয়তাও তো নেই। 

২০১১-১২ মৌসুমে মেসি লা লিগায় ৫০ গোল করেছিলেন। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে যেটি এখনো এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। এখন এ রেকর্ডকে অতিক্রম করতে হলে হ্যালান্ডকে পাড়ি দিতে হবে লম্বা এক পথ। এখনো করতে হবে ৪১ টি গোল। 

পরিসংখ্যান বলছে, ৩৮ ম্যাচের এক মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে করা সর্বোচ্চ ৩২ গোলের রেকর্ডটা মোহাম্মদ সালাহর। সে রেকর্ডটি টপকাতে হ্যালান্ডের প্রয়োজন ২৩ টি গোল। বর্তমানে যেভাবে তিনি খেলছেন তাতে এই রেকর্ড সহজেই ভেঙে যাওয়ার কথা। কিন্তু এক্সজি (এক্সপেক্টেড গোল) মডেল বলছে ভিন্ন কথা। হ্যালান্ড যেভাবে শট মারছেন বা যে রেঞ্জ থেকে তিনি শট নিচ্ছেন তাতে পুরো মৌসুমে তিনি ২৩ টি গোল করতে পারেন।

অবশ্য, এক্সজি মডেল অনুযায়ী তো আর সব চলে না। ২০১২-১৩ মৌসুমে মেসি এক্সপেক্টেড গোলের চেয়ে ১৭ টি গোল বেশি করেছিলেন। সেই একই কথা প্রযোজ্য হ্যালান্ডের ক্ষেত্রেও। এখন দেখার পালা, হাল্যান্ড কোথায় গিয়ে থামেন?

  • প্লেয়িং টাইম ম্যাটারস

হিসেব অনুযায়ী, হাল্যান্ডের এখনো ইংলিশ লিগের এই মৌসুমে ৩২ টি ম্যাচ খেলার কথা। কিন্তু পরিসংখ্যান বলে, হ্যালান্ড কখনোই কোনো লিগের এক মৌসুমে ২৮ টির বেশি ম্যাচ খেলেননি। অর্থাৎ এ হিসেবে আর ২২ টির মতো ম্যাচ খেলতে পারবেন তিনি। গোলের গড় হিসেবে এ ২২ ম্যাচে তিনি ৩৭ টি গোল করতে পারেন।

আর ১.১ এক্সপেক্টেড গোলের হিসেবে তিনি ২৪ টি গোল করতে পারেন। অর্থাৎ হ্যালান্ডের সামনে মোহাম্মদ সালাহর রেকর্ড অতিক্রম করার সুযোগ তো রয়েছেই, একই সাথে ৪২ ম্যাচের লিগে অ্যান্ডি কোল আর অ্যালান শিয়ারের করা ৩৪ গোলের রেকর্ডকেও স্পর্শ করতে পারবেন তিনি। 

আরো পরিস্কারভাবে বললে, হাল্যান্ড বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে বুন্দেসলিগায় ৭২% সময়ই মাঠে ছিলেন। ঐ হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে এখনো তাঁর ২০৭৪ মিনিট খেলতে পারার কথা। আর হ্যালান্ড এই মুহূর্তে প্রতি ৪৮.৫ মিনিটে গোল করছেন। এই গড়ে আরো ৪৩ টি গোল হওয়ার কথা। এই কনভার্শন রেট একেবারে কমিয়ে দিলেও ২৭ টি গোল করার সম্ভাবনা হ্যালান্ডের। অর্থাৎ প্রিমিয়ার লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের নতুন রেকর্ড গড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে হ্যালান্ডের সামনে। 

অবশ্য এমন পরিসংখ্যান ছাপিয়ে নিজের ফিটনেস আর ফর্মটাই পরবর্তীতে কথা বলবে। সে পথযাত্রায় হ্যালান্ড এর চেয়েও অবিশ্বাস্য কিছু করে দিতে পারেন। আবার বাকি মৌসুমটায় অফফর্ম অথবা ইনজুরির কারণে গড়পড়তা এক মৌসুমও শেষ করতে পারেন তিনি। যে কোনো কিছুই হতে পারেন। আপাতত মৌসুম জুড়ে তাঁকে দেখার পালা। মৌসুম শেষে হয়তো সবকিছু মিলিয়ে নেওয়া যাবে।

২২ বছর বয়সী ফুটবলার। এতেই চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ২১ ম্যাচে করে ফেলেছেন ২৬ গোল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে প্রথম ৬ ম্যাচে করেছেন ১০ গোল। এত কম ম্যাচে এর আগে কেউ ১০ গোল করেননি। নরওয়ের ইতিহাসে এর মধ্যেই হয়ে গিয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। নরওয়ের হয়ে আর ১৩ গোল করলেই জরগেন জুভের করা ৩৩ গোলের রেকর্ডকে টপকে যাবেন তিনি। এত কম বয়সেই কত অর্জনের ঝুলি!

কোথায় গিয়ে থামবেন হাল্যান্ড? শুরুটা যার এত রঙিন, চলার পথগুলোও হোক আরো রঙিন। আপাতত তাঁর এই রঙিন প্রারম্ভিকার স্বাক্ষী আমরাও হই। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...