ফেদেরার টাইমলাইন

শান্ত-শ্বাসত সাথে স্মিত হাসি, টেনিস কোর্টে এ বিশেষণগুলোর মিশেলে যেন একজন রজার ফেদেরার। পিট সাম্প্রাসের জয়রথ থামিয়ে ১৯ বছরের এক কিশোরের উত্থান। এরপর থেকেই রাজকীয় রজারের যাত্রা। ২০ বারের গ্র্যান্ডস্লামজয়ী এ মহাতারকা অবশেষে থামছেন। লেভার কাপ দিয়ে নিচ্ছেন বিদায়।

রাজকীয় ক্যারিয়ারে ১০৩ সিঙ্গেল টাইটেলের পাশাপাশি ৩১০ সপ্তাহ ছিলেন র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে। এ ছাড়া ২ বার অলিম্পিক পদকজয়সহ ৫ বার নির্বাচিত হয়েছেন স্পোর্টসম্যান অব দ্য ইয়ার।  আপাতত টেনিস কোর্টের ফেদেরার টাইমলাইনে স্মৃতি রোমন্থন করা যেতে পারে। 

  • ২০০১

পিট স্যাম্প্রাস তখন সময়ের সেরা তারকা। কিন্তু সেবারের উইম্বলডনের চতুর্থ রাউন্ডে গিয়ে হেরে গেলেন ১৯ বছর বয়সী এক কিশোরের কাছে। স্যাম্প্রাসের ৩১ ম্যাচের জয়রথ থামিয়ে দেওয়া সেই কিশোরটি ছিলেন রজার ফেদেরার। আর সেখান থেকেই উইম্বলডনে রজার ফেদেরারের আগ্রাসন শুরু হয়। 

  • ২০০২

জ্যাক হ্লাসেকের পর প্রথম সুইস টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে এ বছরে র‍্যাংকিংয়ের সেরা দশে জায়গা করে নেন রজার ফেদেরার।

  • ২০০৩

২০০৩ সালের ৬ জুলাই। অস্ট্রেলিয়ার মার্ক ফিলিপ্পোসিসকে হারিয়ে এ দিন উইম্বলডন শিরোপা জিতেছিলেন ফেদেরার। আর সেটিই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম। ২০০৩ সালের ঐ উইম্বলডন জয় শুরু ছিল মাত্র। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার, এরপর ২০০৯ ও ২০১২ সালে। সর্বশেষ উইম্বলডন জেতেন ২০১৭ সালে।

  • ২০০৪

এ বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, উইম্বলডন, ইউ এস ওপেন শিরোপা জিতে ৪ টি মেজরের তিনটিই জিতেছিলেন ফেদেরার। যে কীর্তি শেষবার ১৯৮৮ দেখিয়েছিলেন ম্যাটস উইল্যান্ডার। 

  • ২০০৫

অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন- বছরের প্রথম দুটি মেজর কাপে ফাইনালেই পৌঁছাতে পারলেন না ফেদেরার। তবে কি ফুরিয়ে গেলেন তিনি? সে সব আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে পরের দুই টাইটেল, উইম্বলডন আর ইউএস ওপেন জিতে আবারো স্বরূপে ফিরে এলেন ফেদেরার। 

  • ২০০৬

এ বছরের চারটি গ্র্যান্ডস্ল্যামের চারটিতেই ফাইনালে গিয়েছিলেন ফেদেরার। ফ্রেঞ্চ ওপেন বাদে বাকি তিনটিতেই শিরোপা জিতেছিলেন তিনি৷ একই সাথে টানা তিন বছর র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষে থেকে বছর শেষ করেন তিনি। 

  • ২০০৭

আবারো চার গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনালে উঠলেন রজার ফেদেরার। এতে একটি রেকর্ড গড়লেন তিনি। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ২ বছর সবকটি গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনালে ওঠার কীর্তি গড়লেন ফেদেরার। 

  • ২০০৮

এ বছর স্বদেশী স্ট্যান ওয়ারিনকাকে নিয়ে রজার ফেদেরার অলিম্পিকের ডাবলসে জিতেছিলেন স্বর্ণপদক। 

  • ২০০৯

ফ্রেঞ্চ ওপেন বাদে ততদিনে সব গ্র্যান্ডস্ল্যামেরই ছোঁয়া পেয়েছিলেন রজার ফেদেরার। শুধু বাকি ছিল ফ্রেঞ্চ কাপ। অবশেষে সে আক্ষেপটা মেটাতে সক্ষম হন তিনি। রাফায়েল নাদালের ফ্রেঞ্চ কাপের টানা ৩১ ম্যাচের উইনিং স্ট্রিক ভেঙ্গে প্রথমবারের ফ্রেঞ্চ কাপের শিরোপা জেতেন রজার ফেদেরার। আর এটিই ছিল ফেদেরারের পুরো ক্যারিয়ারের একমাত্র ফ্রেঞ্চ কাপ শিরেপা।

  • ২০১০

বছরের শুরুটা ভালই করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বছর জুড়ে দুর্দান্ত কিছু করার। কিন্তু পুরো বছরে ঐ একটি শিরোপাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় রজার ফেদেরারকে। 

  • ২০১২

এ বছরের উইম্বলডন শিরোপা জিতে নিজের ১৭ তম গ্র্যান্ডস্লামের মুখ দেখেন ফেদেরার। তবে লন্ডন অলিম্পিকে এন্ডি মারের কাছে হেরে সিলভার মেডেলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে। আগেরবার ডাবলসে স্বর্ণ জিতলেও সিঙ্গেলে অলিম্পিক স্বর্ণজয় তাই আরাধ্যই থেকে যায় ফেদেরারের কাছে। 

  • ২০১৩

এ বছর ব্যাক ইনজুরিতে পড়েন তিনি। আর এর পর থেকেই টেনিসে অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। একই সাথে আগের মতো ফর্ম ফিরে পাচ্ছিলেন না তিনি। এ কারণে ২০১৬ সাল পর্যন্ত গ্র্যান্ডস্লাম শূণ্য থাকতে হয় তাকে।

  • ২০১৭

ছয় মাসের ইনজুরি থেকে ফিরে এসেই বাজিমাত। বছরের প্রথম টাইটেল অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে প্রায় ৫ বছর পর প্রথম কোনো গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের মুখ দেখেন তিনি। ঐ বছরে উইম্বলডন শিরোপাও জিতেছিলেন ফেদেরার। আর এর মধ্যে দিয়ে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ৮ উইম্বলডন জয়ের কীর্তি গড়েন তিনি।

  • ২০১৮

ক্যারিয়ারের শেষ গ্র্যান্ডস্লামটি এ বছরেই জেতেন ফেদেরার। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে প্রথম পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে ২০ টি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপাজয়ের কীর্তি গড়েন তিনি। একই সাথে রড লেভারের গড়া আরেকটি রেকর্ডেও ভাগ বসান তিনি৷ বয়স ত্রিশ পার করার পর রড লেভার ৪ টি মেজর জিতেছিলেন। একই ভাবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে রজার ফেদেরারও বয়স ত্রিশ পার করার পর চতুর্থ মেজর স্পর্শ করেন। 

  • ২০২২

অবশেষে তিনি থামলেন। বছরের পর বছর হাঁটুর ইঞ্জুরিতে আর পেরে উঠলেন না। টেনিস কোর্টকে বলে দিলেন বিদায়। 

১৯৯৮ সালে সুইস ওপেন দিয়ে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করা ফেদেরার নাকি প্রথম সময়ে বেশ রগচটা ছিলেন। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে শান্ত, স্থিতধী চলাফেরা করা ফেদেরার ছোটবেলায় বারবার মেজাজ হারিয়ে কোর্টের মধ্যে র‌্যাকেট ভাঙতেন। মূলত, গাড়ি দুর্ঘটনায় কোচ এবং প্রিয় বন্ধু পিটার কার্টারের মর্মান্তিক মৃত্যু পাল্টে দেয় তাঁকে।

টেনিস কোর্টে এর পর থেকেই অন্যরকম ফেদেরারকে দেখা যায়। একদম শান্ত, সৌম্য, স্মিত হাসির এক সুবোধ বালকের মতো। ফেদেরার সেটি ধরে রেখেছিলেন ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত। আগ্রাসনের দুনিয়ায় টেনিস কোর্টে নিজের আলাদা একটা ছাপ রেখে গিয়েছেন তিনি। সেই ছাপ অনুকরণীয়, সেই পদাঙ্কন অনুসরণীয়। যে উইম্বলডন সবুজ কোর্টে ফেদেরারের জয়ধ্বনি বেশিবার উচ্চারিত হয়েছে, সেই সবুজের মতোই চিরসবুজ হয়ে থাকুক রজার।  

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link