ইয়র্কার, ওয়াইড ইয়র্কার, স্লোয়ার, নাকল, বাউন্সার- সব ভ্যারিয়েশনেই চেষ্টা করছেন। তবুও ডেথ ওভারে এসে বার বারই ব্যর্থ হচ্ছেন ভূবনেশ্বর কুমার। অথচ নতুন বলে প্রতি ম্যাচেই বোলিংয়ে ভারতকে দারুণ শুরু এনে দেন তিনি। কিন্তু শুরুর সে ছন্দ মিলিয়ে যাচ্ছে শেষের বাজে বোলিংয়ে। বিশেষ করে ব্যাটিং ইনিংসের ১৯ তম ওভার, যে ওভার ম্যাচ বাঁচানোর জন্য বোলিং পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ওভার হতে পারে সেখানেই এসে খারাপ করছেন ভুবি। আর তাতে মাশুল গুণতে হচ্ছে ভারতকে।
এবারের এশিয়া কাপে সুপার ফোরের ম্যাচে পাকিস্তানের যখন ২ ওভারে ২৬ রান প্রয়োজন, সে সময়ে ভূবনেশ্বর এসে এক ওভারেই দিয়ে ফেলেন ১৯ রান। কার্যত, ওখানেই ভারতের জন্য ম্যাচ শেষ। এরপরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার যখন ২ ওভারের ২১ রান দরকার পড়ে, তখনই ১৯ তম ওভারে এসে ১৪ রান দেন ভুবনেশ্বর। টানা দুই ম্যাচেই ডেথ ওভারে ভুবির ব্যর্থতায় ভারতকে মাশুল গুনতে হয় সুপার ফোর থেকে বাদ পড়ে।
এশিয়া কাপ শেষ আবারও নতুন করে শুরু করার প্রয়াস ছিল টিম ইন্ডিয়ার। অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাটিতে ২০৯ রানের বড় লক্ষ্য ছুঁড়ে দেওয়ায় জয়ের পথেই পা বাড়াচ্ছিল ভারত। তবে আবারও ডেথ ওভারে এসে ভারতীয় বোলারদের ব্যর্থতা। এশিয়া কাপে ডেথ ওভারে রান দেওয়ার রেশ এ সিরিজেও যেন টেনে আনলেন ভুবি। ১৭ আর ১৯ ওভারে এসে দেন মোট ৩১ রান। আর সব মিলিয়ে ৪ ওভারে ৫২ রান। এ নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ৫০ রান হজম করলেন তিনি। নিজের ব্যর্থতার দিনে দলও জিততে পারেনি। ২০৮ রান করেও ভারতকে হারতে হয়েছে ৪ উইকেটে।
বিশ্বকাপের আগে ভারতের নতুন এক চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ভুবির এই ১৯ তম ওভার। ভারতের শেষ ৩ পরাজয়ে ভুবনেশ্বর কুমার ৩ ওভারে দিয়েছেন ৪৯ রান। অর্থাৎ প্রতি বলে প্রায় ৩ করে রান দিয়েছেন তিনি। ভারতের জন্য তাই এটাই এখন সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এই ৩ ম্যাচেই ভুবির ৩ ওভারকে ম্যাচ হারানোর অন্যতম ভিলেন বললেও ভুল হয় না।
এ নিয়ে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার এক সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘আসলে আমরা ভাল বল করতে পারিনি। ভুবির মতো বোলার যদি প্রতিটা ম্যাচে এভাবে শেষে এসে রান লিক করে তাহলে তো হবে না।’
ভারতের পেস আক্রমণে আরেকটি দুর্বলতার বিষয় হলো, বুমরাহ ছাড়া কেউই ধারাবাহিকভাবে ১৪০ গতিতে বল করতে পারেন না। এ কারণে ডেথ ওভারে এসে তাদের অস্ত্র হয়ে যায় শুধু স্লোয়ার, ওয়াইডার লেন্থ। যে ভ্যারিয়েশনে সব সময় সফল হওয়া যায় না। এ ব্যাপারে ভারতের সাবেক পেসার কার্সান ঘাবরি বলেন, ‘আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের পেস লাইন আপ বড়সড়ো একটা ধাক্কা খাবে। কারণ বুমরাহ ছাড়া গতিশীল কোনো পেসারই নেই। শামি বা উমরান মালিককে অবশ্যই দলে নেওয়া উচিত ছিল। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে এদের পেস, সুইং দারুণ কাজে দিত।’
অবশ্য আরেক সাবেক পেসার রাজু কুলকার্নি মনে করেন, আরব আমিরাত কিংবা ভারতে বল করা আর অস্ট্রেলিয়ায় বল করা পুরোপুরিই আলাদা ব্যাপার। তিনি বলেন, ‘ভুবি প্রমাণিত বোলার। অস্ট্রেলিয়ায় সে অবশ্যই ভাল করবে। সে ওখানে সুইংয়ের সাথে বাউন্সও পাবে। আশা করছি ও খুব তাড়াতাড়ি কামব্যাক করবে।’
ভূবনেশ্বর কুমার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দারুণ একজন পেসার, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ক্যারিয়ারে এখনো ৭ এর নিচে ইকোনমি রেখে ৮৪ উইকেট পেয়েছেন। মূলত শেষ কিছু ম্যাচে ডেথ ওভারে এসে তাঁর বাজে বোলিং তাকে কাঠগড়ায় তুলেছে। টিম ইন্ডিয়ার জন্যও চিন্তার এক কারণ হয়েছেন বটে।
তবে, এর আগে নতুন বলে ভাল বল করার পাশাপাশি শেষে এসেও দারুণ বোলিং করতেন তিনি। তাই প্রয়োজন একটু ছন্দ। সে ছন্দের জন্য দরকার সামান্য একটু সময় আর অপেক্ষা। তবে অপেক্ষার সে প্রহর দীর্ঘায়িত হলে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজটা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতরই হবে টিম ইন্ডিয়ার জন্য।