ভার্নন ফিল্যান্ডার নামটা প্রথম শুনি সেই ২০০৪ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকা যুব ক্রিকেট দলের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল বাংলাদেশে। সেই সময় দলে ওর প্লেয়িং রোল ছিল মিনি অলরাউন্ডার, টুকটাক পেস বোলিংয়ের সাথে বিগ হিট করতে পারত। এরপর ওকে দেখি ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সাদামাটা পারফর্মার ছিল, পাঁচ ম্যাচ খেলে নিয়েছিল মাত্র চার উইকেট, ইকোনমি রেট আটের ওপরে। মনে রাখার মত কোনো পারফরম্যান্স নয়।
তো সেই ‘সাধারণ’ ফিল্যান্ডারের ‘অসাধারণ’ হয়ে ওঠার গল্পটা শুরু হয় ২০১১ সালের নভেম্বরে। ‘অভিষিক্ত’ ফিল্যান্ডারের বোলিং তোপে কেপটাউন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৪৭ রানে অলআউট রিকি পন্টিংয়ের সেই মহাপরাক্রমশালী অজেয় অস্ট্রেলিয়া দল। স্কোরকার্ড দেখে রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ হবার উপক্রম! মাত্র ৭ ওভারের স্বপ্নের এক স্পেলে (৫/১৫) কুপোকাত পন্টিং, মাইকেল ক্লার্ক, মার্শ, ব্র্যাড হাডিন আর জনসন। ৭৩ রানে ৮ উইকেটের অনবদ্য ম্যাচ ফিগার নিয়ে অভিষেকেই ম্যাচ সেরা হন ফিল্যান্ডার।
সেই থেকে শুরু, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর কোন কিছু দিয়েই আর থামানো যায়নি ভার্নন ফিল্যান্ডারের অগ্রযাত্রা। মাত্র ৭ টেস্ট খেলেই ছয় বার ইনিংসে পাঁচ উইকেটসহ ৫০ উইকেটের ছোট্ট মাইলফলক অতিক্রম করে ফিল্যান্ডার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, লাল বলের ক্রিকেটে সেরাদের একজন হতেই এসেছেন তিনি।
সত্যিই, ক্রিকেট কখনও কখনও সত্যিই একটি নিষ্ঠুর খেলা। জয় দিয়ে লাল বলের ক্যারিয়ার শুরু করা ফিল্যান্ডারের শেষটা তাই ছেয়ে রইল পরাজয়ের বিষাদে। তবে আট বছরের ক্যারিয়ারে তাঁর যা অর্জন কিংবা প্রাপ্তি, তার কোন তুলনা হয় না। ৬৪ টেস্টে ২২৪ উইকেট, গড় মাত্র ২২.২৪! স্ট্রাইক রেট ৫০.৮৫! ইনিংসে পাঁচ উইকেট ১৩ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট দুই বার।
শেষ করব একটি ছোট্ট পরিসংখ্যান দিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে অন্তত ২০০ উইকেট পাওয়া বোলারদের মাঝে ফিল্যান্ডারই একমাত্র, যার ক্যারিয়ার বোলিং গড় সবসময় ২৫-এর নিচে ছিল! ইনফ্যাক্ট ২৫ বললে ভুল হবে, একজ্যাক্ট সংখ্যাটা হবে ২২.৪৭! এটা বিরাট ও অনন্য এক অর্জন। অবশ্যই, টেস্টে তিনি সর্বকালের সেরাদের একজন হওয়ার দাবী রাখেন।
ফিল্যান্ডার আমার কাছে একজন লাল বলের জাদুকর, যার মধ্যে সবরকম পোটেনশিয়াল ছিল অলটাইম গ্রেটদের একজন হবার। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমন অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা আর ক’জনই বা দেখাতে পেরেছেন?