আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি

আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়

পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা

আঠারো বছর বয়স মাথা নোয়াবার নয়

এ বয়স জানে না কাদা

সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত আঠারো বছর বয়স কবিতার এই পঙক্তিটুকু এবং বাংলাদশি ক্রিকেটার আরিফুল ইসলামের ব্যাটিং যেন একই সূত্রে গাঁথা। বোলারের মাথার উপর দিয়ে খেলা তরুণ ক্রিকেটার আরিফুলের এই লফটেড শট যেন যে কোনো ক্রিকেট প্রেমীকেই দেবে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। শুধু লফটেড শটই নয়, সুদর্শন কাভার ড্রাইভ, তাক লাগানো পুল শট সকল প্রকার শটই যেন আছে এই ব্যাটারের ঝুলিতে।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উঠতি তারকা ক্রিকেটার আরিফের ব্যাটিং যেন সেখানে উপস্থিত সকলকেই তাঁর দিকে একবার হলেও তাকাতে বাধ্য করেছিলেন। উইকেটের চারপাশেই অনায়াসে খেলা তার শটগুলো যেন ব্যাটিংয়ে এই তরুণ ক্রিকেটারের পরিপক্বতাই প্রমাণ করে।

কি নেই তাঁর ব্যাটিংয়ে?

অসাধারণ ফুটওয়ার্ক, কব্জির ব্যবহার কিংবা মাঠের সকল পাশেই খেলা শট; ক্রিকেট বিধাতা যেন এ সব কিছুতেই তাকে দুহাত ভরে দিয়েছেন। আরিফুল ইসলাম সর্বপ্রথম লাইম লাইটে এসেছিলেন ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপে। সেখানে তার ব্যাটিং যেন প্রায় সকল ক্রিকেট বোদ্ধাকেই মুগ্ধ করেছিল।

এই টুর্নামেন্টে ভীষণ ব্যর্থ বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি ছিল এই আরিফুল ইসলামের ব্যাটিং। সে বিশ্বকাপ পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১১৯ বলে ১০০ রানের এক ইনিংস খেলেন আরিফুল। যেখানে ছিল পাঁচটি চার এবং চারটি ছয়ের মার। ম্যাচটি বাংলাদেশ ছয় উইকেটে হারলেও সেখানে আরিফুল ইসলামের দায়িত্বশীল ব্যাটিং প্রায় সকল ক্রিকেট বোদ্ধাকেই তাঁর প্রশংসা করতে বাধ্য করেছিল।

ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২৩ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখানেই মূলত দলের হাল ধরেছিলেন আরিফুল। বাংলাদেশ সেই ম্যাচে দলীয় ১৭৫ রানে অলআউট হলেও দলের অধিকাংশ রানই করেন তিনি। ২০২২ অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও আরিফুল খেলেন এক তাক লাগানো ইনিংস।

যেখানে ১০৩ বলে ১০২ রান করেন তিনি। এ ম্যাচটিতে বাংলাদেশ হারলেও শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছিল। সম্প্রতি, তিনি সুযোগ পেয়েছেন অক্টোবর মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া পাকিস্তান জুনিয়র লিগে যেখানে পাকিস্তানের বয়স ভিত্তিক দলের খেলোয়াড় ছাড়াও অংশগ্রহণ করবেন বিদেশ থেকে আগত কিছু জুনিয়র খেলোয়াড়। সেই আসরে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী একমাত্র খেলোয়াড় হলেন আরিফুল।

এ টুর্নামেন্টে গুজরানওয়ালা জায়ান্টসের হয়ে খেলবেন তিনি। তার দলের টিম মেন্টর হবেন পাকিস্তানি কিংবদন্তি ব্যাটার শোয়েব মালিক। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ছাড়াও ঘরোয়া ক্রিকেটের বিভিন্ন আসরে আরিফুল ইসলাম দেখিয়েছেন নিজের ব্যাটিং ঝলক। আন্তর্জাতিক অনূর্ধ্ব- ১৯ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১৭ ম্যাচ খেলে ৩৩ গড়ে করেছেন ৪২৯ রান। তবে শুধু ব্যাটিংই নয়; বরং দলের প্রয়োজনে বল হাতেও ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি। ১৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বল হাতে ১৭ ম্যাচে নিয়েছেন ৮ উইকেট যেখানে তার বোলিং গড় ৩১.৫০।

পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরিটাই বিশ্ব মঞ্চে চিনিয়েছে আরিফুলকে। এবার আরিফুল কি পারবেন পাকিস্তানের মাটিতে নিজেকে নতুন করে চেনাতে? – উত্তরের জন্য সময়ের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link