টার্নিং পয়েন্ট মিরাজ

তিনি টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটার নন। ফরম্যাটটা যত ছোট হতে থাকে ততই বেমানান হয়ে ওঠেন তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে এই কথা বলা লোকের অভাব নেই। তবে, সেই মিরাজই কি না বিরাট এক লজ্জা থেকে বাঁচালেন বাংলাদেশকে। তাঁর বোলিংয়েই বাংলাদেশ প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হারালো সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। নবম উইকেট জুটিতে আমিরাত ২৭ রান যোগ করলেও তাতে পরাজয়ের ব্যবধান কমেছে শুধু। সাত রানের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে সফরকারীরা।

অবশ্য, নিন্দুকদের কথায় দোষ নিয়ে লাভ নেই। কারণ, এর আগে যে ১৩ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন – তাতে তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছেন সামান্যই। ১৩ ম্যাচে মাত্র চার উইকেট – এটা মিরাজসুলভ পারফরম্যান্স নয়।

টেস্ট ক্রিকেট কিংবা ওয়ানডেতে তিনি দলের অন্যতম স্ট্রাইক বোলার। কিন্তু, টি-টোয়েন্টিতে বিষয়টা ভিন্ন। এখানে তিনি পঞ্চম ক্ষেত্রে বিশেষে ষষ্ঠ বোলার হিসেবে ব্যবহৃত হন।

তবে, মিরাজ যে টি-টোয়েন্টিটা খেলতে জানেন – সেটা এবার বোলিং দিয়ে বোঝালেন। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে ব্যাট দিয়ে ঝড় তুলেছিলেন। সেই ইনিংসটায় বাংলাদেশ জিততে না পারলেও দলে নিজের জায়গাটা থিতু করতে পেরেছিলেন।

যদিও, সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচেও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আস্থাভাজন হতে পারেননি বল হাতে। এবার আরব আমিরাতের বিপক্ষেও অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান তাঁকে বোলিংয়ে আনেন অষ্টম ওভারে।

প্রথম ওভারেই মিরাজ ফিরিয়ে দেন চিরাগ সুরিকে। এই চিরাগ সুরির খেলেন যদিও ছোট দলের হয়ে তবে, তাঁর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) অভিজ্ঞতা আছে। ম্যাচ না খেললেও তিনি গুজরাট লায়ন্সের হয়ে একটা মৌসুম কাটিয়েছেন আইপিএলের ডাগ আউটে।

আর ম্যাচের ওই সময়টায় চিরাগ ২৪ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন। একটু একটু করে বাংলাদেশের হাত থেকে বের করে নিচ্ছিলেন ম্যাচটা। সেই সময় তাঁকে নিজের ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। সামনে এগিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেন চিরাগ। উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো সোহান স্ট্যাম্পিং করতে ভুল করেননি।

এরপর মিরাজ আরিয়ান লাকরা ও বৃত্ত অরবিন্দকে – এই দু’জনও ম্যাচের লাগামটা নিজের হাতে নিতে পারতেন যেকোনো সময়ই। তাঁদের সময় মত ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ ফিরিয়েছেন মিরাজ। যদিও, এত কিছুর পরও নিজের বোলিং কোটা শেষ করতে পারেননি তিনি। তিন ওভারে ১৭ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে।

আসলে মিরাজ কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি পরিকল্পনায় ছিলেনই না। নেহায়েৎ ওপেনিংয়ের সংকট কাটাতে মেক শিফট ওপেনার হিসেবে দলে তাঁর ঠাঁই হয়েছে। সেই জায়গাটায় একটা ম্যাচ নিজেকে প্রমাণ করলেও বোলিং সত্ত্বাটা ম্লান হয়ে পড়েছিল। এবার সেখানেও আলোটা ফিরে ফেলেন অনূর্ধ্ব ১৯ দলের সাবেক এই অধিনায়ক। এই আলোটা থাকুক।

টি-টোয়েন্টিতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দু:সময় পার করছে। এমন সময় মিরাজদের এই ফিরে পাওয়া আলোই হতে পারে সুন্দর ভবিষ্যতের সাথী।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link