পাকিস্তানের মিডল অর্ডার ডিজঅর্ডার

ভবিষ্যৎ এক ধোঁয়াশায় মোড়া সময়। ঘন কুয়াশা আর মেঘের মিশেলে পাহাড়টা যেমন হয় আরকি। তবুও মানুষের কত প্রয়াস সেই ধোঁয়াশা চিড়ে সামনে দেখবার। সে প্রয়াস নিশ্চয়ই সহসাই থেমে যাবার নয়। তবে পাকিস্তান ক্রিকেটের পথটা খুব বেশি ধোঁয়াশায় মোড়ানো নয় নিশ্চয়ই। আরও এক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে মশগুল থাকা দলটার মধ্যভাগ তো রীতিমত অচল। সেই অচলতা নিয়ে তো আর যাই হোক বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি পারফরমেন্স নিশ্চয়ই আশা জাগাচ্ছে দেশটির সমর্থকদের। এবার অন্তত ঘুচবে শিরোপা জয়ের দীর্ঘ অপেক্ষা। তবে সেটা কেবলই এক মরীচিকা। এশিয়া কাপের ফাইনাল অবধি খেলে ফেলেছে তাঁরা। তবে শিরোপাটা আর জয় করা হয়নি। যেমনটা ঠিক ঘটেছিল ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সবাই যখন ধরেই নিয়েছিল পাকিস্তানের হাতেই উঠতে চলেছে শিরোপা ঠিক তখনই ঘটে উল্টো ঘটনা। সেমিফাইনালে ছন্দপতন পাকিস্তানের।

তবে এদফা আবার সেই শিরোপা জয়ের আশায় নতুন করে বুক বাঁধাদের স্বপ্নভঙ্গ সম্ভবত খুব আগে ভাগেই হতে চলেছে। তাঁর পেছনের কারণটা অবশ্য পাকিস্তানের মিডল অর্ডার। ব্যাটিং লাইনআপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক সময় এই মিডল অর্ডার। পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই। রেকর্ড গড়তেই যেন সেই জুটি সবচেয়ে পটু। আর শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার জন্য তো আসিফ আলী রয়েছেনই। সেই সাথে শাদাব খানের ব্যাটটাও ঠিকঠাক চললে কোন সমস্যাই হবার কথা নয়।

বোলিং নিয়েও নতুন করে বলবার কিছু নেই। এবারের এশিয়া কাপে হারিস রউফ যেন নিজেকে খানিকটা নতুন করেই পরিচয় করিয়ে দিলেন। তাছাড়া নতুন তারকারুপে হাজির হয়েছেন নাসিম শাহ। সেই সাথে অভিজ্ঞ শাহীন আফ্রিদি তো থাকছেনই। তবে চিন্তার সবটুকু জায়গা জুড়েই রয়েছে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার। সেখানে ক্রমাগত ব্যর্থ কুশদিল শাহ, ইফতেখার আহমেদ, ফখর জামানরা। এমন পরিস্থিতিতে সমর্থকদের খানিকটা বাড়তি দুশ্চিন্তা লেগেই আছে।

সেখান থেকে মুক্তি দিতে শান মাসুদ আর ভক্তদের পছন্দের হায়দার আলীকে বাজিয়ে দেখেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্ট। হায়দার আলী নিজের ছাপ ফেলে যেতে পারেননি। অন্যদিকে খালি চোখে হয়ত সফল শান মাসুদ; দুই খানা অর্ধশতক হাকিয়েছেন তিনি। তবে বাস্তব চিত্রে তা ম্যাচ জয়ে রাখেনি বিন্দুমাত্র অবদান। ধীরগতির সেসব ইনিংসগুলো বরং পাকিস্তানকে পীড়া দিয়েছে। শান প্রমাণ করেছেন তিনি ভাল মানের ব্যাটার। তবে এই মুহূর্তে পাকিস্তানের প্রয়োজন সেরা একজনকে।

আর বাকি থাকা মিডল অর্ডার ব্যাটাররা আগের মতই ব্যর্থ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাত ম্যাচের সিরিজের একটি ম্যাচেও কার্য্যকরী কোন ক্যামিও ইনিংস খেলতে দেখা যায়নি পাকিস্তানের মিডল অর্ডারের কোন ব্যাটারকে। তবে অধিনায়ক বাবর আজম দর্শক-সমর্থকদের নিন্দা বা সমালোচনায় খুব একটা মাথা ঘামান না বলেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধান কোচ সাকলাইন মুশতাক দোষটা দিয়েছেন প্রকৃতির নিয়মকে। হার-জিত সব একটা চক্র। এসব কিছু নিয়ম মেনে হয়, তেমনটাই মনে করেন পাকিস্তান ক্রিকেটের ওস্তাদ। সময় পাকিস্তানের পক্ষে থাকলে পাকিস্তানও কাঙ্ক্ষিত জয়ের দেখা পাবে। তবে পাকিস্তান যে একেবারেই খারাপ খেলছে সেটা বলবার সুযোগ নেই। তাঁরা বেশ ধারাবাহিক একটা দল। তবে মিডল অর্ডারের এই সমস্যাটা নিশ্চয়ই ভোগাবে বড় মঞ্চে।

সেটারই একটা মঞ্চায়ন তো হয়ে গেছে এশিয়া কাপে। শ্রীলঙ্কার কাছে দুই দফা হেরে শিরোপা হাতছাড়া করতে হয়েছে। সেই দুই ম্যাচে একটা জায়গায় এগিয়ে ছিল শ্রীলঙ্কা। আর সেটা মিডল অর্ডারের দৃঢ়তা। পাকিস্তান নিজেদের এই দূর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা নিশ্চয়ই করবে। তবে সেটা খুব বেশি দেড়ি হয়ে গেলে অপেক্ষার প্রহর হবে আরও দীর্ঘ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link