ধরুণ আপনি আপনার বাড়ি থেকে বের হয়ে নানা পথ ঘুরে আবার আপনার বাড়িতেই ফিরলেন। অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে আপনি বেশ ক্লান্ত। অথচ পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় আপনি কোন কাজই করেননি। ফিজিক্স বলছে আপনার অতিক্রান্ত দূরত্ব শূন্য। কারণ আপনার আদি ও শেষ বিন্দু একই, সেটা হল আপনার বাড়ি।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে ওপেনিং সমস্যারও আসলে একই দশা। ফিজিক্স বলেন আর ক্রিকেট সব ভাষাতেই বাংলাদেশের অতিক্রান্ত দূরত্ব শূন্য। আমাদের দল এগোতে পারেনি এতটুকুও। নানা পথ ঘরে বাংলাদেশ যে আঁধারে ছিল আবার সেই আঁধারেই ফিরে এসেছে।
গত দুই বছরে বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওপেন করেছেন মোট ১২ জন ব্যাটসম্যান। লিটন, সৌম্যদের থেকে শুরু করে মাঝে মুনিম শাহরিয়ার, এনামুল হক বিজয় এবং শেষটা এসে ঠেকেছে মিরাজ-সাব্বিরে।
তবে কোন কিছুতেই কোন লাভ হল না। বাংলাদেশেরও একটু সামনে এগিয়ে যাওয়া হল না। নানা পথ হয়ে বাংলাদেশ আবার সেই সৌম্য সরকারেই ফিরছে। এর আগে সাব্বিরকে দিয়ে একটা জুয়া খেলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাতে কাজ হয়নি। এবার বাজিটা ধরা হচ্ছে সম্ভবত সৌম্য সরকারকে নিয়ে। যদি ঝড়ে বক মরে যায় তাহলে ফকিরের কেরামতি বাড়বে।
আর যদি না হয় তাহলে আবারও অতিক্রান্ত দূরত্ব সেই শূন্য। আসল কথা হচ্ছে সাব্বির রহমানকে দিয়ে কাজ না হওয়ায় এবার আবার সৌম্য সরকারে ফিরতে চাইছে টিম ম্যানেজম্যান্ট। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে হয়তো আগামীকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ওপেন করতে দেখা যাবে সৌম্যকে।
চার ম্যাচে মাত্র ৩১ রান করে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন সাব্বির রহমান। সেজন্যই এই হার্ড হিটারের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ দল। এবার স্কোয়াডের সাথে থাকা সৌম্য সরকারকে বাজিয়ে দেখতে চায় বাংলাদেশ। এই ওপেনার সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন গতবছর। এরপর যে সৌম্য সরকার কোন ধরনের ক্রিকেটেই নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই।
বাংলাদেশের পাইপ লাইনে যে এর চেয়ে ভাল কোন অপশন নেই সে কথাও সত্য। এছাড়া নিউজিল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মত কন্ডিশনে এই ব্যাটারের উপরই একটু আধটু ভরসা করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই বাস্তবতা টিম ম্যানেজম্যান্ট বোঝার পরেও কেন বিশ্বকাপের দলে সৌম্য সরকার নেই?
সৌম্য নেই কারণ ওপেনার হিসেবে বিশ্বকাপ দলে আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই ব্যাটারকে নিয়েই বিশ্বকাপে পরিকল্পনা করেছিলেন নতুন টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরণ শ্রীরাম। সেক্ষেত্রে তো শান্তকেই ত্রিদেশীয় সিরিজে সুযোগ দেয়ার কথা ছিল। বিশ্বকাপের আগে শান্তকে দেখে নেয়ার জন্য তো এটাই শেষ সুযোগ ছিল। ফলে আগামীকাল যদি শান্তকে দিয়ে ওপেন করানো হয় সেটা তবু মন্দের ভাল। ফল আসুক আর না আসুক প্রসেস শব্দটা মান বাঁচে।
আর যদি সৌম্য সরকারই ওপেন করেন তাহলে আসলে টিম ম্যানেজম্যান্টের পরিকল্পনাটা কী? যদি সৌম্য পারফর্ম করেন তাহলেও কী তিনি বিশ্বকাপ খেলবেন না? সৌম্যকে বিশ্বকাপে খেলাতে হলে আবার আপনার স্কোয়াডে থাকা ওপেনার শান্তকে বাদ দিতে হবে। কোন সুযোগ না দিয়েই তাহলে শান্ত’র প্রতি এমন অবিচার আপনি কীভাবে করবেন? আর সৌম্য যদি এই সিরিজে না পারেন তাহলে কিন্তু বিশ্বকাপে শান্তই আপনার শেষ ভরসা। অথচ তাঁকে আপনি ওপেনিংয়ে মানিয়ে নেয়ার সুযোগটাই দিচ্ছেন না।
ওপেনিং পজিশনে বদলের পাশাপাশি আগামীকালকের একাদশে থাকবে আরেকটি পরিবর্তন। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দলে ফিরলে তাঁর জায়গায় হয়তো বাদ পড়তে হবে মোসাদ্দেক কিংবা ইয়াসির রাব্বিকেই। যদিও দুজনই সুযোগ পেলে নিজেদের প্রমাণ করছেন এই ফরম্যাটে।
এছাড়া পেস ডিপার্টমেন্টেও দেখা যেতে পারে পরিবর্তন। কেননা প্রথম মুস্তাফিজুর রহমানের অমন নির্বিষ বোলিংয়ের পর তাঁকে আরেকটা ম্যাচ খেলানোর ঝুঁকি কী বাংলাদেশ নেবে? এছাড়া বিশ্বকাপ দলেও কী এই মুস্তাফিজকে বয়ে বেড়াবে বাংলাদেশ? উত্তরটা যদি না হয় তাহলে প্রক্রিয়াটা আগামীকাল থেকেই শুরু হওয়া উচিৎ।