‘হোয়েইন আই গেট ওল্ডার আই উইল বি স্ট্রংগার, দে উইল কল মি ফ্রিডম জাস্ট লাইক আ ওয়েভিং ফ্ল্যাগ।’ গেল দশকের শুরুতে এই গানটা মাতিয়ে রেখেছিল গোটা বিশ্বকে। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে এই গানটি তৈরি করা হয়েছিল। মুহূর্তেই এই গান ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর এই প্রান্ত থেকে একেবারে শেষ প্রান্ত অবধি। প্রতিটা ফুটবল বিশ্বকাপের আগে যেন অধীর আগ্রহে বসে রয় ফুটবল ভক্তরা। বিশ্বকাপের থিম সং যেন উন্মাদনা বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুন।
চার বছর পরপর আয়োজিত হয় ফুটবল বিশ্বকাপ। উন্মুখ হয়ে অপেক্ষায় থাকে ফুটবলের শত কোটি ভক্ত। ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রায় তিন দশক বাদে এই ‘থিম সং’ বিষয়টার সাথে পরিচিত হতে শুরু করে ফুটবল ভক্তরা। কালের পরিক্রমায় বহু বিশ্ব নন্দিত গান উপহার দিয়েছে আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। সেখানে ২০১০ সালের ‘ওয়েভিং ফ্ল্যাগ’ যেমন জায়গা করে নেয়, তেমনি ১৯৯৮ সালের ‘দ্য কাপ অব লাইফ’ জায়গা করে নেবে।
এছাড়াও ২০১০ সালে সাকিরার ‘ওয়াকা ওয়াকা’ ২০১৪ সালের ‘লা লা লা’, পিটবুলের ‘উই আর ওয়ান’ গানগুলো জনপ্রিয়তায় ছাপিয়ে গিয়েছে অন্যসব আসরের থিম সংগুলোকে। সাধারণত বিশ্বকাপের থিম সং গুলোতে আয়োজক দেশটির সংস্কৃতি তুলে ধরার প্রয়াস থাকে। তাছাড়া ফুটবলের সাথে গানগুলোর সম্পৃক্ততাও চোখে পড়ে। তবে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল থিম সং যেন এসব কিছুর তোয়াক্কাই করেনি। সাত অক্টোবর গানটি মুক্তি পায়।
এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার প্রবল ধারা যেন বয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকাপের এই গানগুলোর প্রত্যাশায় অপেক্ষা করা ভক্তদের তুষ্ট করতে পারেনি এবারের ‘লাইট দ্য স্কাই’। তবে চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে এই গানের একটা অংশে ব্যবহার করা হয়েছে হিন্দি ভাষা। ইংরেজি ভাষা বাদে একমাত্র হিন্দি ভাষার প্রয়োগটা চোখে পড়ার মত। তবে খানিকটা মরোক্কান ভাষারও ব্যবহার রয়েছে এই গানে। তবে প্রশ্ন জাগতেই পারে কেন হিন্দি শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে?
শুধু তাই নয় গানটির ভিডিওতে দেখা গিয়েছে ভারতের জনপ্রিয় আইটেম গার্ল নোরা ফাতেহিকে। ভারত কোন বারই বিশ্বকাপের কাছে ধারে পৌঁছতে পারেনি। সে ধারা অব্যহত রয়েছে এবারের বিশ্বকাপেও। তাছাড়া ভারতেও বসেনি এবারের বিশ্বকাপের আয়োজন। তবুও বিশ্বকাপের থিম সংয়ে কেন ভারত! এর সোজাসাপ্টা উত্তর হচ্ছে বাণিজ্য। ভারতের জনগোষ্ঠি প্রায় ১৫০ কোটি। সংখ্যার বিচারের এটা প্রচণ্ড বড় একটা সংখ্যা। ভারতের মার্কেটে যেকোন খেলাধুলা নিয়েই বেশ একটা উত্তেজনা বিরাজ করে। তাছাড়া ক্রীড়াপাগল পুরো ভারতের প্রায় সবার নজরই থাকে এই ধরণের বড় ইভেন্টগুলোতে।
সেদিক বিবেচনায় বিজ্ঞাপনের টার্গেট মার্জিন ছুঁতে ভারতের এই বিশাল জনগোষ্ঠী একটা মহাগুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আর এশিয়া মহাদেশে এত বড় আয়োজন ভারতকে বাদ রেখে পরিকল্পনা করাও তো প্রায় অসম্ভব। কাতারে এই বিশ্বকাপ আয়োজনে চলেছে মহাযজ্ঞ। সুবিশাল সব স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে একেবারে নতুন করে। সেখানে উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে ভারতীয় কর্মীদের অবদানটাও নিশ্চয়ই কম ছিল না। বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরাও সেখানে নিজেদের ঘাম ঝড়িয়েছে।
তবে বাণিজ্যিকভাবে চিন্তা করলে ভারতকে প্রাধান্য দেওয়া একেবারেই যৌক্তিক। গানের এই চার লাইন অন্তত ভারতীয় দর্শকদের আরও বেশি আকৃষ্ট করবে। এবারের বিশ্বকাপে তারাও সম্পৃক্ত তেমনটা চিন্তা করে নিজেদের সময়টুকু ঢেলে দিবে স্টেডিয়ামে কিংবা টিভি সেটের সামনে। আর সেক্ষেত্রে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে টুর্নামেন্ট আয়োজনকারী সংস্থা। তাছাড়া কাতারে কাজ করা শ্রমিকদের সম্মানের সামান্য এক পন্থাও হতে পারে এটি।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে গানটিতে ফুটবলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেন দুষ্কর। তাছাড়া কাতারের সংস্কৃতিও ফুটিয়ে তোলা হয়নি। ঠিক সে কারণেই হতাশ ফুটবল সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শকরা। তবে নিশ্চয়ই মাঠের খেলা হতাশ করবে না কাওকে। একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস ইতোমধ্যেই তো পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিটা দলই তো প্রস্তুত নিজেদের সেরাটা উজাড় করে সোনালি সেই ট্রফিটা নিজেদের ঘরে তুলতে।