বাংলাদেশের নেই কোন হার্ডহিটার। এই আক্ষেপটা বাংলাদেশকে পোড়ায় নিশ্চয়ই। তবে সেই আক্ষেপ ঘোচানোর একটা রাস্তা হয়ত হতে চাইছেন নুরুল হাসান সোহান। উইকেটের পেছনে তিনি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম সেরা। এ নিয়ে তর্ক নেই। তবে ব্যাট হাতে বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাঁর। তবুও যেন একটু একটু কর আশা জাগাচ্ছেন সোহান।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে একটা সময় ব্রাত্য ছিলেন সোহান। কারণটা খুব স্পষ্ট। ব্যাটার হিসেবে সোহান খুব প্রশংসনীয় কিছু করতে পারতেন না। উইকেটের পেছনে তিনি দুরন্ত এক বাজপাখি। তবে সেদিন তো হয়েছে গত, যে একটা স্কিল দিয়েই থিতু হতে পারবেন জাতীয় দলের। তাছাড়া তাঁর লড়াইটা তো ছিল বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটারের সাথে।
একজন ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিম আরেকজন, দৃষ্টিনন্দন ব্যাটার লিটন দাস। এরা দুইজন আবার যথেষ্ট ভাল মানের উইকেট রক্ষক। সেদিক বিবেচনায় দলের সুযোগটা রীতিমত ছিল সোনার হরিণ। তাই বলে যে সুযোগ একেবারেই পাননি সোহান তেমনটা বলবার সুযোগ নেই। তিনি পেয়েছেন, তবে তার সীমাবদ্ধতা আটকে রেখেছিল তাকে। তিনি পাখা মেলে উড়ে বেড়াবার অপেক্ষাতেই যেন ছিলেন।
আর সে সময়টা যেন একটু একটু করে খুঁজে পাচ্ছেন নুরুল হাসান সোহান। এই বছরই তো তিনি পেয়ে গেলেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের স্থায়ী ঠিকানা। অন্তত লম্বা সময়ের জন্যেই তিনি জায়গা করে নিলেন এই ফরম্যাটের জাতীয় দলে। কেননা তাকে বিবেচনা করা হচ্ছে জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে। ইতোমধ্যে তাকে সহ-অধিনায়ক করে টি-টোয়েন্টি দলকে পাঠানো হয়েছে বিশ্বকাপ দলে।
এমন পরিবর্তনের কারণ ব্যাটিংয়ের নিজেকে আলাদা রোলে থিতু করেছেন সোহান। একজন স্লগার রোলে তিনি বেশ মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাতে রয়েছে। বাংলাদেশ দলের বেশ প্রকট এক দূর্বলতা বড় শট খেলতে না পারা। ২০২২ সালে বাংলাদেশ দল মোট ১৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে এখন অবধি। তাতে ছক্কা হাকিয়েছে কেবল ৫৪টি। বাংলাদেশ সরাসরি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলছে।
তবে টেস্ট খেলুড়ে যেসব দল বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড খেলেছে তাদের সাথে বাংলাদেশের যেন রয়েছে বিস্তর ফারাক। সবচেয়ে নিকটে অবস্থান করছে জিম্বাবুয়ে। তাঁরা বাংলাদেশের চাইতে দুইটি ম্যাচ বেশি খেলেছে, তবে ছক্কার ব্যবধান ১৪টি। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছক্কার সংখ্যা যথাক্রমে ৭৮ এবং ১৫৮। এখানেই বোঝা যায় বাংলাদেশ ঠিক কতটা পিছিয়ে। তবে এই পিছিয়ে পড়ার গল্পেও সোহান বেশ উজ্জ্বল।
এখন অবধি বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাকিয়েছেন তিনি। ১১ দফা তিনি বলকে হাওয়ায় ভাসিয়ে মাঠ ছাড়া করেছেন। সমান সংখ্যক ছক্কা অবশ্য আফিফ হোসেন ধ্রুবর ব্যাট থেকেও এসেছে। তবে ইনিংস বিবেচনায় এগিয়ে থাকছেন সোহান। কেননা তিনি আটটি ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন, খেলেছেন নয় খানা ম্যাচ। অবশ্য এক্ষেত্রে সোহানের ব্যাটিং পজিশনটাও খানিকটা দায়ী।
তাঁকে মূলত একজন ফিনিশারের রোলেই দেখতে চাইছে বাংলাদেশ। তিনি সেখানটায়ও নিজেকে প্রমাণ করবার চেষ্টা করছেন। অন্তত তার গড় তাই বলে। ৫৪.৩৩ গড় নিয়ে রয়েছে তিনি বাংলাদেশিদের মধ্যে সবার উপরে। আট ইনিংসের পাঁচ ইনিংসে তিনি ছিলেন অপরাজিত। এবছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড় ৩৫.৪৫, সেটা আফিফ হোসেন ধ্রুবর।
অন্যদিকে সোহানের স্ট্রাইকরেটের প্রশংসাও করতে হয়। সেখানেও সবার উপরেই অবস্থান সোহানের। ১৪৪.২৪ স্ট্রাকরেট তিনি রান করেছেন ১৬৩ তাও আবার ১১৩ বলের বিপরীতে। এই সব পরিসংখ্যান অন্তত সোহানের উন্নতির দিকেই কথা বলে। তাছাড়া তাঁর ব্যাটিংয়ের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তিনি রান করে যাচ্ছেন। শেষের দিকে ঝড়ো সব ইনিংস খেলে তিনি দলের সংগ্রহটা আরেকটু বাড়িয়ে নিচ্ছেন।
ঠিক এমন করেই অন্তত নিজের কাজটা সোহান করে যেতে পারলেও তা সুফল বয়ে নিয়ে আসবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। হার্ড হিটারের যেই আক্ষেপ সেটাও নিশ্চয়ই মিটবে। তবে সেক্ষেত্রে সোহানকে হতে হবে ধারাবাহিক। নিজের সীমাবদ্ধতার সমাধানও খুঁজে বের করতে হবে। সেটুকু কষ্ট নিশ্চয়ই করবেন সোহান, টাইগার ক্রিকেটের সার্থে।