হারিয়ে যাওয়াদের একটা লম্বা তালিকা রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। সে তালিকায় বহু সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের নাম খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এবার তো যেন নতুন করে নিজের নামটি সেখানে লেখাতে চাইছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলের থাকা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। বিশ্বকাপ দলের একজন খেলোয়াড় কেন হারিয়ে যাবেন, সে প্রশ্ন ওঠাটাও অবান্তর নয়। তবে তাঁর সাম্প্রতিক পারফরমেন্স অন্তত তাকে সহয়তা করে না, এই প্রশ্নের জবাব দিতে।
একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার যেন রীতিমত টেসলা গাড়ি। সবাই চায় তাঁর গ্যারেজে অন্তত একটি টেসলা গাড়ি থাকুক। তবে সবার ভাগ্যে তো আর তা জোটে না। ভারত খুঁজে পায় হার্দিক পান্ডিয়াকে। অস্ট্রেলিয়ার আছে মিচেল মার্শ অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে প্যাট কামিন্স। নিউজিল্যান্ডের জিমি নিশাম আর ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস। এমন সব ভারি ভারি নামের ভীরে সাইফউদ্দিন কেবলই এক আক্ষেপ।
বাংলাদেশের একটা ভরসা ছিল তাঁর উপর। বল হাতে কার্য্যকরী ইয়োর্কার, সেই সাথে ব্যাট হাতে হার্ডহিট করবার সক্ষমতা। এই দুইয়ের মিশেল ঘটিয়েই তো বাংলাদেশ ক্রিকেটে পদার্পণ করেছিলেন সাইফউদ্দিন। এক সমুদ্র সমান আশা জাগিয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট যেন বড্ড বেশি দুর্ভাগা। এখানে আশা জাগানিয়া সবাই নিজেকে ঠিক থিতু করতে পারে না। আবার ভিন্নভাবে চিন্তা করলে হয়ত পারে না, নিজেদের খামখেয়ালি আর সদিচ্ছার অভাবে।
‘তরুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার’ এই টার্মটা নিশ্চয়ই বেশ বিরক্তিকর শোনায় এখন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের উপস্থিতির যেন কোন কমতি নেই। তবুও কোন এক অজানা কারণে সেসব সম্ভাবনা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। হয়ত সঠিক দেখভালের অভাবটাও রয়েছে নিশ্চয়ই। ইনজুরির আগের সাইফউদ্দিন একেবারেই যাচ্ছেতাই ধরণের খেলোয়াড় ছিলেন তেমনটা বলবার সুযোগ নেই। কিন্তু ইনজুরি থেকে ফিরেই তিনি হয়ে গেছেন বিবর্ণ।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অব্যবস্থাপনার কমতি নেই। তাছাড়া সাইফ নিজেকে তেমন একটা প্রমাণ করতেও পারেননি। শুধু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের হিসেবটা দেখলেই বিষয়গুলো আরও খানিকটা স্পষ্ট হয়। ৩৩টা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে সাইফউদ্দিনের উইকেট সংখ্যা কেবল ৩৪টি। গড়, ইকোনমি সেসবের হিসেবে আর না যাওয়াই ভাল। ব্যাট হাতে তাঁর রান মোটে ১৯৯, স্ট্রাইকরেট প্রায় ১১৪।
অথচ একজন ডেথ বোলার এবং স্লগার রোলেই তিনি খেলে থাকেন জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলে। নিজের রোলে ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে আদৌ কি পেরেছেন সাইফ? সোজা সাপ্টা উত্তর, তিনি ব্যর্থ। ব্যর্থতা আরও ডালপালা মেলেছেন ২০২২ সালে। এই সময় তিনি দলের পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ নন। টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন চার ম্যাচ। যথারীতি তাঁর ব্যর্থতার যাত্রা ধারাবাহিক।
ব্যাট করবার সুযোগ তিনি সচারচর পাননা। সেখানেও ব্যঘাত ঘটেনি। চার ম্যাচে দুই ইনিংস ব্যাট করেছেন সাইফউদ্দিন। হতাশার গল্পে সর্বোচ্চ তিন রান এবং সেটাই সর্বমোট। ব্যাট করবার সুযোগ মেলেনা নিয়মিত। তবে বল হাতে তো তিনি পরিকল্পনার অংশ, অন্তত যেই ম্যাচ খেলেন আরকি। সেখানটায়ও নতুন কোন তথ্য নেই পুলকিত করবার মত। সর্বসাকুল্যে তিন উইকেট, ইকোনমি রেট কাটায় কাটায় ১০.০০।
একে সাইফ ব্যাট করবার সুযোগ পাচ্ছেন না, অন্যদিকে তিনি বল হাতে নিজের সুযোগ হেলায় হারাচ্ছেন। এমন একজন খেলোয়াড়কে আসলে বাংলাদেশ দলে খুব বেশি প্রয়োজন রয়েছে কি না সে প্রশ্ন থেকেই যায়। অবশ্য ‘নাই মামার থেকে কানা মামা ভাল’ এই তত্ত্বে বিশ্বাসী হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু আসলে সাইফের এমন বিদঘুটে বর্ণনাতীত পারফরমেন্স আর যাই হোক সুফল বয়ে নিয়ে আসবে না।
টাইগার ভক্তদের আক্ষেপটা বাড়ুক। তবুও অপ্রয়োজনীয় একজন একাদশে কিংবা দলের জায়গা পাওয়াটা নিশ্চয়ই কোন ভাল সংস্কৃতির প্রচার ঘটায় না। তাঁর জায়গায় বরং মেহেদি হাসান মিরাজ খেলতেই পারে। তাতে অন্তত একজন কার্য্যকর অলরাউন্ডারকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।