ডার্বি শব্দটি আমরা ফুটবলেই শুনে থাকি তবে ক্রিকেটে যখন আফ্রিকার দুইটি দেশ মুখোমুখি হচ্ছে এই লড়াইকে নিশ্চয়ই আফ্রিকান ডার্বি বলতেই পারি। ক্রিকেটে এশিয়ান দেশের মধ্যে প্রায় ম্যাচ হতে দেখলেও আফ্রিকার দলগুলোর লড়াই যেন অনেকটা অমাবস্যার চাঁদের মতোই বলা যায়।
২০২২ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সৌজন্যে সেই অমাবস্যার চাঁদের দেখা মিললো অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে। যে চাঁদের জোৎস্না গায়ে মেখে দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ের সুবাতাস পেলেও শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিরই জয় হয়েছে। জিম্বাবুয়ের ৬৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা তিন ওভারেই ৫১ রান তুলে। কিন্তু, বেরসিক বৃষ্টির কারণে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা।
হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে টসে জিতে শুরুতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় জিম্বাবুয়ে। তবে খেলোয়াড়দের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার পরপরই মাঠে হাজির হয় বেরসিক বৃষ্টি। বৃষ্টিতে প্রায় ঘন্টা দুয়েকের বেশি সময় খেলা বন্ধ থাকার পর অবশেষে বৃষ্টি থামলে ৯ ওভারের ম্যাচের ঘোষণা দেয় আম্পায়াররা। শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা পরিকল্পনাহীন ভাবে এলোপাতাড়ি শট খেলতে লাগলে ইনিংসের চার ওভারের মধ্যেই মাত্র ১৯ রানে চার উইকেট হারায়।
তৃতীয় ওভারে লুঙ্গি এনদিগির বলে ইনফর্ম সিকান্দার রাজা ও রেগিস চাকাভা উইকেটরক্ষক ডি ককের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যাওয়ার আগে ও পরে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন ওয়েইন পার্নেলের বলে ক্যাচ দিয়ে এবং শীন উইলিয়ামস রান আউটে কাঁটা পড়ে।
এই অবস্থায় যখন অল্প রানেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা জিম্বাবুয়ের ব্যাট হাতে লড়াই করার মতো সংগ্রহ এনে দেন দুই মিডল অর্ডার ব্যাটার ওয়েসলি মাধবিরে ও মিল্টন শুম্বা। ওয়েসলি মাধবিরের ১৮ বলে ৩৫ এবং মিল্টন শুম্বার ২০ বলে ১৮ রানে ভর করে ৯ ওভারে ৫ উইকেটে ৮০ রানে পৌঁছায় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার লুঙ্গি এনদিগি দুইটি উইকেট নেন।
জবাব দিতে নেমে ওপেনার কুইন্টন ডি কক পেসার টেন্ডাই চাতারার প্রথম ওভারেই তুলে নেন ২৩ রান। এরপর আবারও শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টি থেকে ফিরলে সময়ের অভাবে আবারও ম্যাচ ছোট করা হয়। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ৭ ওভারে ৬৪ রানের টার্গেট দাঁড়ায়। প্রথম ওভারেই ২৩ রান তুলে নেওয়া ডি কক বৃষ্টির পরেও একই মারমূখী। রিচার্ড এনগারাভার পরের ওভারে তুলে নেন আরো ১৭ রান।
দুই ওভারেই ৪০ রান নিয়ে জয়কে হাতছোয়া দূরত্বে নিয়ে আসেন এই উইকেট কিপার ব্যাটার। মজার ব্যাপার হলো শুরুর দুই ওভারে ৪০ রানের মধ্যে এক নো বল বাদে বাকি ৩৯ রানই হলো ডি ককের। আরেক ওপেনার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা যে এখনো কোনো মুখোমুখি হতে পারেন নি। এরপরের ওভারে রানের রাশ টেনে ধরেন জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা। তার ওভারে ১১ রান নিয়ে জয়ের জন্য মাত্র ১৩ রানের দূরত্বে যখন প্রোটিয়ারা তখনই বৃষ্টির আগমন।
দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ের নি:শ্বাস দূরত্বে থাকলেও দিনটা যে কেবলই বৃষ্টির। আইসিসির নির্ধারিত ম্যাচের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং বৃষ্টি না থামায় ম্যাচ পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। আইসিসি নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচের ফল ঘোষণার জন্য প্রতি ইনিংসে কমপক্ষে ৫ ওভার সম্পন্ন হতে হবে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস মাত্র ৩ ওভারেই বৃষ্টি চলে আসায় খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা।
হারতে হারতে ড্র করা জিম্বাবুয়ে এই ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে খুশি থাকলেও, অপরদল দক্ষিণ আফ্রিকা পূর্ন পয়েন্ট না পাওয়ায় চরম হতাশ। গ্রুপ ১ এর প্রতিটি দলের প্রথম ম্যাচ শেষে রানরেটের ব্যবধানে ভারতকে পিছনে ফেলে গ্রুপের শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। ভারত দুই নাম্বারে। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে। গ্রুপের বাকি দুই দল পাকিস্তানের অবস্থান পঞ্চম ও নেদারল্যান্ডস সবার শেষে।