প্রতিপক্ষ দলের চেয়ে একজন ব্যাটারের একার রান বেশি- এটি নিয়ে ফেসবুক পাড়ায় মজার মজার টিপ্পনীর আনাগোনা ভালই দেখা যায়। অর্থাৎ একের কাছে দলের হার। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ঘটনা অবশ্য বিরল নয়। একটু কান পাতলেই, এমন বহু ম্যাচের কথা শোনা যায় যেখানে একজন ব্যাটারের রানও প্রতিপক্ষের সবাই মিলে করতে পারেনি।
এই যেমন এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই এমন ঘটনার দেখা মিলেছে ৩ টি। সেই সব ম্যাচের দৃশ্য নিয়েই খেলা ৭১ এর আজকের আয়োজন।
- পাথুম নিসাঙ্কা ৭৪, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৭৩
সুপার ১২-তে ওঠার লড়াইয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে এ ম্যাচটি শ্রীলঙ্কাকে জিততেই হত। এ দিন প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা স্কোর বোর্ডে তুলতে পারে ১৫২ রান।
দলের ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা একাই করেন ৭৪ রান। ৬ চার আর ২ ছক্কায় তিনি এ দুর্দান্ত ইনিংসটি সাজান। জবাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ম্যাচের লক্ষ্য তো দূরে থাক সবাই মিলে নিসাঙ্কার রানটাকেও স্পর্শ করতে ব্যর্থ হয়। তারা অলআউট হয় ৭৩ রানে। এক তরফা ম্যাচের চূড়ান্ত এক নমুনা এই ম্যাচ।
- রাইলি রুশো ১০৯, বাংলাদেশ ১০১
বিশ্বকাপ শুরুর আগে খেলা শেষ ম্যাচেও ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন সেঞ্চুরি। সেই ফর্ম রাইলি রুশো টেনে এনেছিলেন এবারের বিশ্বকাপেও। বাংলাদেশের বিপক্ষে সুপার-১২ এর ম্যাচে এ দিন যেন রূদ্রমূর্তি ধারণ করেছিলেন প্রোটিয়া এ ব্যাটার। সিডনির মাঠে ৭ চার আর ৮ ছক্কায় খেলেন ১০৯ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস।
আর তাঁর ঐ ঝড়ো ব্যাটিংয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছিল দুইশো পেরোনো স্কোর। ২০৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালই করেছিল বাংলাদেশ। কাগিসো রাবাদার করা প্রথম ওভারেই শান্ত-সৌম্য তুলে ফেলে ১৭ রান। তবে ক্ষণ সময়ের সে আলোক ঝলকানি মিলিয়ে যায় কিছুক্ষণ বাদেই।
টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডার- সবাই উইকেটে আসা যাওয়ার মিছিলে শামিল হন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে তুলতে পারে সর্বসাকুল্যে ১০১ রান। অর্থাৎ রাইলি রুশোর ইনিংসটাকেও টপকাতে এ দিন ব্যর্থ হয় বাংলাদশি ব্যাটাররা।
- গ্লেন ফিলিপস ১০৪, শ্রীলঙ্কা ১০২
শুরু থেকেই এবারের বিশ্বকাপে ছন্দে নেই এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। সুপার-১২ তে ওঠার লড়াইয়ে একে তো প্রথম ম্যাচে নামিবিয়ার কাছে হেরেছে তারা। এরপর বেশ ঘাম ঝরিয়ে সুপার-১২ তে উঠলেও চূড়ান্ত পর্বে এসে খুব একটা লড়াইয়ের রেশ তৈরি করতে দেখা যায়নি লঙ্কানদের। সুপার-১২ এ প্রাপ্তি বলতে শুধু আইরিশদের বিপক্ষে জয়। এ ছাড়া কিউইয়ের বিপক্ষে কোনো প্রতিরোধই গড়তে দেখা যায়নি তাদের।
তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে শুরুর আলোটা জ্বেলেছিল লঙ্কানরাই। ১৫ রানের মাঝেই তারা ফিন অ্যালেন, ডেভন কনওয়ে, কেন উইলিয়ামসের উইকেট তুলে নেয়। তবে পরবর্তীতে একাই দলকে টেনে নিয়ে যান গ্লেন ফিলিপস।
দলীয় বিপর্যয় এড়ানোর পাশাপাশি তিনি রানের গতিও সচল রাখার চেষ্টা করেন। এরপর ব্যক্তিগত ফিফটি পূরণ করার পর তিনি নিজের সেঞ্চুরিও তুলে নেন। ৬৪ বলে খেলেন ১০৪ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। আর তাঁর কল্যাণেই কিউইরা ১৬৭ রানের লড়াই করার মত একটা পুঁজি পায়।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে এবার বোল্ট, সাউদিদের পেসের তোপের মুখে পড়ে লঙ্কান ব্যাটাররা। ৮ রানেই তারা হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। আর সেখানেই মূলত ম্যাচ শেষে হয়ে যায়। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে তো গ্লেন ফিলিপস হাল ধরেছিলেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার হয়ে গ্লেন ফিলিপসের মত কাজটা এ দিন কেউ করতে পারেননি।
মন্দের ভাল বলতে ভানুকা রাজাপাকসে, দাসুন শানাকা- এই দুজন ত্রিশোর্ধ ইনিংস খেলেছিলেন। তারপরও দলের রান ১০০ পেরোনো নিয়ে ছিল শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত ১০২ রানে থেমে যায় শ্রীলঙ্কার ইনিংস। আর এখানেই বিব্রতকর এক ঘটনার সম্মুখীন হয় তারা। গ্লেন ফিলিপসের ইনিংসকেও অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয় শ্রীলঙ্কার পুরো ব্যাটিং ইনিংস।