আন্ডাররেটেড ওয়ানডে গ্রেট

গেল শতাব্দীর নব্বই দশক থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দী শুরুর দিক পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া দল ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। অপ্রতিরোধ্য, দুর্দান্ত! সেই দলের অন্যতম এক সদস্য ছিলেন ড্যারেন স্কট লেহম্যান। মিডল অর্ডারের এক শক্তপোক্ত ভিত ছিলেন তিনি। ওয়ানডে দলে তাঁর একটা আলাদা জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

গেল শতাব্দীর নব্বই দশক থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দী শুরুর দিক পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া দল ছিলো মূর্তিমান আতঙ্ক। অপ্রতিরোধ্য, দুর্দান্ত! সেই দলের অন্যতম এক সদস্য ছিলেন ড্যারেন স্কট লেহম্যান। মিডেল অর্ডারের এক শক্তপোক্ত ভিত ছিলেন তিনি।

ওয়ানডে দলে তাঁর একটা আলাদা জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শুধু যে মিডেল অর্ডারেই খেলতে পারতেন তিনি বিষয়টা তেমন নয়। তিনি একাধারে একজন ফিনিশার ও পার্ট টাইম বোলার হিসেবেও দলের জয়ে অবদান রাখার চেষ্টাটা করে গেছেন ক্যারিয়ারের একেবারে শুরু থেকে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ সুখ্যাতি ও সম্মান ছিল লেহম্যানের। তিনি জন্মেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ অংশে ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০ সালে। খুব ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রেমে পড়ে যান লেহম্যান। অনুশীলন করতে থাকেন। খেলতে থাকেন স্কুল ক্রিকেট থেকে শুরু করে বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলো।

তাঁর মধ্যে থাকা প্রতিভা তাঁকে খুব একটা বেশি সময় অপেক্ষা করায়নি। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই তিনি সুযোগ পেয়ে যান প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে। ১৯৮৭/৮৮ সালে প্রথমবারের মতো প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে পা রাখেন ড্যারেন লেহম্যান। তারপরে গল্পে তিনি একজন কিংবদন্তি।

প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট তিনি শেষ করেছিলেন ২৫ হাজার রানের একটি পরিসংখ্যান নিয়ে। বাঁ-হাতি এই ব্যাটার প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে ম্যাচ খেলেছিলেন ২৮৪টি। যার মধ্যে থেকে তিনি শতক হাঁকিয়েছিলেন ৮২টি। আর অর্ধ-শতকের সংখ্যা ছিল ১১১টি। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় ৫৭.৮৩ গড়ে রান করা এই খেলোয়াড় অস্ট্রেলিয়া জাতীয় টেস্ট দলে খুব একটা বেশি সুযোগ পাননি। প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার সাত বছর পড়ে তিনি সুযোগ পান অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন বিধ্বংসী ওয়ানডে দলে।

১৯৯৬ সালে ওয়ানডে অভিষেক হওয়ার দুই বছর বাদে লেহম্যানে তাঁর ‘ব্যাগি গ্রিন’ ক্যাপটি পেয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। ভারতের বিপক্ষে তাঁর অভিষেক হওয়ার আগেই সিরিজ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল অজিদের। শেষ ম্যাচটি ছিল নিয়ম রক্ষার কিংবা সান্ত্বনার একটি জয় তুলে নেবার।

সেই ম্যাচে ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ পড়ে অজিদের হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিলেন লেহম্যান। নিজের প্রথম ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি তুলে নিয়েছিলেন একটি অর্ধ-শতক। তারপর কেবল পাঁচটি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন লেহম্যান পরবর্তী বারো মাসে। এরপরই শুরু হয় তাঁর অপেক্ষা।

প্রায় তিন বছরের অপেক্ষা অবসান হয়। লেহম্যান আবার খেলার সুযোগ পান টেস্ট ক্রিকেট। এ যাত্রায় ২০০২-২০০৪ সাল অবধি টানা তিনি ছিলেন অজিদের টেস্ট দলের অংশ। সেই সময়ে সহ-অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছিলেন লেহম্যান।

সেই ২০০৪ সালেই তিনি খেলে ফেলেন নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। বক্সিং ডে টেস্টে ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শেষ হয় তাঁর লাল বলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। মাত্র ২৭ ম্যাচ দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে তিনি সর্বোচ্চ ১৭৭ রান করেছিলেন।

এছাড়া টানা দুই বছর যখন টেস্ট দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন তখন লেহম্যান টেস্ট ক্যারিয়ারের পাঁচটি শতকের দেখা পেয়েছিলেন। তাছাড়া তাঁর পুরো ক্যারিয়ারে তিনি ৪৪.৯৫ গড়ে রান তুলেছিলেন ১৭৯৮টি। টেস্ট ক্রিকেটে অবজ্ঞার স্বীকার হলেও তিনি নিজেকে থিতু করে ফেলেছিলেন ওয়ানডে একাদশে। রঙিন পোশাকে মিডেল অর্ডারের হাল ধরা থেকে শুরু করে ম্যাচ শেষ করে আসার মতো সুদক্ষ একজন খেলোয়াড়ের বেশ কদর ছিল সে সময়ের অস্ট্রেলিয়া দলে।

ওয়ানডে দলে চার নম্বর পজিশন থেকে শুরু করে ভিন্ন ভিন্ন সব পজিশনে খেলেছিলেন লেহম্যান। তবে ভিন্ন সব পজিশনে ব্যাট করেও তিনি তাঁর ক্যারিয়ার শেষ করেছিলেন ৩৮.৯৬ এর একটা ব্যাটিং গড় নিয়ে। ওয়ানডে বিচারের এমন গড় বেশ প্রশংসনীয়। ১১৭ ম্যাচে ৩০৭৮ রানের বিপরীতে ৫২টি উইকেটও নিয়েছিলেন বাঁ-হাতি অফ স্পিন করে। তাঁর বোলিং গড়টাও বেশা আশাব্যঞ্জক। ২৭.৭৮।

তবে টেস্টে তাঁর সুযোগ পাওয়ার মতোই অবহেলিত ছিল তাঁর বোলিং। সেই যাই হোক লেহম্যান ২০০৭ সাল পর্যন্ত অব্যহত রেখে গিয়েছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেট। তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড় ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ হওয়া পাশপাশি বেশ সম্মানিত একজন খেলোয়াড়ও ছিলেন ড্যারেন লেহম্যান। তাঁর সম্মানে অ্যাডেলেড ওভাল স্টেডিয়ামে স্থাপন করা হয়েছে ব্রোঞ্জের এক বিশাল মূর্তি।

এমন ভাস্কর্য স্থাপনই প্রমাণ করে দেয় ঠিক কি পরিমাণের জনপ্রিয় ছিলেন তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে। তাছাড়া এ থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের হয়ে তাঁর রাখা অবদানের বহি:প্রকাশও এই ভাস্কর্য। কীর্তিমান একজন খেলোয়াড় হয়ত অমর হয়ে রইবেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে। কোচ হিসেবেও তিনি সফল ছিলেন। জাতীয় দলেও কোচিং করিয়েছেন, সেই অধ্যায়টা শেষ হয় বল টেম্পারিংয়ের কেলেঙ্কারি দিয়ে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...