অসম্ভব সুতোয় বাঁধা সেমির স্বপ্ন

বাবর আজম দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন আগেরবারের অসমাপ্ত পথের শেষ দেখতে। কিন্তু মাত্র তিন ম্যাচ খেলেই পাকিস্তানের বিশ্বকাপ যাত্রা এমনই অবস্থায় উপনীত হয়েছে বাকি পথটুকু পাড়ি দিয়ে চূড়ায় পৌঁছাতে রীতিমত অসম্ভবকে সম্ভব করতে হবে। 

প্রথম ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে জিততে থাকা অবস্থায় হারের পর জিম্বাবুয়ের কাছে অপ্রত্যাশিত হার। দুই হারে টালমাটাল পাকিস্তান তৃতীয় ম্যাচে এসে পেয়েছে জয়ের দেখা। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে হারের গেরো খুলেছে পাকিস্তান, তবে এই জয়ে সেমির দরজা খুলবে কি ?

যদি আপনি চরম বাস্তববাদী হয়ে থাকেন এই প্রশ্নের উত্তর হবে না। আর যদি আশাবাদী হোন তাহলে কাগজে কলমে আপনার জন্য এখনও সুযোগ আছে। তবে এই রাস্তাটা অনেকটা ‘তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার মতোই কঠিন’। যে পথে নিজেকে জিততে তো হবেই, বাকি দলগুলোর দিকে রাখতে হবে নজর। আপনি জিতলেও বাকি দল গুলো যদি অসামান্য ভাল খেলে পা পিছলে পড়ে যাবেন একদম মাটিতেই। 

দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতকে হারানোর পর পাকিস্তানের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে হলে আসছে বুধবার ভারতকে হারাতে হবে বাংলাদেশের। আর পাকিস্তানকেও জিততে হবে নিজেদের বাকি ম্যাচ গুলো। তবে এবারের বিশ্বকাপে চমক দেওয়া জিম্বাবুয়ে যদি নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে জিতে যায় তাহলে উপরের সমীকরণ পাকিস্তান দলের কোনো কাজেই আসবে না। 

বছর জুড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনের ত্রুটিগুলো যখন বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ানদের দুই একটা ইনিংস দিয়ে ঢেকে দেওয়া হত বিপর্যয় আসা অনেকটা অবশ্যম্ভাবীই ছিল। অধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পরেও ব্যাটিং লাইনকে অনেকটা উপেক্ষা করে গিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ফলাফল বিশ্বকাপে ভরাডুবি।

বিশ্বকাপে বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতাই ছিল পাকিস্তানের মুখ থুবড়ে পড়ার মূল কারণ। যদিও মোহাম্মদ রিজওয়ান নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে রানে ফিরেছে।

তবে পরের ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে। যাদের রয়েছে লুঙ্গি এনগিডি, এনরিচ নরকিয়া আর কাগিসো রাবাদার মত বিধ্বংসী বোলাররা। তাদের বিপক্ষে দুই ওপেনারের ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকবে পাকিস্তান। যদি বিফল হয় সকল সম্ভাবনা মাটিচাপা দিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেবে পাকিস্তান।

অস্ট্রেলিয়ার মত দেশে পেস বোলিং অলরাউন্ডার ছাড়া বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ায় মানে প্রতিপক্ষ থেকে পিছিয়ে ম্যাচ শুরু করা। একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার ব্যাটে কিংবা বল হাতে দলকে কতোটা এগিয়ে দিতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মার্কাস স্টোয়িনিস। বিশ্বকাপ জুড়েই একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাবে ভুগেছে পাকিস্তান।

দুই ম্যাচ হেরে যখন রান রেটে পিছিয়ে পাকিস্তান নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সুযোগ ছিল রানরেটকে বাড়িয়ে নেয়ার। তবে মাত্র ৯১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে বাবর আজমদের ১৩.৫ ওভার পার করে দেওয়াই বলে দেয় লক্ষ্যহীন ক্রিকেট খেলছে তাঁরা। 

শাহীন শাহ আফ্রিদির ম্যাচ ফিটনেসের অভাব থাকলেও পাকিস্তানের বোলিং লাইন বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা। নাসিম শাহ, হারিস রউফ, মোহাম্মদ ওয়াসিমদের নিয়ে বিশ্বের যে কোনো ব্যাটিং লাইনকে ধসিয়ে দিতে পারে। তবে ব্যাটারদের অধারাবাহিক পারফরম্যান্সের সাথে অধিনায়ক বাবর আজমেরও নানা ভুল সিদ্ধান্ত দলকে পিছিয়ে দিচ্ছে অনেকটা।

পাকিস্তানের ভাগ্য যদিও চিকন এক সুতোর উপর ঝুলছে বাবর আজমদের উচিৎ হবে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে বাকি ম্যাচ জিতে আসার চেষ্টা করা। দুর্বল ভিত্তি থেকে কখনোই সাফল্যের আশা করা যায় না। যদিও বা শুরুর দিকে ভাল করে তবে এক পর্যায়ে গিয়ে ধাক্কা খেতে হয়। বর্তমানে ঠিক একই পরিণতি ভোগ করছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল।

এবারের বিশ্বকাপে বাবর আজমরা কতোটা পথ পাড়ি দিতে পারবে তা সময়ই বলে দিবে। তবে বিশ্বকাপে ভরাডুবির ফলে উত্থাপিত সমস্যাগুলো ঝেড়ে ফেলে পিসিবির উচিত বিশ্বকাপের পর নতুন করে শুরু করা। সামনে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, এখন থেকেই যদি পূর্বের ভুল গুলো শুধরানোর চেষ্টা করা না হয় তবে বলাই যায়, ভবিষ্যতে আরও বড় লজ্জা অপেক্ষা করছে পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link