জার্সি জুড়ে ধুলোর ছড়াছড়ি। জীবনের সেরা মুহূর্তটায় নিশ্চয়ই ওসব তেমন কিছুই না। ২০১৯ সালের লর্ডসের সেই ফাইনালে বেন স্টোকস স্বপ্ন জয়ের কারিগর। সেদিন থেকেই তো ইংল্যান্ডের নায়ক, পোস্টারবয়, আস্থাভাজন বেন স্টোকস। আরও বেশ কিছু বিশেষণ, তকমা নিশ্চয়ই জুড়ে দেওয়া যায় স্টোকসের নামের পাশে। কেননা টেস্টে ইংল্যান্ডের ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলাতেও তো রয়েছে বেন স্টোকসের অবদান।
প্রায় প্রতিটা দেশের এখন একটাই আশা, একজন বেন স্টোকস। মুহূর্তের মধ্যে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেবে। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী ব্যাটিং করবে, বল হাতে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলবে। বাংলাদেশ দলেই তো রয়েছে এমন আক্ষেপ। একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার দলের ভারসাম্যে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে। তেমন আরেক উদাহরণ ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া।
টেস্ট এবং ওয়ানডেতে বরাবরই বেশ কার্যকর একজন অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্ন উঠছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর অবদান নিয়ে। এমনটা হবার কারণ অবশ্য, এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর পারফরমেন্স। এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলে স্টোকস রান করেছেন কেবল ১৬ রান। স্টোকস কি আদৌ প্রত্যাশা মাফিক পারফর্ম করতে পেরেছেন? কিন্তু ভাববার বিষয় এই ফরম্যাটে স্টোকস আসলেও প্রত্যাশা করবার মত খেলোয়াড় কি-না।
টি-টোয়েন্টিতে তাঁর গড় ১৮ এর ঘরে। স্ট্রাইক রেটটা অবশ্য ১৩১ এর একটু বেশি। তবে ৪০ ম্যাচ খেলে তিনি রান করেছেন ৪৯১। এখানে তাঁর ব্যাটিং পজিশনটা অবশ্য অনেকটা প্রভাব ফেলে। তবুও তাঁর মত চ্যাম্পিয়ন মানসিকতার একজন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে এর থেকে ভাল ব্যাটিং প্রদর্শনের প্রত্যাশা করাই যায়। তাঁর ম্যাচ জয়ী ইনিংসের সংখ্যাও অত্যন্ত নগন্য।
অন্যদিকে তাঁর বোলিং পারফরমেন্সও খুব আহামরী নয়। ৩৩টি ইনিংসে তিনি হাত ঘুরিয়েছেন। উইকেট পেয়েছেন কেবল ২৪টি। ইকোনমি ৮.৪০ আর গড়টা প্রায় ৩৩। দলের কঠিন মুহূর্তে তিনি বল হাতেও খুব একটা কার্যকরী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পেরেছেন তেমন উদাহরণের দেখাও মেলে না সচরাচর। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোটামুটি চেনা কন্ডিশনেই খেলা হচ্ছে ইংলিশদের জন্য। কেননা প্রতিবছর অন্তত একদফা অজি কন্ডিশনে খেলবার সুযোগ পায় স্টোকসরা।
সেই চেনা কন্ডিশনে কেবল চারটি উইকেটই শিকার করতে পেরেছেন স্টোকস। এতসব পরিসংখ্যানের গল্প করবার একটাই কারণ। স্টোকস ঠিক যতটা আলোচিত তিনি ঠিক ততটা কার্যকর নন। অন্তত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। তিনি ওয়ানডে ক্রিকেটটা ছেড়েছেন। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে মনোযোগ দেবেন বলে। কিন্তু তিনি কি আদৌ পারছেন টি-টোয়েন্টিতে মনোযোগ দিতে। বোধ হয় তিনি সেটা পারছেন না।
তবুও টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সারির অলরাউন্ডার হিসেবেই বিবেচিত হন স্টোকস। কিন্তু পারফরমেন্স বিবেচনায় হার্দিক পান্ডিয়া, মার্কাস স্টোয়িনিসরা ঢের এগিয়ে তাঁর থেকে। এমনকি সার্বিক দিক বিবেচনায় টি-টোয়েন্টিতে তাঁর সতীর্থ ক্রিস ওয়োকসও চলনসই। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’। টি-টোয়েন্টিতে স্টোকসের চিত্র তাই।
তিনি যেহেতু ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়েছেন, সেহেতু নিশ্চয়ই চাইবেন টি-টোয়েন্টিতে তাঁর এই দৈন্যদশা দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে। নতুবা ইংল্যান্ডের মত একটা দলে তিনি স্রেফ নামের ভারেই খুব বেশিদিন খেলতে পারার কথা নয়। অন্যদিকে দলের বোঝা হয়ে থাকাটাও হয়ত খুব বেশিই পছন্দ হবে না স্টোকসের।