নব্য দ্বৈরথের বিতর্কিত মঞ্চায়ন

একটা সময় দৃশ্যপটটা ভিন্ন  ছিল। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার যেকোনো ফরম্যাটের ম্যাচই খুব নাটকীয়তার ছোঁয়া পেত না।

কিন্তু, ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকেই যেন সময়টা পাল্টে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে আইসিসি ইভেন্টগুলো এলেই যেন বদলে যায় সব হিসাব নিকাশ কিংবা অতীত ইতিহাস। নখ কামড়ানো সমাপ্তি, আবেগ, চিন্তা, দুশ্চিন্তা অথবা বিতর্ক – সবই এখন বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়র অনুষঙ্গ। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার মত রসদ দু’দলের পক্ষ থেকেই থাকে।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সেই রসদটা যেন একটু মিলিয়ে যেতে শুরু করেছিল। সেটা অবশ্যই বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের অধ:পতনের কারণে। তবে, বুধবার ম্যাচটা শুরু হওয়া মাত্রই বোঝা গেল এটা রীতিমত ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ’।

অ্যাডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিত ম্যাচটায় কি ছিল না! প্রত্যাশা মিটেছে কি না? – এই প্রশ্নটা করলে বরং ম্যাচটাকেই ছোট করা হবে। ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসানের বক্তব্য থেকে শুরু করে তাসকিন আহমেদের কোয়ালিটি পেস বোলিং, বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের ক্লাসিক স্ট্রোক প্লে, লিটন দাসের নান্দনিক পাওয়ার হিটিং, কিংবা বৃষ্টির ছেলে খেলা, লোকেশ রাহুলের সেই থ্রো, দারুণ কিছু ক্যাচ, ম্যাচ বাঁচানোর জন্য শেষ দিকে নুরুল হাসান সোহান ও তাসকিন আহমেদের প্রাণান্ত চেষ্টা অথবা ভারতের বোলিং – আলোচনার রসদের কোনো কমতি নেই।

তবে, সব ছাপিয়ে যেন বিতর্কটাই আবারও দানা বেঁধে উঠল। ২০১৫ সালে রোহিত শর্মা যখন ব্যাট করছিলেন, তখন আম্পায়ার নো বল ডেকে যেমন বিপদে পড়েছিলেন, কিংবা ২০১৮ এশিয়া কাপে লিটন দাসের বিপক্ষে স্ট্যাম্পিংয়ের সিদ্ধান্ত দিয়ে যেমন দাউ দাউ করে আগুন জ্বালিয়েছিলেন আম্পায়াররা – এবারও যেন সেই একই দৃশ্যই আসলে অন্য এক বা একাধিক ঘটনার মোড়কে।

ভেজা মাঠে খেলা আয়োজন নিয়ে বিতর্কের শুরু। সেখানে দায়িত্বরত ম্যাচ অফিসিয়ালদের সাথে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলতে দেখা যায় সাকিবকে। যদিও, দুই অধিনায়কের সম্মতিতেই ম্যাচটা মাঠে গড়িয়েছে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনেও সাকিব স্পোর্টিং মানসিকতাই দেখিয়েছেন।

ভারত ১৮৫ রানের লক্ষ্য দিলেও বাংলাদেশের ইনিংসের সাত ওভার শেষে বৃষ্টি নামায় ১৬ ওভারে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫১ রান। মানে শেষ নয় ওভারে দলের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৮৫ রান। বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যর্থ হয়। শেষ দিকে তাসকিন ও সোহানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

আকাশ ভাঙা শোক কিংবা উচ্ছ্বাসের মঞ্চে তখন নতুন বিতর্কের আবহ। মিক্সড জোনে সোহান অভিযোগ করলেন ফেক ফিল্ডিংয়ের। কাঠগড়ায় তখন বিরাট কোহলি। বৃৃষ্টির আগের ওভারটাতেই নাকি ফেক ফিল্ডিং করে লিটন কুমার দাস ও নাজমুল হাসান শান্তকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। সেটা আম্পায়ারের নজরে আসেনি। শান্তর আবেদন আমলে নেননি আম্পায়ার ম্যারিয়াস ইরাসমাস কিংবা ক্রিস ব্রাউন। বিরতিতে স্বয়ং টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরণ শ্রীরামও আম্পায়ারদের সাথে কথা বলেছেন, লাভ হয়নি।

যদিও, টেলিভিশন রিল্পেতে বিরাটের এই চেষ্টাটা ধরা পড়ে। তাহলে কি বাংলাদেশ অবিচারের শিকার? – সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ছুড়েছেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। মাঠেই আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত নিতে পারলে পাঁচ রান পেনাল্টি পেত বাংলাদেশ। শেষ অবধি বাংলাদেশ হেরেছে ওই পাঁচ রানেই। ফলে, আফসোসটা আরও যেন বাড়ল।

একটা আফসোস ভারতও করতে পারে। দীনেশ কার্তিকের রান আউটের সিদ্ধান্ত নিয়েও বিভ্রান্তি আছে। টেলিভিশন রিপ্লে দেখে পুরোপুরি বোঝা যায়নি। আগে শরিফুলের হাত স্ট্যাম্পে লেগেছে, না বল – সেটা স্পষ্ট ছিল না। ওখানে দীনেশ বেনিফিট অব ডাউট পাননি। পেলে ভারতের স্কোর আরও বড় হতে পারত হয়তো।

আবার এটাও ঠিক – এসব নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা – দু’টোই এখন অর্থহীন। আর এই আলোচনা ও সমালোচনা ছাপিয়ে দল দু’টোর অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য – এত যোজন যোজন পার্থক্য থাকার পরও এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মিছিল সত্যিই তো অপ্রত্যাশিত ছিল। এই মাসটা গেলেই তো বাংলাদেশ সফরে আসবে ভারত। এই রেষারেষিটা এবার ওই পর্যন্ত থাকুক।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link