বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ যাত্রাকে কি বলবেন? ভরাডুবি নাকি ঠিকঠাক কিংবা বড় অর্জন? সে নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে পারে প্রচণ্ড রকম। প্রত্যাশা হয়ত মেটাতে পারেনি। তবে বাস্তবতা তো ভিন্ন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে এবারের আসরেই এসেছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বাধিক জয়। ২০০৭ সালের পর, প্রথম জয় ও দুইটি জয়। তাই একেবারে অর্জন শূন্য বলা যায় না। অন্তত টাইগারদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে।
কিন্তু প্রাপ্তি একটা হয়েছে বটে। দলের ব্যাটারদের যাচ্ছে তাই পারফরমেন্স। আম্পায়ারদের অযৌক্তিক ও স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের বলি হওয়া। লিটন দাসের অনবদ্য এক ইনিংস। তাসকিন আহমেদের প্রতিটা দিনই ভাল বল করা। নাজমুল হোসেন শান্তর অকার্যকর দুইটি ফিফটি। এতসব কিছুর মাঝে আড়াল হয়েছে কেবল মুস্তাফিজুর রহমানের ধীরে ধীরে নিজের স্বরুপে ফেরার বিষয়টি।
খানিকটা ধাক্কা লেগেছে নিশ্চয়ই। আবার যারা একেবারে সমালোচনার চোখ খুলে প্রতিটা ম্যাচ অবলোকন করেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই বিষয়টি জানেন। মুস্তাফিজ নিজের ফর্মে ফেরার চেষ্টা করছেন। তাঁর থেকেও বড় বিষয় তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইতিবাচক বোলিং করেছেন। এবারের বিশ্বকাপে পদার্পণের পূর্বের মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং পারফরমেন্স ছিল চিন্তার কারণ। তবে দলকে খুব বেশি চিন্তা করতে হয়নি তাঁকে নিয়ে। তিনি নিরবে নিভৃতে তাঁর কাজটা করে গিয়েছেন।
মুস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেটা নিয়েও বেশ সমালোচনা হয়েছে, নিন্দাও হয়েছে। তবুও বিশ্বকাপে পাঁচটি ম্যাচেই তাঁকে সুযোগ দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সে সুযোগটা তিনি কাজে লাগিয়েছেন। দলের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেছেন। বিধ্বংসী মুস্তাফিজুর রহমানের দেখা হয়ত মেলেনি। তবে ইকোনমিকাল মুস্তাফিজ আবার ফিরেছেন। পরিসংখ্যান অন্তত সে যুক্তিই দেয়।
এবারের বিশ্বকাপের মূল পর্বে পাঁচ ম্যাচের সবগুলোতেই নিজের কোটা পূরণ করেই বল করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে জিম্বাবুয়ে ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে কোন ধরণের বাউন্ডারি হজম করতে হয়নি ফিজকে। তাছাড়া সবমিলিয়ে মোট আট খানা বাউন্ডারি হজম করেছেন ফিজ। যার একটি মাত্র ছক্কা। অথচ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ফিজকে ঘিরে চিন্তার বিষয়টাই ছিল তাঁর রান লিক করা। অতিরিক্ত বাউন্ডারি হজম করা।
সে জায়গা থেকে সরে এসেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ডেথ ওভারেও যেখানে বাংলাদেশের অন্যসব বোলাররা দেদারছে বাউন্ডারি হজম করেছেন সেখানে মুস্তাফিজ ছিলেন মিতব্যয়ী। ৫.৬০ ইকোনমি রেটটা নিশ্চয়ই মুস্তাফিজুর রহমানের নামের পাশেই মানায়। আর এই রেটেই তিনি বল করে গিয়েছেন পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে। ১১২ রান খরচ করেছেন তিনি। যেখানে বাংলাদেশের আরেক বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ভারতের বিপক্ষে এক ম্যাচেই ৫৭ রান হাত খুলে উপহার দিয়েছেন।
নিজের করা ১২০টা বলের মধ্যে ৪৯টি বল তিনি ডট বল করেছেন। তাঁর করা এই ডট বলগুলোই প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে বাংলাদেশের বাকি বোলাররা সে চাপটা ধরে রাখতে পারেননি। উইকেট শিকারেও হয়েছেন ব্যর্থ। সে দায়ভার অবশ্য মুস্তাফিজ নিজের কাঁধে নিতে চাইবেন না। নেওয়ার প্রশ্নও আসে না। সর্বোচ্চ ৩১ রান এসেছে তাঁর করা চার ওভারে। সেটা অবশ্য ভারতের বিপক্ষে। দিনটা বাংলাদেশের সমর্থক থেকে শুরু করে প্রতিটা বোলার ভুলে যেতে চাইবে।
তবে একটা জায়াগয় ঘাটতি রয়ে গিয়েছে মুস্তাফিজুর রহমানের। আর সেটা উইকেট শিকারে। আগের মত ক্ষুরধার নন মুস্তাফিজ। এটা সবাই জানেন বা বোঝেন। মুস্তাফিজ নিজেও হয়ত এই বিষয়টি আন্দাজ করতে পারেন। তবুও তিন খানা উইকেট রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এটা দিয়ে অন্তত মুস্তাফিজের নিজেকে ফিরে পাওয়ার প্রয়াসকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
মুস্তাফিজুর রহমান চেষ্টা করছেন। সঠিক নির্দেশনা হয়ত তাঁকে নিজের ট্র্যাকে ফেরাবে। তবুও আগের সেই ধারালো মুস্তাফিজ ফিরবে কি-না তা নিয়ে একটা সংশয় থেকেই যায়। শিকারি মুস্তাফিজ হতে হলে আরও অস্ত্র যুক্ত করতে হবে ফিজের অস্ত্রাগারে। একটা জায়গায় ক্রিকেট তো আর থেমে থাকে না।