পাওয়ারিং আপ ইন পাওয়ার প্লে

আক্রমণাত্নক ব্যাটিংই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাফল্যের মূলমন্ত্র। বিশেষ করে ইনিংসের শুরুতে পাওয়ারপ্লে কাজে লাগিয়ে আক্রমণাত্নক ব্যাটিংয়ের প্রত্যাশা থাকে ওপেনারদের কাছে থেকে। সেই চাহিদা তাঁরা পূরণও করছেন দারুণভাবে।

আক্রমণাত্নক ব্যাটিংই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাফল্যের মূলমন্ত্র। বিশেষ করে ইনিংসের শুরুতে পাওয়ারপ্লে কাজে লাগিয়ে আক্রমণাত্নক ব্যাটিংয়ের প্রত্যাশা থাকে ওপেনারদের কাছে থেকে। সেই চাহিদা তাঁরা পূরণও করছেন দারুণভাবে। আসুন দেখে নেয়া যাক তিন বিধ্বংসী ওপেনারকে যারা কিনা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লের মাঝেই তুলে নিয়েছিলেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক।

  • স্টিফেন মাইবার্গ- নেদারল্যান্ডস

টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সিলেটে আয়ারল্যান্ড বনাম নেদারল্যান্ড ম্যাচটি। পরের রাউন্ডে উঠতে হলে আইরিশদের দেয়া ১৮৯ রানের লক্ষ্য মাত্র ১৪.২ ওভারের মধ্যে পেরোতে হত ডাচদের। আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও সম্ভব করেছিল তাঁরা এবং ওপেনিং এ নেমে স্টিফেন মাইবার্গ আক্রমণাত্নক ব্যাটিংয়ের সুর গেঁথে দিয়েছিলেন পুরো দলের মাঝে।

ব্যাট করতে নেমে ম্যাকব্রাইনের দ্বিতীয় ওভারেই টানা চারটি ছক্কা হাঁকান মাইবার্গ। এক ওভার বাদেই আবারও বিধ্বংসী রূপে তিনি, কুসাকের এক ওভারে হাঁকান তিনটি ছক্কা। ফিফটি তুলে নিতে ছয় ওভারও লাগেনি, পাঁচ ওভারের আগেই ১৭ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। টি -টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে ফিফটি তুলে নেয়া প্রথম ব্যাটসম্যান ছিলেন মাইবার্গ। সেদিন তাঁর ২৩ বলে ৬৩ রানের ইনিংসের গড়ে দেয়া ভীতের উপর দাঁড়িয়ে ১৩.৫ ওভারেই ম্যাচ জিতে নিয়েছিল ডাচরা।  

  • লোকেশ রাহুল- ভারত

মাইবার্গের সেই অনবদ্য ফিফটির পর বিশকাপের পাওয়ার প্লেতে দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পেতে সময় লেগেছে সাত বছর। ২০২১ টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে নাম লেখান ভারতের লোকেশ রাহুল। সেবার দুবাইতে ভারতের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছিল স্কটল্যান্ড। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৮৫ রানে গুটিয়ে যায় স্কটল্যান্ড। জবাবে ভারতের হয়ে উদ্বোধন করতে নামেন রাহুল এবং রোহিত শর্মা। রোহিত খানিকটা রয়েসয়ে শুরু করলেও শুরু থেকেই রাহুল ছিলেন আক্রমণাত্নক মেজাজে। 

দ্বিতীয় ওভারেই হুইলকে বাউন্ডারি ছাড়া করেন তিনবার। আক্রমণ থামেনি পরের ওভারেও, ইভান্সের ওভার থেকে তুলে নেন ১৮ রান। মাঝে পুরো এক ওভার রোহিত শর্মা স্ট্রাইকে থাকলে ফিফটির প্রতীক্ষা দীর্ঘায়িত হয় রাহুলের। অবশেষে পাওয়ার প্লে শেষের মাত্র দুই বল আগে ১৮ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন এই ওপেনার। তাঁর ১৯ বলে ৫০ রানের ইনিংসের সুবাদে মাত্র ৬.৩ ওভারেই ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এখনও নিজের সেরাটা দিতে না পারা রাহুল সেদিন জানান দিয়েছিলেন নিজের সামর্থ্যের।

  • লিটন দাস- বাংলাদেশ

বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ বরাবরই আলাদা উত্তাপ ছড়ায় দুই দেশের সমর্থকদের মাঝে। এবারের বিশ্বকাপেও মর্যাদার লড়াইয়ে প্রথমে ব্যাট করে ১৮৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় ভারত। ১৮৫ রান তাড়া করতে নাজমুল শান্তকে সাথে নিয়ে উদ্বোধন করতে নামেন লিটন দাস। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ওয়ানডে এবং টেস্টে নিজেকে প্রমাণ করলেও টি-টোয়েন্টি তাঁর সেরাটা কখনোই দেখাতে পারেননি। বড় তারকারা নিজেদের প্রমাণের জন্য বড় মঞ্চকেই বেছে নেন, এই আপ্তবাক্যকে সত্য মেনেই যেন ভারত ম্যাচকে বেছে নেন লিটন।

 

দ্বিতীয় ওভারেই আর্শদ্বীপ সিংকে তিন চার মেরে শুরু, পরের ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারকে হাঁকান এক ছক্কা এবং দুইটি চার। মাঝের দুই ওভার কিছুটা রয়েসয়ে খেললেও পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আরও বিধ্বংসী লিটন, দ্বিতীয় বলেই দারুণ এক ছক্কা হাঁকিয়ে মাত্র ২১ বলে তুলে নেন ফিফটি। রান আউট হওয়ার আগে মাত্র ২৭ বলে খেলেছিলেন ৬০ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। কিন্তু তাঁর গড়া ভীতের উপর দাঁড়িয়ে ম্যাচ জেতাতে পারেননি বাকি ব্যাটসম্যানরা। ফলে ফিফটি করে লিটন রয়ে গিয়েছেন ট্র্যাজিক হিরো হয়েই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...