নানা নাটকীয়তা শেষে এবারের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান। দুই দলের রয়েছে তারকার ছড়াছড়ি। প্রত্যেকেই সামর্থ্য রাখেন নিজেদের দিনে ম্যাচের চিত্রনাট্য পালটে দেবার। আসুন দেখে নেয়া যাক কারা হতে পারেন এবারের বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা তারকা।
- জশ বাটলার (ইংল্যান্ড)
বিশ্বকাপের শুরুতে খানিকটা ফর্মহীনতাও ভুগলেও যত সময় গড়িয়েছে তত উজ্জ্বল হয়েছে জস বাটলারের ব্যাট। প্রতি ম্যাচেই অ্যালেক্স হেলসের সাথে জুটি গড়ে বিধ্বংসী সূচনা এনে দিয়েছেন ইংল্যান্ডকে। এখনো পযর্ন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে বাটলারের সংগ্রহ ১৯৯ রান।
সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে রীতিমতো রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছিলেন এই ব্যাটসম্যান, অপরাজিত ছিলেন ৮০ রানে। সেই সুখস্মৃতি নিয়েই ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে নামবেন বাটলার। তাছাড়া পল কলিংউডের পর দ্বিতীয় ইংরেজ অধিনায়ক হিসেবে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ তাঁর সামনে। সবমিলিয়ে বাটলার নিশ্চিতভাবেই চাইবেন ফাইনালে পারফর্ম করে দলকে বিশ্বকাপ জেতাতে।
- মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান)
বিশ্বকাপ শুরুর আগে টি টোয়েন্টিতে আইসিসি র্যাংকিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান ছিলেন পাকিস্তানের ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান। মিডল অর্ডার থেকে টপ অর্ডারে প্রমোশন পাবার পর থেকেই বদলে গেছে তাঁর ক্যারিয়ার। বাবর আজমকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেছেন অপ্রতিরোধ্য এক ওপেনিং জুটি।
টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে খানিকটা নিষ্প্রভ থাকলেও পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই ম্যাচে বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই হেসেছে তাঁর ব্যাট। বিশেষ করে সেমিফাইনালে কিউইদের দেয়া ১৫২ রান তাড়া করতে নেমে ভীষণ চাপের মুখে একপ্রান্ত আগলে রেখে ৫৭ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন তিনি। সেমির ফর্মটা ফাইনালেও ধরে রাখতে চাইবেন রিজওয়ান।
- অ্যালেক্স হেলস (ইংল্যান্ড)
এবারের বিশ্বকাপে খেলারই কথা ছিল না অ্যালেক্স হেলসের। মাঠের বাইরে মারামারি সংক্রান্ত ঝামেলায় জড়িয়ে দলের বাইরে ছিলেন বছর তিনেক ধরেই। ছিলেন না এবারের বিশ্বকাপের দলেও, কিন্তু শেষ মুহূর্তে জনি বেয়ারেস্টোর ইনজুরিতে ভাগ্য খুলে যায় হেলসের। ভাগ্যক্রমে পাওয়া সুযোগটা তিনি লুফে নিয়েছেন দারুণভাবে, এখনো পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে তাঁর সংগ্রহ ২১১ রান।
প্রতি ম্যাচেই পাওয়ার প্লেতে ঝড়ো সূচনা এনে দিয়েছেন দলকে, সহজ করে দিয়েছেন মিডল অর্ডারে দায়িত্ব। সেমিতে ভারতের বিপক্ষে জস বাটলার যখন খানিকটা ধীরে শুরু করছিলেন, তখন অপরপ্রান্তে রান তোলার গতি ঠিক রেখেছিলেন হেলস। তাঁর মারমুখী ব্যাটিংয়ের কোনো জবাব ছিল না ভারতীয় বোলারদের সামনে, অপরাজিত ছিলেন ৮৬ রানে। ফাইনালেও ঝড়ো এক ইনিংস খেলে এবারের বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন হেলস।
- বাবর আজম (পাকিস্তান)
গত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক বাবর আজম এবার শুরুর দিকে ভুগছিলেন রানখরায়। প্রথম তিন ম্যাচের মাঝে দুবারই ফিরতে হয়েছে রানের খাতা খোলার আগেই। পাকিস্তানও প্রথম দুই ম্যাচ হেরে পৌঁছে গিয়েছিল খাদের কিনারায়। এমনকি বাবরের অধিনায়কত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। সেই বাবর ফিরলেন, ফিরলেন রাজার বেশেই।
ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন, অধিনায়ক হিসেবে উজ্জীবিত করে তুললেন পুরো দলকে। ধবংসস্তুপ থেকে ফিনিক্স পাখির ন্যায় পুর্নজাগরণ হলো বাবর এবং পাকিস্তানের। সেমিতে কিউইদের বিপক্ষে ৫৩ রানের ইনিংস খেলে জয়ের ভীতটা গড়ে দিয়েছিলেন তিনিই। ফাইনালেও চাইবেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে বিশ্বকাপ জেতাতে।
- আদিল রশিদ (ইংল্যান্ড)
ইংল্যান্ড মূলত পেস নির্ভর দল। সেই দলে স্পিন আক্রমণে সবচেয়ে বড় ভরসার নাম আদিল রশিদ। মজার ব্যাপার হল, এই আদিল রশিদ আবার পাকিস্তান বংশদ্ভুত। ফলে, নিজের পিতৃভূমির বিপক্ষে নিজেকে আরেকবার প্রমাণের মিশনে মাঠে নামবেন তিনি।
শেষ দুই ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছেন এই লেগ স্পিনার। দু’টি ম্যাচে মাত্র একটা করে উইকেট নিলেও, দুই ম্যাচ মিলে রান গুণেছেন মাত্র ৩৬। ফাইনালেও রান আটকাতে তাঁর ওপর নির্ভর করবে ইংল্যান্ড দল।
- শাদাব খান (পাকিস্তান)
এবারের বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের দৌড়ে সবচেয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন পাকিস্তানের অলরাউন্ডার শাদাব খান। ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও সমান সরব এই তরুণ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাঁচামরার ম্যাচে বিধ্বংসী ৫৩ রানের ইনিংস খেলে দলকে টিকিয়ে রেখেছিলেন বিশ্বকাপে।
সেদিন মাত্র ২০ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে বদলে দিয়েছিলেন ম্যাচের গতিপথ। মাঝের ওভারগুলোতে প্রতিপক্ষের রান আটকে রাখার দায়িত্বেও দারুণ সফল এই লেগস্পিনার। মাত্র ৬.২২ ইকোনমিতে শিকার করেছেন দশ উইকেট। ফাইনালেও তাই শাদাবের দিকে তাকিয়ে থাকবেন পাকিস্তানের সমর্থকরা।