শাদাব খান, পাকিস্তানের হৃদপিণ্ড

পাকিস্তানের বিশ্বকাপ অভিযানে বিশ্বকাপ শুরুর আগে শাদাব খানকে জিজ্ঞাসা করা হল, পাকিস্তান দলকে ১ থেকে ১০ নম্বরের স্কেলে কত দিবেন?  শাদাব খান কোন নম্বর দিলেন না। শুধু স্বল্প ভাষায় বললেন, ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট আলাদা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আলাদা। এটা আসলে বলা কঠিন। 

শাদাব খান দল নিয়ে কোনো নম্বর দেন নি ঠিকই। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে তাঁর পারফর্ম্যান্স সেই স্কেলে রেট করলে সেটা নিশ্চিতভাবেই ৮ তো পেরোবেই। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং- পুরো আসর জুড়ে সব খানেই নিজের দ্যুতি ছড়িয়েছেন। পুরো টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত বল হাতে নিয়েছেন ১০ উইকেট। যা পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে শাদাব খানের লেগস্পিন যে ভালই কাজে দিয়েছে তা তাঁর পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। 

পাকিস্তানের ফাইনাল যাত্রায় শাদাব খানের প্রভাবটা কেমন ছিল তা একটি ম্যাচের দিকে একটু দৃষ্টি দিলেই হয়। সুপার টুয়েলভে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ। সেমির দৌড়ে টিকে থাকতে হলে এ ম্যাচ জিততেই হবে পাকিস্তানকে। তবে এ ম্যাচে আবারও ব্যর্থ হয় বাবর-রিজওয়ান জুটি। ১৪ ওভার পর্যন্ত ৭ রান রেটেই রানের গতি আটকে ছিল।

কিন্তু, শাদাব খান উইকেটে এসেই রান রেটটাকে তিনি এক লাফে তিনি নিয়ে যান ৯-এ। ২২ বলে খেলেন ঝড়ো ৫২ রানের ইনিংস। আর এ আসরের দ্বিতীয় দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির কীর্তিও গড়েন এ ইনিংসেই। ২০ বলে পূরণ করেন নিজের ব্যক্তিগত ফিফটি। আইসিসির টুর্নামেন্টে এটিই ছিল শাদাবের প্রথম ফিফটি। 

শাদাব খানের দায়িত্বটা সেখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে যখন একটি উইকেট খুবই প্রয়োজন, তখনই তিনি আবির্ভূত হলেন। এক ওভারেই তুলে নেন টেম্বা বাভুমা আর মারক্রামের উইকেট। আর ঐ এক ওভারেই ব্যাকফুটে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্য দিয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মাস্ট উইন ম্যাচে জিতে সেমিফাইনালের স্বপ্ন জিইয়ে রাখে পাকিস্তান। 

শাদাব খানের সে ফিফটি যে কোনো ফলুক ছিল না, তা স্বচ্ছ হবে আরেকটি পরিসংখ্যানের মাধ্যমে। ২০২০ সালে থেকে এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১০০০ রান এবং ১০০ উইকেটের কীর্তি গড়েছেন তিন জন। জেসন হোল্ডার, সামিট প্যাটেলের পর এই তালিকায় তৃতীয় জন হলেন শাদাব খান। আবার এদের মধ্যে শাদাব খানই একমাত্র যে ন্যূনতম ১০ বার ৩০ রানের ইনিংস খেলার ক্ষেত্রে ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১৫০ এর উপরে রেখেছেন।  

সেমিফাইনালের ম্যাচে শাদাব খান বল হাতে ছিলেন উইকেটশূন্য। কিন্তু সেমির ম্যাচের তাঁর অবদানটা ছিল ফিল্ডিংয়ে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একটি ক্যাচ কিংবা একটি রান আউট, কতটা গুরুত্ব রাখে তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কিউইদের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম ভরসা ডেভন কনওয়েকে এ ম্যাচে শাদাব খান রান আউট করেছিলেন দুর্দান্ত এক থ্রোর মাধ্যমে।

উইকেটে টিকে গেলে কনওয়ে প্রতিপক্ষের জন্য কতটা বিপদজনক হতে পারেন তা সবারই জানা। তার উপর ততক্ষণে ২১ রান করে উইকেটে প্রায় থিতু হওয়ার দিকেই এগোচ্ছিলেন তিনি। তাই ঐ সময়ে শাদাব খানের করা রান আউটটির গুরুত্ব ছিল অনেক। 

বল হাতে উইকেট তুলে নেওয়ার পাশাপাশি শাদাব খান এবার রান আটকানোর কাজটাও করেছেন দারুণভাবে। পুরো টুর্নামেন্টে তাঁর ইকোনমি ৬.৫৯। যা স্পিনারদের সর্বনিম্ন ইকোনমির দিক দিয়ে পঞ্চম।  

ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- সব বিভাগেই দারুণ পারফর্ম্যান্সের কারণে এ বারের বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটারের যোগ্য দাবিদার শাদাব খান। তবে শাদাব নিজেও একটি মাইলফলকের দোরগোড়ায় এখন। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর উইকেট সংখ্যা ৯৭ টি।

আর তিনটি উইকেট নিলেই ইতিহাসের ৬ষ্ঠ বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে শততম উইকেট শিকারের কীর্তি গড়বেন শাদাব খান। একই সাথে শহীদ আফ্রিদির উইকেট সংখ্যাকেও টপকে যাবেন তিনি। পাকিস্তানের হয়ে শহীদ আফ্রিদিও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে শাদাব খানের সমান ৯৭ টি উইকেট নিয়েছেন।

তবে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স, মাইলফলক ছাপিয়ে একজন ক্রিকেটারের কাছে সবচেয়ে মূখ্য হয়ে থাকে তাঁর দলের সাফল্য। দলগত সাফল্যের উজ্জ্বলতায় ব্যক্তি রেকর্ড আরও আলোকিত হয়ে ওঠে। শাদাব খানেরও মূলমন্ত্র সেটিই। বরাবরই টিমম্যান হিসেবে পরিচিতি থাকা শাদাবও চাইবেন এবারের বিশ্বকাপ শিরোপাটা উঠুক তাদেরই হাতে।

পাঁচ বছর আগেই, ২০১৭  আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিলেন শাদাব খান। যে দেশ থেকে সেবার পাকিস্তান শিরোপা নিয়ে ঘরে ফিরেছিল, এবার সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে তারা। তবে ময়দানটা এবার ভিন্ন। অবশ্য এই মাঠেই ১৯৯২ সালে ইমরান খান, ওয়াসিম আকরামরা ইংলিশদের বিপক্ষে বিশ্বকাপ জিতেছিল। ৩০ বছর পর, সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে এবার চোখ শাদাব খানদের।         

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link