বিশ্বকাপে প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ায় বেলজিয়াম দলের মধ্যে একটা অন্তর্বিবাদ শুরু হয়েছিল। সেটা রূপ নিয়েছিল গৃহদাহতেও। রাজধানী ব্রাসেলসের রাস্তায় সমর্থকদের গাড়ি পোড়ানো, আগুন ধরানোয় এক প্রকার অরাজকতায় বিরাজ করছিল বেলজিয়ামে। এডেন হ্যাজার্ড বোধহয় সেই সব অরাজকতা থেকেই পরিত্রাণ পেতে চেয়েছিলেন। তাই মাত্র ৩১ বছরেই বেলজিয়াম ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দিলেন তিনি। বেলজিয়ামের জার্সি গায়ে আর দেখা যাবে না রিয়াল মাদ্রিদের এ ফুটবলারকে।
২০০৮ সালে অভিষেক হয় হ্যাজার্ডের। সেই সময় থেকে বেলজিয়াম জার্সি গায়ে তিনি ১২৬ টি ম্যাচ খেলেছেন। তাতে গোল করেছেন ৩৩ টি, গোলে সহায়তা করিয়েছেন ৩৬ টিতে। বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের প্রথম সারির খেলোয়াড় ছিলেন এই হ্যাজার্ড।
তবে এ বারের বিশ্বকাপের ব্যর্থতায় বেলজিয়ামের সেই সোনালি প্রজন্মের ফুটবলারদের মধ্যেই শুরু হয়েছিল অন্তর্কোন্দল। বিশ্বকাপ চলাকালীন সেটা বেশ ভয়াবহ রূপই নিয়েছিল বেলজিয়ামের এ দলটার মধ্যে। যাদের নিয়ে পুরো বেলজিয়ামবাসী স্বপ্ন এঁকেছিল, সেই ফুটবলারদের মধ্যেই সম্পর্কের একটা চিড় ধরে। হয়তো এমন পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসতেই অবসরের ঘোষণা দিলেন হ্যাজার্ড।
তবে বেলজিয়াম থেকে অবসরের পিছনে হ্যাজার্ডের আরেকটা যুক্তিও সামনে এসেছে। বয়স ৩১ হলেও, এরই মধ্যে হ্যাজার্ড বেশ ক’বার ইনজুরিতে পড়ে ফুটবল থেকে ছিলেন বাইরে। এমনকি রিয়াল মাদ্রিদের হয়েও মৌসুমের পর মৌসুম কাটিয়েছেন সাইডবেঞ্চে বসে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই চাপ কমাতে এই জাতীয় দলকে বিদায় বলে দিলেন তিনি।
ফুটবল ইতিহাসে এডেন হ্যাজার্ডের সাথে ‘হ্যাজার্ড ফ্যামিলি’ দারুণ এক যোগসূত্র আছে। এডেন হ্যাজার্ডের মা ক্যারিন বেলজিয়ামের প্রথম বিভাগ ফুটবল খেলেছিলেন , আর বাবা থিয়েরি বেলজিয়ান দ্বিতীয় বিভাগ ক্লাব লা লুভিয়েরের হয়ে খেলেছিলেন। মিডফিল্ডার হিসেবে তিনি ২০০৯ পর্যন্ত এ ক্লাবে খেলেছেন। অর্থাৎ ছেলে এডেন হ্যাজার্ডের পেশাদার ফুটবলের শুরুর সময়েও ফুটবল খেলতেন বাবা থিয়েরি হ্যাজার্ড।
নিজেরা ফুটবলার হওয়ায় ক্যারিন আর থিয়েরি হ্যাজার্ড দম্পতি তাদের চার ছেলেকেও বানিয়েছেন ফুটবলার।বড় ছেলে এডেন হ্যাজার্ড ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে খেলছেন, আর বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে খেলেন থরয়ান হ্যাজার্ড। ফুটবলের সাথে যোগ সংযোগ আছে ছোট দুই ভাই কিলিয়ান এবং ইথান হ্যাজাডেরও। বড় ভাই এডেন হ্যাজার্ডের সাথে এক সময় চেলসিতে খেলেছেন কিলিয়ান। এখন তিনি বেলজিয়ান ক্লাব সার্কেল ব্রুজের হয়ে খেলছেন।
ইনজুরি বাদ দিলে এডেন হ্যাজার্ড তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সোনালি সময় কাটিয়েছেন চেলসিতে। এই চেলসির হয়েই তিনি দুইবার প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছেন। এর পাশাপাশি তিনি দুইবার এফ এ কাপ এবং দুইবার ইউরোপাও জিতেছেন। আর চেলসির এই শিরোপা গুলোতে ব্লুজদের প্রাণভোমরা হয়েছিলেন তিনি। তাছাড়া ২০১৮ সালে তিনি বেলজিয়ামের সেরা ফুটবলারও নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই একই বছরে তিনি উয়েফা ইউরোপা লিগের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন। চেলসি জার্সিতে দাপুটে পারফর্ম্যান্সের কারণে এডেন হ্যাজার্ডকে দলে ভিড়িয়েছিল ইউরোপিয়ান আরেক জায়ান্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ।
তবে সেখান থেকেই যেন শেষের শুরু হয় হ্যাজার্ডের। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তাঁর যাত্রাটা ঠিক সেভাবে জমেনি। তবে এর পিছনের ইনজুরি কষাঘাতও ছিল। এই ইনজুরির কারণেই তিনি ব্রাত্য হয়ে যান রিয়াল মাদ্রিদে। মৌসুমের পর মৌসুম তাঁকে কাটাতে সাইডবেঞ্চে বসে। যদিও রয়ে গেছেন সেই ক্লাবেই। তবে সোনালি অতীত তিনি বহু আগেই ফেলে এসেছিলেন। তাতে চেলসির জার্সিতে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব একটুও কমেনি। এখনো তাঁকে ‘প্রিন্স অফ স্টামফোর্ড’ ব্রিজ বলে ডাকা হয়।
বেলজিয়াম থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেও ক্লাব ফুটবলে ঠিকই থাকছেন এডেন হ্যাজার্ড। চেলসির হয়ে হ্যাজার্ডের সেই ছন্দের রেশ তাই এখনো দেখার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তার জন্য লড়াইটা তাঁর নিজের সাথেই করতে হবে। কারণ এডেন হ্যাজার্ডের পরের যাত্রাগুলো হবে আরো অনেক কঠিন। সেই সমস্ত কাঠিন্য পার করেই তাঁকে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই ৩১ বছর বয়সী হ্যাজার্ডের ফুটবল ক্যারিয়ার আরো কয়েকটা বছর এগোবে।