জোগো বোনিতোর এক দুর্দান্ত প্রদর্শন ঘটিয়ে ব্রাজিল হাজির হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। অপরদিকে ক্রোয়েশিয়ার জয়টা ছিল কষ্টসাধ্য। এই দুই দলের মুখোমুখিতে ব্রাজিলের আবারও আধিপত্য বিস্তার করবার কথা থাকলেও ক্রোয়েটরা তা হতে দেয়নি। দুই দলের লড়াইটা হয়েছে সমানে সমান। পেনাল্টি শ্যুট আউটে আবারও জয়ের হাসি হেসেছে ক্রোয়েশিয়া।
২০১৪ সালের জার্মানির বিপক্ষে সেই কলঙ্কিত এক অধ্যায়ের পর ব্রাজিলের সামনে আবারও সুযোগ সেমিফাইনালে যাবার। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া নিজেদের ধীরস্থির যাত্রাটাই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মাঠে নেমেছিল। এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে প্রথম অর্ধটায় ক্রোয়েশিয়া খালি চোখেই এগিয়ে ব্রাজিলের থেকে। কোন প্রকার গোল না করতে পারলেও, ক্রোয়েশিয়াকে বেশ গোছানো লেগেছে একেবারে শুরু থেকে।
কিন্তু ব্রাজিলকে বড্ড বেশি ছন্দছাড়াই ঠেকেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে খেলা সেই নানন্দিক ফুটবলের ছিটেফোঁটার দেখা মেলেনি পুরো ৪৫ মিনিটে। বেশকিছু শট গোল অভিমুখে ধাবিত হলেও, তাতে ফলাফল মেলেনি সেলেসাওদের। মধ্যমাঠের দখলটা নিজেদের কাছেই রেখেছিল মদ্রিচ, কোভাচিচরা। রক্ষণকে আঁটসাঁট রেখে বারবার কাউন্টার অ্যাটাক নিয়ে ব্রাজিলের ডি-বক্সের সামনে হাজির হয়েছিল ক্রোয়েশিয়ানরা। তবে ব্রাজিলের অভিজ্ঞ রক্ষণ কোনরকম গোলের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করতে দেয়নি।
অগ্যতা গোল শূন্য ড্র নিয়েই ড্রেসিং রুমের দিকে ধাবিত হয় দুই দল। দ্বিতীয়ার্ধেও তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি। ম্যাচ নিজেদের আয়ত্বে রেখেছিল পুরো ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ড। তবে ব্রাজিলের গোলবারে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারেনি পেরিসিচরা। তবে আক্রমণ চালাতে থাকে ব্রাজিল। যদিও ক্রোয়েশিয়ান গোলরক্ষক লিভাকোভিচ ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। তিনি ব্রাজিলের সকল আক্রমণ প্রতিহত করেছেন শক্ত হাতে। শেষ অবধি খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
আরও আধা ঘন্টা, শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের অপেক্ষা। তবে অতিরিক্ত সময়ের প্রথম অর্ধের শেষভাগে ব্রাজিলের ত্রাণকর্তা হয়ে হাজির তাদের প্রাণভোমরা নেইমার। অসাধারণ দক্ষতায়, সতীর্থদের সাথে বল দেওয়া নেওয়া করে গোল আদায় করে নেন নেইমার। ম্যাচের ১০৫ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার ডেডলক অবশেষে ভাঙে। চীনের প্রাচীর হয়ে যাওয়া লিভাকোভিচকে রীতিমত বোকা বানিয়ে গোলটি করেন নেইমার।
তবে ম্যাচের চিত্রনাট্যের তখনও অনেকটা বাকি। ম্যাচের ১১৮তম মিনিটে, পাশার দান উল্টে দেন ব্রুনো পেটকোভিচ। ক্রোয়েশিয়ার প্রথম গোল অভিমুখে শট আর তাতেই বাজিমাত। স্কোরলাইন তখন ১-১। আবারও ভাগ্যের হাতে ক্রোয়েশিয়ার সকল হিসেব-নিকেশ। এবারও ক্রোয়েশিয়ার জয়ের নায়ক লিভাকোভিচ। তাঁর দৃঢ়তায় পেনাল্টিতে জয় পায় ক্রোয়েশিয়া। রদ্রিগোর প্রথম শট ঠেকিয়ে দিয়ে ব্রাজিলের জন্যে কাজটা আরও কঠিন করে দেন লিভাকোভিচ। শেষমেশ টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল।