নেইমারের মত দূর্ভাগা ফুটবলার খুবই কমই আছে। আগের দুই বিশ্বকাপের মত এবারের বিশ্বকাপেও ছিল ইনজুরির ছোবল। তবে ইনজুরি থেকে ফিরে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ব্রাজিলকে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জেতাবেন তিনি এমনটাই হয়তো ভেবে রেখেছিলেন। কোয়ার্টারে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে সেই স্বপ্নের ইতি ঘটেছে। এই হার তাই ব্রাজিলিয়ান পোস্টার বয়কে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।
ম্যাচের নায়ক হবার পথে নেইমার ছিলেন ৩ মিনিট দূরত্বে। অতিরিক্ত সময়ে চোখ ধাঁধানো গোল করে ব্রাজিলকে সেমির পথে রেখেছিলেন নেইমার। কিন্তু ম্যাচ শেষে সেই নেইমার ট্র্যাজেডির হিরো। মারকুইনহোসের পেনাল্টি মিসের সাথে সাথে ব্রাজিলের হার নিশ্চিত হতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নেইমার।
খেলার ১০৪ মিনিটে ক্যারিয়ারের ৭৭ তম গোল করে কিংবদন্তি পেলের বাসে বসেন নেইমার। ব্রাজিলও তখন সেমিফাইনালের পথে। কিন্তু ১১৭ মিনিটে ম্যাচের প্রথম অনটার্গেট শটে ক্রোয়েশিয়া গোল করে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারে ব্রাজিল।
ম্যাচের ৪৮ ঘন্টা পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে নেইমার তার অনুভূতির কথা জানান। এই হারকে নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে হার বলে মনে করেন নেইমার, ‘আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছি। এটি এমন একটি পরাজয় যা আমাকে সবচেয়ে বেশি আঘাত দিয়েছে। ম্যাচ শেষ হবার ১০ মিনিট পর্যন্ত আমি প্যারালাইজড অবস্থায় ছিলাম এবং এর পর আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি নিজেকে থামাতে না পেরে। এই আঘাত আমাকে অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে।’
ক্রোয়েশিয়ার সাথে হারের ক্ষত শুকানোর আগেই ব্রাজিল ভক্তদের আরও এক ধাক্কা দেন নেইমার। তিনি জানান, তিনি শতভাগ নিশ্চিত নন যে, তিনি আর ব্রাজিলের জার্সিতে খেলবেন কিনা।” যদিও এরপর পরই হাসপাতালে কোলন ক্যান্সারের সাথে লড়তে ৮২ বছর বয়সী ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলে বার্তা পাঠান নেইমারের উদ্দেশ্যে।
নেইমারে উদ্দেশ্যে পেলে বলেন, ‘তুমি জানো ব্রাজিলকে প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে কোনো সংখ্যা কখনো বড় হতে পারে না। আমার রেকর্ড ৫০ বছর বছর আগে করা। ৫০ বছর ধরে কেউ এই রেকর্ডের কাছেও পৌঁছাতে পারে নি। তুমি পেরেছো। এটা তোমার অর্জনের মহিমাকে আরো সমৃদ্ধ করলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এখন ৮২ বছর, এতটা সময় পার করার পর আমি আশা করি আমি তোমাকে কোনো না কোনোভাবে অনুপ্রাণিত করতে পেরেছি তোমার এতদূর আসার পেছনে। তোমার পথ আরও অনেকটা বাকি। আমাদের অনুপ্রাণিত করতে থাকো।’
ভেঙে পড়া নেইমারের ওপর অগাধ বিশ্বাস ফুটবলের রাজার। নেইমারকে আবারও ব্রাজিলের জার্সিতে দেখতে মুখিয়ে আছেন তিনি। নেইমারকে ক্যারিয়ারের ইতি না টানার অনুরোধ জানিয়ে পেলে বলেন, ‘তোমার গোল উদযাপনের জন্য মুখিয়ে আছি আমি। এর আগের তোমার প্রতিটা গোল যেভাবে আমাকে আনন্দে ভাসিয়েছে সেভাবেই তোমার পরের গোলগুলো উদযাপন করব।’
পেলের এই অনুরোধ নিশ্চয় ফেলতে পারবেন না নেইমার। হয়তো পেলের অনুরোধেই আবারও ব্রাজিলের জার্সিতে মাঠে নামবেন তিনি। কে জানে, ৩৪ বছর বয়সী নেইমার হয়তো ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলতে যাবেন আবারও ব্রাজিলকে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা জেতানোর মিশন নিয়ে।