লক্ষ্যটা খুবই ছোট। কিন্তু মাঠটা মিরপুর বলেই কিনা অনেক কিছুই সম্ভব এখানে। শুরুতেই রাহুলকে ফিরিয়ে সেই ছোট লক্ষ্যটাকে বড় বানাতে থাকেন সাকিব। এরপর মিরাজও সেই মিশনে যোগ দিলে জয়ের স্বপ্ন বুনতে থাকে বাংলাদেশ। একে একে চেতেশ্বর পূজারা, শুভমান গিল আর বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ।
দুর্দান্ত এক স্পেলে আবারো বাংলাদেশের ত্রাতা এই অলরাউন্ডার। শেষ দিনে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ১০০ রান আর বাংলাদেশের ৬ উইকেট।
প্রথম দুইদিনে পড়েছে সমান ১০ টি করে উইকেট। মিরপুরের উইকেট অন্যান্যবারের মত ব্যাটসম্যানদের জন্য ভয়ানক না হয়ে উঠলেও ব্যাটসম্যানদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে ক্রমশই। গতদিনের দুই অপরাজিত ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত আর জাকির হাসান তাদের দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলার প্রতিরোধ বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারেননি। দলীয় ১৩ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অশ্বিন এর বলে লেগ বিফোর এর ফাঁদে পড়ে আউট হন শান্ত।
১ম ইনিংসে বাংলাদেশের টপ স্কোরার মুমিনুলও টেকেননি বেশিক্ষণ। সিরাজকে দারুণ একটি চার হাঁকানোর পরের বলেই উইকেটরক্ষক পান্ত এর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন মোমিনুল। এরপর এই টেস্টে নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে প্রোমোট করা সাকিব ব্যাক্তিগত ১৩ রানে উনাদকাতের শিকার হলে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। তিন উইকেট হারিয়ে দলের রান তখন ৫১। এদিকে মুশফিকুর রহিম চরম অফফর্ম অব্যাহত রেখে অক্ষর প্যাটেলের বলে আউট হলে ভারতের লিড পেড়োনোর আগেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
অন্য প্রান্তে একের পর এক উইকেট পড়তে থাকলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে নিজের দ্বিতীয় টেস্টে দ্বিতীয় পঞ্চাশোর্ধ স্কোর তুলে নেন জাকির হাসান। টেস্ট মেজাজের দারুণ ইনিংসে ফিফটি তুলে নিলেও ৫১ রান করেই সাজঘরের পথ ধরেন জাকির।
এরপর মিরাজও দ্রুত ফিরে গেলে ১১৩ রানে ছয় উইকেটের দল তখন বাংলাদেশ। এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন লিটন আর সোহান। ব্যাট আর গ্লাভস হাতে বাজে সময় পার করতে থাকা সোহান চড়াও হন ভারত বোলারদের ওপর। ২৯ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৩১ রান। দলীয় ১৫৯ রানে সোহান ফিরে যাবার সময় দলের লিড তখন ৭৩।
এরপর তাসকিনকে সাথে নিয়ে দলের লিড এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন বাংলাদেশ সহ অধিনায়ক লিটন। অষ্টম উইকেটে দুজনে যোগ করেন ৬০ রান। লিটনকেও যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন তাসকিন। চা বিরতির পরপরই লিটন আউট হলে ভাঙে এ পার্টনারশিপ। ৭ চারে সাজানো লিটনের অসাধারণ ৭৩ রানের ইনিংস সমাপ্ত হয় সিরাজের দুর্দান্ত ইনসুইং ডেলিভারিতে।
লিটন আউট হবার পর আর বেশিক্ষন টেকেননি বাংলাদেশর লোয়ার অর্ডার। শেষ পর্যন্ত ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন ৯ নাম্বারে নামা তাসকিন। ২৩১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪৫ রানের। এটিই ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ লিড বাংলাদেশের। এর আগে নিজেদের অভিষেক টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ৬২ রানের লিড নিয়েছিলো বুলবুল-দুর্জয়রা।
১৪৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে ভারত। দলীয় মাত্র ৩ রানেই ভারত অধিনায়ক রাহুলকে ফেরান সাকিব। এরপর মেহেদীর বলে পূজারা আর গিল দুইজনেই স্ট্যাপিং হয়ে ফিরে গেলে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। শেষ বিকেলে ৩ স্পিনার দিয়ে ভারতকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। তাইজুলের বলে বেঁচে যান বিরাট কোহলি। কিন্তু এরপরই আবারো মিরাজ ম্যাজিক।
অসাধারণ এক ডেলিভারিতে কোহলিকে ফেরান মিরাজ। দুর্দান্ত ক্যাচে এই উইকেটে অবদান আছে মমিনুলেরও। এরপর নাইট ওয়াচম্যান উনাদকাতকে নিয়ে অক্ষর প্যাটেল বাকি সময় পার করে দিলে ৪ উইকেটে ৪৫ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে ভারত।