ডিবুর মেডেল রক্ষার নতুন প্রহরী

২০১৮ বিশ্বকাপটা দর্শক সারিতে উপভোগ করেছিলেন এমিলিয়ানো ডিবু মার্টিনেজ। আর ঠিক বছর চারেক বাদে খেলেন নিজের প্রথম বিশ্বকাপ। সেই সাথে জিতে নেন বিশ্বসেরা ট্রফি। শুধু সেখানেই ক্ষান্ত হননি এমি। তিনি ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলিতে যুক্ত করেছেন টুর্নামেন্ট সেরা গোলরক্ষকের খেতাবও। কি মধুর এক স্বপ্ন যাত্রা!

১৯৮৬ সালের পর দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আর্জেন্টিনা জিতেছে নিজেদের তৃতীয় শিরোপা। এই গোটা একটা প্রজন্মকে ফুটবলে মত্ত্ব রাখা লিওনেল মেসির ক্যারিয়ার পেয়েছে পূর্ণতা। তবে এই পূর্ণতা এনে দেওয়ার পথে যোগ্য সঙ্গটাই দিয়ে গেছেন এমি মার্টিনেজ। আলবিসেলেস্তাদের গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন তিনি। সেই তিনিই এবার প্রহরী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে এক বিশেষ কুকুরকে।

ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে ফ্রান্সের বিপক্ষে দুর্দান্ত সেভ দিয়েছিলেন এমি মার্টিনেজ। তাছাড়া কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দুইবার বল ঠেকিয়ে দেন এমি। ফাইনালেও সেই ধারা বজায় রেখে তবেই তিনি জিতেছেন ‘গোল্ডেন গ্লাভস’। মেসির সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপটা তিনি রাঙিয়ে রাখলেন- শিরোপা আর নিজের দুরন্ত পারফরমেন্স দিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই মেসি বন্দনা হয়েছে বিস্তর। তবে মেসির প্রশংসার পাশাপাশি প্রশংসা আদায় করে নিয়েছেন ডিবুও।

তবে প্রশংসা ছাপিয়ে নিন্দা, সমালোচনাও সইতে হয়েছে তাঁকে। ফাইনাল শেষে পুরষ্কার বিতরণি অনুষ্ঠানে তাঁর দৃষ্টিকটু আচরণ। এরপর আবার ড্রেসিং রুম ও বাস প্যারেডে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে উপহাস। এসবকিছু মিলিয়ে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ডিবু। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি আনন্দ করেছেন। অবিশ্বাস্য ভাগ্যের সবটুকুই উদযাপন করেছেন।

এবার সেই উদযাপন স্মৃতিগুলোকে পাহারা দিতেই তিনি ক্রয় করেছেন একটি কুকুর। যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিলসের ব্যবহার করা একটি কুকুরকে নিজের পরিবারের সদস্য হিসেবে যুক্ত করেছেন ডিবু মার্টিনেজ। বেলজিয়াম ম্যালিনয়েস জাতের সে কুকুরের জন্য ২০ হাজার পাউন্ড খরচ করেছেন বিশ্বকাপ জয়ী এই গোলরক্ষক। নেভি সিলস থেকে অবসরপ্রাপ্ত এই কুকুরকে মূলত তাঁর পরিবার ও অমূল্য সম্পদ বিশ্বকাপ মেডেল এবং গোল্ডেন গ্লাভস পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্যে কিনেছেন তিনি।

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকটা আর্সেনালের সাইড বেঞ্চে বসে কাটানো এমিলিয়ানো মার্টিনেজ হঠাৎ করেই যেন জিতে নিয়েছেন সবচেয়ে আরাধ্য এক শিরোপা। সে শিরোপার আনন্দের কমতি হবার কথাই নয়। সবাই যখন তাঁকে অবজ্ঞা করেছেন তিনি তখন নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছেন। আর্সেনালের মত দলকে ছেড়ে দেওয়ার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর কঠিন সিদ্ধান্তের সুফল এসে ধরা দিয়েছে তাঁর দস্তানায়। একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন তিনি করবেন সেটাই তো স্বাভাবিক।

অতলে হারিয়ে যাওয়া একজন যখন ছুঁতে পারেন সবচেয়ে বিরল কোন কিছু, তখন তো তাঁর কাছে সে বস্তুটার মূল্য বেড়ে যায় জীবনের সমান। এমির ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে। তাইতো তিনি প্রশিক্ষিত এক কুকুরকে পরিবারের সদস্য হিসেবে যুক্ত করতে কোন কার্পণ্য করেননি। বাড়াবাড়ি ঠেকলেও আবেগের কাছে হার মেনে যায় সব ধরণের যুক্তিতর্ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link