লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় ফুটবল খেলা ধর্মের পর আরেকটি ধর্ম। দেশটির প্রতিটি জায়গায় ছড়িয়ে আছে ফুটবল জ্বর। এমন একটি দেশ যদি ৩৬ বছরের অপেক্ষা শেষে ফিফা বিশ্বকাপ জিতে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ভক্ত-সমর্থকদের উন্মাদনা ধরে রাখা যায় না।
তাই তো কাতার বিশ্বকাপ শেষে লিওনেল মেসি ট্রফি উঁচিয়ে ধরার পর থেকেই অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে আছে আর্জেন্টাইনরা। ব্যক্তিগত সব দুঃখ কষ্ট ভুলে তাঁরা মেতে উঠেছে উচ্ছ্বাসে। সবমিলিয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় দেশটির জন্য উৎসবের উপলক্ষে এনে দিয়েছে।
অবশ্য এবার বিশ্বকাপ নিয়ে সমর্থকদের বাড়তি আবেগের প্রতিফলন ঘটেছে অন্য ক্ষেত্রে। সান্তা ফে প্রদেশের সিভিল রেজিস্ট্রি অনুসারে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জন্ম নেওয়া প্রতি ৭০ জন শিশুর মধ্যে একটির নাম লিওনেল বা লিওনেলা রাখা হয়েছে। মূলত আলবিসেলেস্তা অধিনায়ক লিওনেল মেসির নামের অনুপ্রেরণায় এভাবে নামকরণ করা হয়েছে সন্তানদের।
বিশ্বকাপের আগে প্রতি মাসে গড়ে ছয়টি শিশুর রাখা হতো লিওনেল জাতীয় নাম। অথচ বর্তমানে ৩০ দিনে ৪৯জন শিশুর নামকরণ লিওনেল মেসির নামে করা হয়। অর্থাৎ নবজাতকের জন্য এমন নাম পছন্দ করার হার ৭০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধু লিওনেল মেসিই নয়, আর্জেন্টিনা দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দের নাম নিয়েও শুরু হয়েছে এমন কান্ড। জুলিয়ান আলভারেজ, এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, এঞ্জো ফার্নান্দেজদের নাম থেকেই নিজের সন্তানের নাম বেছে নিচ্ছেন আর্জেন্টাইন দম্পতিরা। যদিও লিওনেল মেসির তুলনায় সেটি তুলনামূলক কম।
নাম নিয়ে হিড়িক পড়ার ব্যাপারে সান্তা ফে প্রদেশের সিভিল রেজিস্ট্রির ডিরেক্টর স্থানীয় একটি রেডিও শো-তে কথা বলেছেন। তিনি জানান, “গত সপ্তাহে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অন্যান্য সদস্যদের নামের সাথে মিলিয়ে অনেক শিশু নিবন্ধিত হয়েছে। যেমন জুলিয়ান বা এমিলিয়ানো ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বেশি আবেদন করা নাম হল লিওনেল আর লিওনেলা।”
পৃথিবীতে ফুটবল শুধুই একটি খেলা নয়; এতে মিশে আছে কত শত আবেগ। ফুটবলাররাও তাই খেলোয়াড় পরিচয় চাপিয়ে হয়ে উঠেছেন কারো আদর্শ, কারো অনুপ্রেরণাদাতা। তবে এত উচ্চ হারে খেলোয়াড়দের নামে শিশুর নামকরণ করার ঘটনা ঘটে কালেভদ্রে। এই যেমন ১৯৮০ সালের দিকে ব্রাজিলিয়ান তারকা জিকোর খেলায় মুগ্ধ হয়ে অনেকেই সন্তানের নাম রেখেছিলেন ‘জিকো’।
আবার খোদ ফুটবলাররাও অনেকসময় নিজের সন্তানের নাম রাখেন কিংবদন্তিদের সাথে মিলিয়ে। এই যেমন জিনেদিন জিদান তাঁর বড় সন্তান এনজো ফার্নান্দেজের নাম রেখেছেন সাবেক উরুগুইয়ান ফুটবলার এনজো ফ্রান্সেসকোলির নামে। আবার ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ফেলিপে মেলোর ছেলের নাম গ্যারি লিনেকারের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে।
তবে এসব থেকে আলাদা আর্জেন্টিনার বর্তমান অবস্থা। বিশ্বকাপ জেতার আনন্দটাই মূলত প্রকাশ পাচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নামকরণের ক্ষেত্রে। ১৯৮৬ সালের পর যে স্বপ্ন শুধু দূরের তারা হয়ে উঠছিল, সেটাকেই বাস্তবে নিয়ে এসেছেন লিওনেল মেসি, এমিলিয়ানো মার্টিনেজরা। তাই তো ঘরে ঘরে এখন লিওনেল আর এমিলিয়ানোদের মেলা বসেছে।
আজ থেকে কয়েক বছর পর স্কুলে কিংবা কয়েক দশক পর বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে হয়তো একত্রিত হবে অনেকগুলো লিওনেল, একসাথে দেখা যাবে এনজো, জুলিয়ানদের। তখন তাদেরই মনে পড়বে নিজেদের নামের ইতিহাস; স্মৃতিতে আসবে ২০২২ বিশ্বকাপ। ঠিক সেই মুহূর্তে হৃদয়ে ভেসে উঠবে লিওনেল মেসির ছবি, আর্জেন্টিনার বর্তমান দলটির ছবি।