লাল বাতির সংকেতে থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বপ্রথম আউট হয়েছিলেন কোন ব্যাটার? – ধরুন এমন একটা প্রশ্নই আপনাকে ছুঁড়ে দেওয়া হলো। ক্রিকেটের এমন সূক্ষ্ম তথ্য আপনার অজানা থাকতেই পারে। গুগল করে সেটা চাইলেই খুঁজে নিতে পারেন। মিনিট কয়েক সময় লাগবে।
যাই হোক, প্রচলিত উত্তর কিংবা গুগল আপনাকে উত্তর হিসেবে কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের নাম দেখাতে পারে। উত্তরটা সঠিকও। কিন্তু উপরে করা প্রশ্নটার উত্তর হিসেবে ধরলে আবার পুরোটাই ভুল। লাল বাতির সংকেতে থার্ড আম্পায়ার দ্বারা প্রথম আউট হয়েছিলেন পাকিস্তানের শহীদ সাঈদ।
তবে থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে প্রথম আউট হওয়া ব্যাটার শচীন টেন্ডুলকার- এ তথ্যে কিন্তু কোনো ভুল নেই। কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলেন? আসুন সেটাই দূর করা যাক।
থার্ড আম্পায়ার- এ টার্মটার প্রথম প্রচলন শুরু হয় ১৯৯২ সালে। ধারণাটি প্রবর্তন করেছিলেন শ্রীলঙ্কান একজন সাবেক ঘরোয়া ক্রিকেটার। মাহিন্দ উইজেসিংহে নামের এক ভদ্রলোক সে সে সময়ে ক্রিকেট নিয়ে বেশ গবেষণা করতেন। আর সেই গবেষণার সূত্র ধরেই তিনি ক্রিকেটে থার্ড আম্পায়ারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
আইসিসি’র কাছে সেটি নিয়ে প্রস্তাবও উত্থাপন করেন। উইজেসিংহের সেই প্রস্তাবও পাশ হতে বেশি সময় লাগেনি। ১৯৯২ সালের নভেম্বরেই ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকা মধ্যকার টেস্ট সিরিজ দিয়ে ‘থার্ড আম্পায়ার’ যুগে প্রবেশ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। সেই থেকে থার্ড আম্পায়ার ধারণার পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব বিবেচনা করা হয় মাহিন্দ উইজেসিংহেকে।
তো দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারতের মধ্যে হওয়া সেই সিরিজের প্রথম ম্যাচেই রান আউটের কবলে পড়েন ১১ রান করে ব্যাট করতে শচীন টেন্ডুলকার। নিয়ম অনুযায়ী, সেই রান আউট নিশ্চিত হওয়ার জন্য দ্বারস্থ হতে হয় থার্ড আম্পায়ারের কাছে। থার্ড আম্পায়ার লিবেনবার্গ টেলিভিশনে রিপ্লে দেখে শচীনকে সবুজ বাতি দেখিয়ে আউটের সংকেত দেন। আউটের জন্য সবুজ বাতি? এমনও হয় নাকি? এখানেই মূলত টুইস্ট।
ছোটবেলা থেকেই আমরা জেনে এসেছি যে, সবুজ বাতি মানে নট আউট আর লাল বাতি অর্থ হলো আউট। কিন্তু থার্ড আম্পায়ারের এই ইতিহাস তো সেই নব্বই দশকের শুরুর দিকের। শুরুর দিকে সবুজ বাতি দিয়েই মূলত আউটের সংকেত দেওয়া হতো। পরে এ বাতির সংকেত বদলে যায়।
আউটের জন্য দেওয়া হয় লালবাতি আর নট আউটের জন্য জ্বালানো হয় সবুজ বাতি। যদিও এখনকার সময়ে এসে বাতির ব্যবহার দেখা যায় না বললেই চলে। বেশিরভাগ সময়ে থার্ড আম্পায়াররা জায়ান্ট স্ক্রিনেই তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারতের মধ্যে হওয়া সেই টেস্ট সিরিজের পর ৭ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও থার্ড আম্পায়ারের সংযুক্তি দেখা গিয়েছিল। শচীন টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে আউট হয়েছিলেন। আর ওয়ানডে ক্রিকেটে এই ইতিহাস বিবেচনায় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটার কেপলার ওয়েসেলস প্রথম থার্ড আম্পায়ারারে সিদ্ধান্তে আউট হয়েছিলেন। তবে দুজনই সবুজ বাতির সংকেতে আউট হয়েছিলেন।
লাল বাতির সংকেতে প্রথম আউট হয়েছিলেন পাকিস্তানের শহীদ সাঈদ। সেই ১৯৯২ সালেরই ২৮ ডিসেম্বরে নেপিয়ারে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল নিউজিল্যান্ড আর পাকিস্তান। তো সেই ম্যাচে ব্যক্তিগত ১৪ রানে রান আউটের কবলে পড়েন লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংয়ে নামা শহীদ সাঈদ। সে ম্যাচে থার্ড আম্পায়ার ছিলেন স্টিভ ডুন।
সাইদের সেই রান আউটের রিপ্লে দেখে থার্ড আম্পায়ার ডুন তাঁকে আউটের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু তিনি সেই সিদ্ধান্তটি জানিয়েছিলেন লাল বাতি জ্বালিয়ে। আর সেই মুহূর্তেই ক্রিকেট ইতিহাসে লাল বাতির সংকেতে থার্ড আম্পায়ার দ্বারা প্রথম আউট হওয়া ক্রিকেটার বনে যান পাকিস্তানের শহীদ সাঈদ।
পাকিস্তানের সমৃদ্ধময় ক্রিকেট ইতিহাসে শহীদ সাঈদ নামটা বেশ অচেনা। ক্যারিয়ারে মাত্র ১০ টি ওয়ানডে আর ১ টি টেস্ট খেলা এ ক্রিকেটার অবশ্য মনে রাখার মতো তেমন কিছু করেননি।
তবে, তিনি স্মরণীয় তাঁর সেই একমাত্র টেস্ট আর এই রান আউটের কারণে। যে ম্যাচ দিয়ে তাঁর টেস্ট অভিষেক হয়েছিল সেই একই ম্যাচ দিয়েই টেস্ট ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন ক্রিকেট ইতিহাসের দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার। এদের একজন শচীন টেন্ডুলকার। আর অন্যজন হলেন ওয়াকার ইউনুস।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শহীদ সাঈদ নিজের খুব একটা বিচরণ ঘটাতে পারেননি ঠিকই। তবে ১৯৮৯ সালে নেহরু কাপ জেতা পাকিস্তান দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। এই মুহূর্তে পাকিস্তানে সাবেক এ ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের একটি রেল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। কর্মসূত্রে, তিনি এখন সপরিবারে ইংল্যান্ডেই থাকেন।