ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জৌলুসে ক্রমেই রং হারাচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। জাতীয় দলের ম্যাচের বদলে ক্রিকেটাররা এখন ফ্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলতেই বেশি আগ্রহী। আইসিসি এবং ক্রিকেট বোর্ডগুলোও মেনে নিয়েছে সেটা, আইপিএলের সময় তো রাখা হয় না আইসিসি এফটিপির ম্যাচও।
এবারে ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের ম্যাচগুলোতেও দেখা যাবে একই দৃশ্য। ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট, ইনজুরি এবং টানা খেলার ধকল সামলাতে অভিজ্ঞদের পাশাপাশি প্রতিভাবান নতুন মুখদের নিয়ে দল সাজাচ্ছে ইংল্যান্ড।
তিনটি করে ওয়ানডে এবং টি টোয়েন্টি খেলতে ইংল্যান্ডের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল ২০২১ সালের অক্টোবরে। কিন্তু টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কারণে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড সিরিজ পিছিয়ে আনার ব্যাপার একমত হয়।
টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে জাতীয় দলে মনে রাখার মতো প্রত্যাবর্তন করেছেন ওপেনার অ্যালেক্স হেলস। তবে বাংলাদেশ সফরে আসার বদলে তিনি ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের হয়ে পিএসএলে খেলতেই বেশি ইচ্ছুক। কারণ হিসেবে হেলস জানিয়েছেন জাতীয় দল থেকে বাইরে থাকার সময়টাতে দলটি তাঁর পাশে ছিল।
হেলস জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার নন বিধায় বোর্ডও তাঁকে খেলতে বাধ্য করতে পারবে না। এছাড়া স্যাম বিলিংস, লিয়াম ডসন এবং জেমস ভিন্স জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ না হলেও আসা যাওয়ার মাঝেই ছিলেন। তাঁরাও জাতীয় দলের বদলে বেছে নিয়েছেন ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকেই। অন্যদিকে দুই পেসার রিচার্ড গ্লেসন এবং টাইমাল মিলস কেবল টি টোয়েন্টি সিরিজেই মাঠে নামবেন।
এছাড়া নিউজিল্যান্ডের সাথে ইংল্যান্ডের টেস্ট সিরিজ শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। এর তিন দিন বাদেই বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নামতে হবে থ্রি লায়ন্সদের। ফলে হ্যারি ব্রুক, বেন স্টোকস, ওলি স্টোন, জো রুটদের মতো নিয়মিত মুখরাও খেলবেন না। অন্যদিকে উদীয়মান তারকা উইল জ্যাকস নিউজিল্যান্ড সফর শেষেই উড়াল দেবেন পিএসএলের উদ্দেশ্যে। ফলে ওয়ানডেতে অভিষেকের অপেক্ষাটা দীর্ঘায়িত হচ্ছে এই তরুণের।
এছাড়া ইনজুরির কারণে সিরিজ মিস করবেন জনি বেয়ারস্টো এবং লিয়াম লিভিংস্টোন। তবে পাকিস্তান সফরে বিশ্রামে থাকা পেসার মার্ক উড বাংলাদেশ সফর দিয়েই ফিরবেন জাতীয় দলে।
তবে জাতীয় দলের বদলে ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকে বেছে নেয়া নিশ্চিতভাবেই অশনি সংকেত ইংল্যান্ড ক্রিকেটের জন্য। তবে ইসিবির ডিরেক্টর রব কি এবং পারফরম্যান্স ডিরেক্টর মো বোবাট মনে করেন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কন্ডিশনে খেলে নিজেদের পারফরম্যান্সে উন্নতি আনতে পারছেন ইংলিশ ক্রিকেটাররা যা জাতীয় দলের জন্য উপকারী।
উদাহরণস্বরূপ প্রায় দুই বছর মাঠে রবাইরে থাকার পর জোফরা আর্চার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরছেন দক্ষিণ আফ্রিকার টি টোয়েন্টি লিগ দিয়েই। এছাড়া কেন্দ্রীয় চুক্তিতে না থাকার কারণে হেলস, বিলিংস, ডসনদের জাতীয় দলে খেলার জন্য বাধ্য করতে পারছে না ইসিবি। তাই তাঁরা চাইছে সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতিটা এড়াতে।
নির্বাচকরা তাই পুরোটা ছেড়ে দিয়েছেন ক্রিকেটারদের উপর। তবে জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটারদের না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় দল। এই বছরের শেষভাগে ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ।
অথচ এখনো দলের সেরা কম্বিবেশন গুছিয়ে উঠতে পারেনি বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই হারতে হয়েছে, সর্বশেষ দশ ম্যাচে জয় মোটে তিনটিতে। বাংলাদেশ সফর তাই ইংল্যান্ডের জন্য হতে পারতো প্রস্তুতি নেবার আদর্শ সুযোগ।
গেল বছরের অক্টোবরে পাঁচ অনভিষিক্ত ক্রিকেটারকে নিয়ে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। বাঙ্গালাদেশ সফরেও এমনটাই ঘটার সম্ভাবনা বেশি। নির্বাচক লুক রাইটের সামনে তাই চ্যালেঞ্জ তরুণ এবং অভিজ্ঞের মিশেলে ভারসাম্যপূরণ এক দল সাজানোর।